শীর্ষ ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৮টিই লোকসানি। দুটি এক যুগ ধরে লভ্যাংশ দেয় না, দুটির উৎপাদন বন্ধ। একটি ছয় বছর ধরে লাভ করতে পারছে না।
Published : 21 Jun 2023, 04:05 PM
মুদ্রানীতি ঘোষণার পরদিন লাফ দিলেও তার পরদিন দরপতনে পুঁজিবাজারে যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল, তার আপাত অবসান হয়েছে।
সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস বুধবার সূচক বেড়েছে। দরপতনের তুলনায় বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর।
৯ পয়েন্টের এই ছোট উত্থান বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ স্বস্তিকর এই কারণে যে, মুদ্রানীতির চাপ কাটিয়ে সোমবার ৩৩ পয়েন্ট বাড়ার পর মঙ্গলবার সূচক কমে গিয়েছিল ১২ পয়েন্ট।
লেনদেন শুরুর সোয়া এক ঘণ্টা পর সূচক আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কমে গিয়েছিল। তবে এরপর থেকে বাড়তে থাকে।
শেষ পর্যন্ত ১২৪টি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়ে শেষ হয় লেনদেন। ৪৯টি দর হারায় আর ১৮১টি কোম্পানি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়।
রোববার মুদ্রানীতি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর থেকে চারশ কোটি টাকায় নেমে আসার পর গত তিন দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
সোমবার সূচকের উত্থানের দিন ৫৩৩ কোটি টাকা, পরের দিন সূচকের পতনের দিন ৫৯০ কোটি টাকা এবং তার পরের দিন হাতবদল হল ৬৩০ কোটি ১৭ লাখ ২৪ হাজার টাকার শেয়ার।
এই দিনটিতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদর। মাসের পর মাস ক্রেতা ছিল না, এমন কোম্পানি উঠে এসেছে দর বৃদ্ধির শীর্ষে।
বাজারে তুমুল আলোচিত বীমা খাত এক দিনের পতন শেষে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। দরে দর বৃদ্ধি বা পতনের শীর্ষতালিকায় এই খাতের কোম্পানিকে সেভাবে দেখা যায়নি, যা আগের কয়েক দিনের নিয়মিত চিত্র ছিল।
লেনদেনের শীর্ষে যথারীতি বীমা খাত, তবে মোট লেনদেনে এর হিস্যা কমেছে।এই খাতের দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে জীবন বীমা খাতে হাতবদল হয়েছে ৬৯ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ১৫ শতাংশের কিছু বেশি।
সাধারণ বীমা খাতে লেনদেন হয়েছে প্রায় সাড়ে ২২ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ শতাংশের মত।
এছাড়া খাদ্য খাদে ৫৬ কোটি, প্রকৌশল খাতে ৫২ কোটি, বস্ত্র খাতে ৪৩ কোটি, বিবিধ খাতে ৩৮ কোটি, ওষুধ খাতে ৩৬ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।
দরবৃদ্ধির শীর্ষে প্রায় সবই লোকসানি কোম্পানি
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির আটটিই লোকসানি। এর মধ্যে দুটি কোম্পানি গত এক যুগেও লভ্যাংশ দিতে পারেনি, দুটি কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ, একটি দীর্ঘদিন হিসাব দিচ্ছে না।
বাকিগুলোর একটি কোম্পানি টাকা ছয় বছর ধরে, একটি টানা তৃতীয় বছর এবং বাকি একটি টানা দ্বিতীয় বছর লোকসান দিচ্ছে।
১০ শতাংশ বেড়ে দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা অলিম্পিক একসেসোরিজ। ১০ টাকার শেয়ারে তিন প্রান্তিকে ১ টাকা ১১ পয়সা লোকসান দেওয়া কোম্পানিটি গত বছর লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তার আগে শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।
৯ শতাংশের বেশি দর বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ।
