ফুওয়াং ও এমারেল্ডের দৌড় থামছে না।
Published : 12 Jul 2023, 03:39 PM
এক মাস পর লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছুঁয়ে ফেলার পরদিনের হোঁচট কাটিয়ে গতি ফিরেছে পুঁজিবাজার।
সাড়ে চার ঘণ্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সাড়ে আটশ কোটি টাকার বেশি শেয়ার কেনাবেচা করেছেন বিনিয়োগকারীরা। দরপতন আর দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি হলেও সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮ পয়েন্ট।
ঈদের ছুটি শেষে টানা ছয় কর্মদিবস বেড়ে গত সোমবার লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে সেদিন ঢালাও দরপতন বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে।
মঙ্গলবার ঢালাও পতন থামলেও লেনদেন কমে যায় ৪০ শতাংশ। সেদিন হাতবদল হয় ৬৪৫ কোটি টাকার কিছু বেশি।
সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবসে ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশে রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও পুঁজিবাজারে শেয়ারের ক্রয়চাপ ছিল বেশি।
প্রথম আধা ঘণ্টাতেই সূচক বেড়ে যায় ১৭ পয়েন্ট। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ওই পর্যায়ে থেকেই হচ্ছিল লেনদেন। তবে শেষ দুই ঘণ্টায় সেখান থেকে কিছুটা কমে যায়।
তারপরও সোমবার ১৩ পয়েন্ট পতনের ধাক্কা কাটিয়ে মঙ্গলবার ২ পয়েন্ট এবং তার পরদিন আরও বেশি বাড়ায় স্বস্তিতে বিনিয়োগকারীরা।
আগের দুই দিনের ধারাবাহিকতায় লেনদেনে আবার সেরা খাদ্য খাত। এই খাতে দরপতনের চেয়ে দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির সংখ্যাই ছিল বেশি। আবারও নেতৃত্বে মিনোরি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুই কোম্পানি ফুওয়াং ফুডস ও এমারেল্ড অয়েল।
ঈদের পর লাফ দেওয়া বস্ত্র খাত ধীরে ধীরে আগ্রহ হারাচ্ছে, কমছে লেনদেন। টানা কয়েক সপ্তাহের মন্দাভাব কাটিয়ে বীমা খাতে আগ্রহ ফের বাড়ছে। দুই দিনের ব্যবধানে চতুর্থ অবস্থান থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। তৃতীয় অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। বস্ত্র নেমেছে চতুর্থে।
দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে বিবিধ এবং ওথ্য প্রযুক্তি খাতেও দিন ভালো গেছে। ব্যাংক খাত ‘ঘুমিয়ে’ থাকলেও গত বছর লভ্যাংশ না দেওয়া রূপালী ব্যাংকের শেয়ারদর আরও বেড়েছে।
সব মিলিয়ে বেড়েছে ৯২টি কোম্পানির শেয়ারদর, কমেছে ৯১টির, ১৮৭টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে। সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে ৩৭০টি কোম্পানির আর ক্রেতা ছিল না ১৯টি কোম্পানির।
ফুওয়াং ও এমারেল্ডে দৌড় থামছে না
মার্চের শেষেও ৩০ টাকায় ক্রেতা খুঁজে না পাওয়া এমারেল্ড অয়েলের দর আরও বেড়ে হয়েছে ১৮২ টাকা ৫০ পয়সা। দিনের শুরুতে ১৬৭ টাকায় নেমে গেলেও শেষভাগে সেখান থেকে লাফ দিয়ে শেষ করে লেনদেন।
টানা নয় মাস ক্রেতা খুঁজে না পাওয়া ফুওয়াং ফুডস গত ৩ জুলাই ফ্লোর ভেঙে ৮ কর্মদিবসে ২৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে উঠে গেল ৩৯ টাকায়। দিনের এক পর্যায়ে দর ৪১ টাকা উঠে গিয়েছিল।
এই দুটি কোম্পানির পর্ষদেই মিনোরি বাংলাদেশ বসেছে। এ কোম্পানি এমারেল্ড অয়েলকে পাঁচ বছর পর উৎপাদনে ফিরিয়েছে গত বছর। আর গত বছরের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ২ শতাংশ লভ্যাংশও ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় চার মাসেরও কম সময়ে শেয়ারদর ছয় গুণেরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৪ সালে তালিকাভুক্তির পর যখন বেশ ভালো মুনাফা করে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়ে আসছিল, সে সময়ও কোম্পানির শেয়ারদর এতটা বাড়েনি।
গত এক দশকেও ফুয়াং ফুডসের শেয়ারের এত দর দেখেনি পুঁজিবাজার। দাম যত বাড়ছে শেয়ারের ক্রেতাও তত বাড়ছে।
সব মিলিয়ে খাদ্য খাতের ২১টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ১৩টির দর, কমেছে পাঁচটির, আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে তিনটি কোম্পানি।
এই খাতে হাতবদল হয়েছে ১৩৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের প্রায় ১৮ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা হাতবদল হয়েছে বীমা খাতে। এর মধ্যে ৯০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে জীবন বীমায়। সাধারণ বীমায় লেনদেন ছিল ৩৯ কোটি ৯০ লাখ টাকায়।
মোট লেনদেনের ১৭ শতাংশেরও বেশি ছিল এই খাতে। দুই দিন আগেও লেনদেনের হিস্যায় এই খাতের অবস্থান ছিল চতুর্থতে। মোট লেনদেনের ১০ শতাংশের কম ছিল এই খাতে।
জীবন বীমার ১৫ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে দুটির, কমেছে ৯টির, তিনটি কোম্পানি ছিল আগের দিনের দরে।
সাধারণ বীমার ৪২ কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ১৪টির দর, কমেছে ১৭টির, ১০টির দর ছিল আগের দিনের সমান। একটির ক্রেতা ছিল না।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৭৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা, চতুর্থ স্থানে থাকা বস্ত্র খাতে হাতবদল হয়েছে ৬৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
৬৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা লেনদেন নিয়ে পঞ্চম স্থানে ছিল প্রকৌশল খাত। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে লেনদেন হয়েছে ৫০ কোটি টাকার কিছু বেশি।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে মিশ্র প্রবণতা
সবচেয়ে বেশি ৯.৯১ শতাংশ দর বেড়েছে মাসের পর মাস ক্রেতা খুঁজে না পাওয়া ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের। লভ্যাংশ ঘোষণা করেও বিতরণ না করা, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করার পরও শেয়ারদর এই লাভ দিল।
দর বৃদ্ধির সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়েছে রূপালী ব্যাংক, জনতা ইন্স্যুরেন্সম ওরিয়ন ইনফিউশন, এপেক্স ফুডসেরও।
সিএনএ টেস্টটাইলস, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ফাইন ফুডস, এডিএন টেলিকম, ও মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজও ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকা।
এগুলোর দর ৫.৪৭ শতাংশ থেকে ৮.১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
পতনের শীর্ষে যারা
সবচেয়ে বেশি ৮.৩৩ শতাংশ দর হারিয়েছে অলিম্পিক একসেসোরিজ। লোকসানি কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে লাফাচ্ছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে।
ইয়াকিন পলিমার, ফুওয়াং সিরামিকস, প্রগ্রেসেফ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৪ শতাংশের বেশি, জেনারেশন নেক্সট, প্রাইম লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, লুবরেফ ও সোনালী লাইফের দর কমেছে ৩ শতাংশের বেশি।