যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টেরা রিসোর্সেস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জিয়া ইউ আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটিকে এসব কোম্পানির বিষয়ে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
Published : 01 Sep 2024, 11:27 PM
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আগে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতি খুঁজতে অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি করা হয়েছে; যেটি প্রথম ধাপে বেক্সিমকোর সুকুক ও জিরো কুপন বন্ড ইস্যু এবং সিএসইর কৌশলগত অংশীদার হতে বসুন্ধরা গ্রুপের কোম্পানি এবিজি লিমিটেডের বিনিয়োগ অনুমোদনের বিষয় খতিয়ে দেখবে।
পাঁচ সদস্যের এ কমিটি একই সঙ্গে বেস্ট হোল্ডিংস, ফরচুন সুজ, সোনালী পেপার, রিং শাইন ও একমি পেস্টিসাইডস ল্যাবরেটরিজসহ ১১ কোম্পানি ও বন্ডের তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও কারসাজির বিষয় খতিয়ে দেখবে।
রোববার জরুরি কমিশন সভায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ কমিটি গঠন করেছে, যেটি পর্যায়ক্রমে পুঁজিবাজারের আগের সব অনিয়ম খতিয়ে দেখবে।
কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে সভা শেষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টেরা রিসোর্সেস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জিয়া ইউ আহমেদের নেতৃত্বে এ কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে।
কমিটির সদস্যরা হলেন- সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস অব বাংলাদেশের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ ইয়াওয়ার সাইদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জিশান হায়দার, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
কমিটি গঠনের বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক ফারহানা ফারুকী বলেন, ‘‘পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা ও পুঁজিবাজারের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিগত সময়ের অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতির বিষয়ে এই ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।’’
অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে তালিকাভুক্ত এই ১১টি কোম্পানি ও বন্ড অনুমোদন সংক্রান্ত বিষয়ে অনিয়ম ও শেয়ার কারসাজির বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির সদস্য জিশান হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাকে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে দায়িত্বটি দেওয়া হয়েছে।
”আজ চিঠি পেয়েছি, কমিটির প্রথম বৈঠক হলে কাজের পরিকল্পনা ঠিক করা হবে।’’
নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২৫ অগাস্ট সংবাদ রাশেদ মাকসুদ বলেছিলেন, গত ১৫ বছরে দুই স্টক এক্সচেঞ্জে অনিয়ম করে লেনদেন হওয়া শেয়ারের তথ্য যাচাই করা হবে।
স্বাধীন ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ধাপে ধাপে লেনদেন রিভিউ (পুনযাচাই) করে দেখা হবে অনিয়ম কোথায় কোথায় হয়েছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হবে।’’
প্রথম ধাপে অনুসন্ধান ও তদন্ত হবে যেসব কোম্পানি নিয়ে
>> বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক আল ইসতিসনা ইস্যু সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি এবং আইএফআইসি ব্যাংক গ্র্যান্টেড শ্রিপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড ইস্যু সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়।
>> চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেডের অনুমোদন/মনোনয়ন, শেয়ার বরাদ্দকরণ/ শেয়ার অধিগ্রহণ ও মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়।
>> তালিকাভুক্তির আগে ও পরে বিতর্কের জন্ম দেওয়া বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড সংক্রান্ত আইপিও অনুমোদন ও ইস্যু সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়।
>> আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়ে প্রতিবেদন। ব্লক মার্কেটে শেয়ার অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কারসাজি এবং ওটিসি থেকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরের জন্য এসইসির শর্তসমূহ পরিপালনের হালনাগাদ তথ্যাদিসহ যাবতীয় বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
>> সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড সংক্রান্ত পুঁজিবাজারে যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি এবং ২০২০ সালে কোম্পানিটিকে ওভার-দ্য-কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান বোর্ডে পুনরায় তালিকাভুক্তকরণে বিষয় দেখা। এরসঙ্গে কোম্পানিটিতে হওয়া অনিয়ম এবং কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
>> তালিকাভুক্তির সময়ে বিতর্কের জন্ম দেওয়া ও পরে শেয়ার কেলেঙ্কারিতে জরিমানায় পড়া ফরচুন সুজ লিমিটেড সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ সংক্রান্ত অনিয়ম এবং কোম্পানিটির শেয়ার মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
>> তালিকায় রয়েছে রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের প্রাইভেট ও পাবলিক অফারের মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন ও বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অতিরঞ্জিত করে বিক্রয় বেশি দেখানো এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর/পাচার বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
>> একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ সংক্রান্ত অনিয়ম এবং আইপিও’র মাধ্যমে উত্তোলিত টাকা থেকে ন্যাশনাল ফাইন্যান্সের ঋণ পরিশোধের অনিয়ম তদন্ত।
>> কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড (পূর্বে পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালারস লিমিটেড) সংক্রান্ত ও কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
>> এমারেল্ড ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার অধিগ্রহণ/হস্তান্তর, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহ, সেকেন্ডারি মার্কেটে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং এ-সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
এসব কোম্পানি ও বন্ড তালিকাভুক্ত হয়েছে বিএসইসির গত দুই চেয়ারম্যানের আমলে। গত ১৪ বছরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দু’জন চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেন।
২০১০ সালের শেষ দিকে পুঁজিবাজারে ধসের পর নিয়োগ পেয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান ছিলেন এম খায়রুল হোসেন। তার নিয়োগের মেয়াদ বাড়াতে আইন পর্যন্ত বদলায় সরকার।
তার সময়ে বাজারে আসা কোম্পানির তালিকাভুক্ত হওয়া নিয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েও। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম চালায়।
এরপর পতনের বাজার সামলানো ও পুঁজিবাজার উন্নয়নে দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে। তার সময়েও অনিয়ম ও শেয়ার কেলেঙ্কারির বিভিন্ন ঘটনা আলোচনায় এসেছে। তার বিরুদ্ধেও কারসাজি করে শেয়ার কেনাবেচার অভিযোগ এবং অর্থপাচারের অভিযোগের সংবাদে এসেছে।