গত এক যুগের লভ্যাংশ দিতে না পারা ইমাম বাটন ও জুট স্পিনার্সের দর বেড়েছে ৯ শতাংশের কাছাকাছি।
২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে ১০ টাকার শেয়ারে ৬ টাকা ২৪ পয়সা লোকসান দেওয়ার পর আর হিসাব না দেওয়া নর্দার্ন জুটের দর বেড়েছে ৮.৭৪ শতাংশ। সার্কিট ব্রেকারের কারণে এর চেয়ে বেশি দর বাড়া সম্ভব ছিল না।
টানা ছয় বছর ধরে লোকসান দিয়ে আসা জিকিউ বলপেনের দর বেড়েছে ৭.৮১ শতাংশ।
উৎপাদন বন্ধ থাকা আরএসআরএম স্টিল ও চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে ১০ টাকার শেয়ারে চার টাকার বেশি লোকসান দেওয়া আজিজ পাইপসের দরও বেড়েছে ৭ শতাংশের বেশি।
গত বছর লোকসানের কারণে লভ্যাংশ দিতে না পারার পর চলতি বছরও মুনাফার মুখ না দেখা ইয়াকিন পলিমান ছিল দশম স্থানে, যার দর বেড়েছে ৬.৭৪ শতাংশ।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ২০ এ স্থান পাওয়া আরও চারটি কোম্পানি লোকসানি। এগুলোর শেয়ারদর নিয়ে এমনিতেই আছে প্রশ্ন। এখন তা বাড়ছে আরও।
পড়ে গিয়েও ঘুরল বীমা খাত
মুদ্রানীতি ঘোষণার পরদিন সোমবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে আর মঙ্গলবার পতনের শীর্ষে ছিল এই খাত। তৃতীয় দিনে এসে দেখা গেল আরেক প্রবণতা। সকালে দল বেঁধে দর হারানো বেশ কিছু কোম্পানি লেনদেন শেষ করেছে দর বেড়ে। যেগুলো দর হারিয়ে লেনদেন শেষ করেছে, সেগুলোও হারিয়ে ফেলা দরের অনেকটাই ফিরে পেয়েছে।
জীবন বীমা খাতের ১৫টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ১২টির দর। একটি আগের দিনের দরে আর দুটি দর হারিয়ে লেনদেন শেষ করে।
এসব কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯.১৩ শতাংশ দর বেড়েছে প্রাইম লাইফের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪.১৭ শতাংশ দর বেড়েছে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের দর। ২.৯৮ শতাংশ দর বেড়েছে প্রগ্রেসিফ লাইফের। বাকিগুলোর দর বৃদ্ধির হার ন্যূনতম।
সাধারণ বীমার ৪২ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৫টির, কমেছে ১৮টির, আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে আটটি কোম্পানি আর একটির লেনদেন হয়নি।
দর বৃদ্ধির হার ছিল একেবারেই কম। সবচেয়ে বেশি ২.১১ শতাংশ বেড়েছে এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের দর।
উত্থানের দিনে পতনের শীর্ষে যারা
এই তালিকার প্রথমেই ছিল লোকসানি কোম্পানি খুলনা পেপার মিলস, যেটির শেয়ারদর গত সপ্তাহে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। কোম্পানিটি দর হারিয়েছে ৪.৭২ শতাংশ।
তিন শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে এপেক্স ট্যানারি, মিডল্যান্ড ব্যাংক ও খান ব্রাদার্স পিপিওভেন। দুই শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে মেট্রো স্পিনিং মিলস।
দরপতনের শীর্ষে থাকা বাকি পাঁচ কোম্পানির মধ্যে এপেক্স স্পিনিং মিলস, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর ১ শতাংশের বেশি এবং সিমটেক্স ও সোনালী আঁশের দর কমেছে এক শতাংশেরও কম।
পতনের শীর্ষে যারা
সবচেয়ে বেশি ৩.৩২ শতাংশ দর হারিয়েছে এপেক্স ট্যানারি। তিন শতাংশের বেশি দর হারানো দ্বিতীয় কোম্পানিটি হলো সেন্ট্রাল ফার্মা।
২ শতাংশের বেশি দর কমেছে রূপালী লাইফ, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্সের।
বাকি ছয়টি কোম্পানির দর কমেছে এক শতাংশের বেশি। এগুলো হলো প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, নাভানা ফার্মা, ন্যাশনাল টি কোম্পানি, ইস্টার্ন হাউজিং ও খুলনা পেপার মিলস।