দুর্বল মৌলভিত্তির এই কোম্পানির আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাবের সঙ্গে এর শেয়ারদর বেমানান।
Published : 15 Sep 2024, 09:08 PM
লোকসানি কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধিতে কোনো কারসজি ছিল কিনা তা নিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক ফারহানা ফারুকী জানিয়েছেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর চিফ রেগুলেটর অফিসার (সিআরও) কে তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, “সাম্প্রতিক সময়ে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার দর বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক।”
চিঠিতে আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে শেয়ার লেনদেনে কোনো ধরনের ‘ইনসাইডার ট্রেডিং’, ‘কারসাজি’ বা অন্য কোনো ধরনের ‘অনিয়ম’ হয়েছে কি না, তা খুঁজে বের করতে বলা হয়।
তদন্ত কমিটিকে শেয়ারদর বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কোম্পানির শেয়ার বিভাগের কর্মকর্তা ও পরিপালন কর্মকর্তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তাও দেখতে বলা হয়েছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বিবিধ খাতের কোম্পানিটি পলিপ্রপেনাইল ওভেন ব্যাগ, চিনির বস্তাসহ পোশাক খাতের জন্য বড় আকারের ব্যাগ তৈরি করে থাকে।
দুর্বল মৌলভিত্তির এই কোম্পানির আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাবের সঙ্গে এর শেয়ারদর বেমানান।
২০২৩ সালের শুরু থেকে শেয়ারদর ৯ থেকে ১০ টাকায় ঘুরাফেরা করত। এপ্রিলের শেষ থেকে শুরু হয় অস্বাভাবিক উত্থান। এক পর্যায়ে শেয়ারদর ২৩৯ টাকা ৯০ পয়সা ছুঁয়ে ফেলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে।
এই উত্থানের সময় শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আছে কিনা, তা জানতে চেয় কোম্পানিকে একাধিকবার চিঠি দেয় ডিএসই। প্রতিবারই কোম্পানি জানায়, এমন কোনো তথ্য নেই।
ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দর সংশোধন শুরু হলে অগাস্টের তৃতীয় সপ্তাহে দর ৭৮ টাকায় নামে। এরপর আবার শুরু হয় উত্থান। তদন্তের নির্দেশ আসার দিন দর স্থির হয়েছে ১৭৬ টাকা ৫০ পয়সায়।
শেয়ারদরে উত্থান হলেও কোম্পানির ব্যবসা বাড়েনি, আর্থিক উন্নতি হয়নি, নতুন ব্যবসায়িক কোনো পরিকল্পনাও ঘোষণা হয়নি। টানা চার অর্থবছর লোকসান দিয়ে আসা কোম্পানিটি গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের প্রতিটিতেই লোকসান নিয়েছে, যদিও গুঞ্জন ছিল বড় মুনাফার মুখ দেখবে তারা। চতুর্থ প্রান্তিক, তথা পূর্ণাঙ্গ আর্থিক প্রতিবেদন এখনও ঘোষণা হয়নি।
২০১৪ সালে ২ কোটি শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা তোলে খান ব্রাদার্স। এতে তাদের পরিশোধিত মূলধন দাঁড়ায় ৬৩ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। টানা চার বছর বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার পর পরিশোধিত মূলধন দাঁড়ায় ৯৮ কোটি টাকা।
এরপর ২০১৮, ২০২০ ও ২০২২ সালে ২ শতাংশ করে অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ২০ পয়সা করে লভ্যাংশ দেওয়া হয় বিনিয়োগকারীদের।
সবশেষ ২০১৯ সালে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ২৫ পয়সা মুনাফা দেখাতে পেরেছিল। এরপর প্রতি বছরই তারা লোকসান দিয়ে আসছে। গত মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় প্রান্তিক শেষেও শেয়ারপ্রতি ৫ পয়সা লোকসানের তথ্য দিয়েছে তারা।
কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ারদর এক সম্পদমূল্যের ১৪ গুণেরও বেশি। গত অর্থবছর শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দেখানো হয়েছে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা।