রমজানের শুরুতে পুঁজিবাজারে সাধারণত চাঙাভাব থাকলেও এবার পরিস্থিতি উল্টো। টানা দুই কর্মদিবসে দরপতনে সূচকের অবস্থান এক মাসের সর্বনিম্নে নেমেছে।
লেনদেনও এক দিন পরেই নেমেছে তিনশ কোটি টাকার ঘরে। গত এক মাসে এর চেয়ে কম লেনদেন দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দর বেড়েছে ২৮টি কোম্পানির, কমেছে ৫৬টির। আগের দিনের দরে ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হয়েছে ২০১টি কোম্পানির শেয়ার।
এই এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩৯২টি। এর মধ্যে দুটির লেনদেন স্থগিত, একটির লেনদেন গত এক যুগেও দেখা যায়নি। বাকি ১০৪টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।
হাতবদল হওয়া বাকি ২৮৫টি কোম্পানির মধ্যেও বেশিরভাগের ক্রেতা ছিল না। অল্প কিছু শেয়ার হাতবদল হয়েছে দেড়শর বেশি কোম্পানির।
সব মিলিয়ে এক লাখ টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে ১৫৬টি কোম্পানির। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকার বেশি হাতবদল হয়েছে ১০২টি কোম্পানিতে। আর এক কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে ৪২টিতে।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৯৩ পয়েন্টে, যা গত ২৬ ফেব্রুয়ারির পর সর্বনিম্ন। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ১৮২ পয়েন্টে।
অথচ মার্চ মাসে ভালো কিছুর অপেক্ষায় ছিল বিনিয়োগকারীরা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে ব্রোকারেজ হাউজ ট্রাস্ট রিজিওনাল ইকুইটি লিমিটেডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, “মার্চ থেকে মে জুনের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ডিভিডেন্ড চলে আসবে। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের হাজার হাজার কোটি টাকার সক্ষমতা বেড়ে যাবে। ঠিক কত হাজার কোটি টাকা বাড়বে এর সংখ্যাটা না বলতে পারলেও এটা অনেক বড় হবে। মার্চে অনেক সুখবর আসা শুরু হবে।”
এরপর ৫ থেকে ৯ মার্চ বাজারে তারল্য বাড়ে, বাড়ে শেয়ারদর। আর শেয়ারদর বাড়তে থাকলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রবণতাও দেখা দেয়। ওই সপ্তাহের চার কর্মদিবসে গড় লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় অনেকটা বেড়ে ছাড়ায় সাড়ে শয় শ কোটি টাকা। সূচক বাড়ে ৪৬ পয়েন্ট।
কিন্তু এই ‘শুভ ইঙ্গিত’ পরের সপ্তাহেই মিইয়ে যায়। ওই সপ্তাহে গড় লেনদেন নেমে আসে ৫০৮ কোটি টাকায় আর সূচক কমে ৩৯ পয়েন্ট। তৃতীয় সপ্তাহে এসে আরও কমে লেনদেন। বেড়ে যাওয়া শেয়ারদরগুলো ফের নেমে আসে ফ্লোর প্রাইসে। নতুন সপ্তাহে তা আরও নিম্নমুখী।
গেত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন তিনশ কোটি টাকার নিচে নেমে গেলেও চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস সোমবার তা ফের তিনশ কোটি টাকা ছাড়ায়। তবে মঙ্গলবার সেটি আবার নেমেছে ২৭২ কোটি ৫ লাখ ৫১ হাজার টাকায়।
সূচকের মত লেনদেনও এক মাসের সর্বনিম্ন। এরচেয়ে কম লেনদেন হয়েছিল গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। সেদিন হাতবদল হয় ২৬১ কোটি ৭৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
লেনদেন মূলত লোকসানি ও দুর্বল কোম্পানিতে
নিম্নমুখি পুঁজিবাজারে দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় আবার লোকসানি ও দুর্বল কোম্পানির প্রাধান্য দেখা গেল। সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ দর বৃদ্ধি পাওয়া ইনটেন অনলাইন এবং ৯.৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লোকসানি। কিন্তু মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই দর বাড়ছে দুই সপ্তাহ ধরে।
৪.৭৯ শতাংশ দর বেড়ে পঞ্চম স্থানে থাকা ওয়াইমেক্স ইলেকট্রোডও অর্ধবার্ষিকে লোকসান দিয়েছে। গত অর্থবছরে কিছুটা মুনাফা করলেও লভ্যাংশ দেয়নি।
৬.৮৪ শতাংশ দর বেড়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ন্যাশনাল ফিডমিল, ৫.৭৩ শতাংশ বেড়ে চতুর্থ স্থানে থাকা বিডিঅটোকার, ৩.৬২ শতাংশ দর বেড়ে সপ্তম স্থানে থাকা প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২.৯২ শতাংশ দর বেড়ে অষ্টম স্থানে থাকা বঙ্গজের মুনাফা ও লভ্যাংশের ইতিহাসও খুব একটা ভালো না।
শীর্ষ দশে থাকা বাকি কোম্পানিগলোর মধ্যে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের দর ৩.৯৪ শতাংশ, বাটা শুর দর ২.৩২ শতাংশ এবং রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের দর ২.২৫ শতাংশ বেড়েছে।
শীর্ষ দশের বাইরে কেবল চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে। তিনটি কোম্পানির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।
দরপতনের শীর্ষেও দেখা গেছে দুর্বল কোম্পানির প্রাধান্য। এর মধ্যে কিছু কোম্পানির দর গত কয়েকদিনে বেড়ে গিয়েছিল। এখন আবার পড়তির দিকে।
সবচেয়ে বেশি ৬.৭৬ শতাংশ দর হারিয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে লভ্যাংশ দিতে না পারা জুট স্পিনার্স। তারপরেও দর অনেক মৌলভিত্তি কোম্পানির চেয়ে বেশি।
কয়েক মাস আগে সাড়ে তিনশ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া কোম্পানিটির শেয়ার দর নেমেছে ২৪৬ টাকা ৩০ পয়সায়। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা হাক্কানি পাল্প দর হারিয়েছে ৫.১৬ শতাংশ।
এছাড়া সোনালী পেপার ৪.৯৯ শতাংশ, জিকিউ বলপেন ৪.৫৫ শতাংশ, বেঙ্গল উইন্ডসর ৩.৭৬ শতাংশ, জিলবাংলা সুগার ২.২৫ শতাংশ, শ্যামপুর সুগার ৩.২৬ শতাংশ, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ ৩.০৬ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংক ৩.০১ শতাংশ ও ইমাম বাটন ২.৮৮ শতাংশ দর হারিয়েছে।
আরও ১৪টি কোম্পানি ২ শতাংশের বেশি, ১৩টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে এক শতাংশের বেশি।