টোটাল ফুটবলের প্রতাপ দেখায় ইয়োহান ক্রুইফের নেদারল্যান্ডস।
Published : 12 Nov 2022, 10:02 PM
১৯৬৬ সালের ৬ জুলাই লন্ডনে অনুষ্ঠিত ফিফা কংগ্রেসে বিশ্বকাপের দশম আসর আয়োজনের দায়িত্ব পায় পশ্চিম জার্মানি। সেখানে টোটাল ফুটবলে চমক দেখায় নেদারল্যান্ডস। তবে তাদের হতাশায় ভাসিয়ে শিরোপা জিতে নেয় পশ্চিম জার্মানি।
১৩ জুন থেকে ৭ জুলাই আয়োজিত টুর্নামেন্টে অংশ নেয় ১৬ দেশ। সরাসরি জায়গা করে নেয় স্বাগতিক পশ্চিম জার্মানি ও শিরোপাধারী ব্রাজিল।
৯৮ দেশের বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসে বাকি ১৪ দল। এই মধ্যে ইউরোপের দল আটটি- পূর্ব জার্মানি, বুলগেরিয়া, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, সুইডেন ও যুগোস্লাভিয়া; লাতিন আমেরিকার তিনটি- আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও চিলি। আফ্রিকা থেকে জায়ার, কনকাকাফ অঞ্চল থেকে হাইতি এবং ওশেনিয়া অঞ্চল থেকে অস্ট্রেলিয়া জায়গা করে নেয়।
হাইতি, জায়ার ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্বকাপ অভিষেক হয় পূর্ব জার্মানিরও। ১৯৯০ সালে পুনরেকর্ত্রীকরণের আগে এই একবারই বিশ্ব মঞ্চে খেলে তারা।
প্রথম রাউন্ড
দশম বিশ্বকাপে নতুন ফরম্যাট বেছে নেয় ফিফা। প্রথম রাউন্ডে ১৬ দেশটি চারটি গ্রুপে খেলানো হয়। সেরা দুটি করে দল যায় পরের ধাপে। সেখানে আট দলকে খেলানো হয় দুটি গ্রুপে। সেই রাউন্ডের সেরা দুই দল খেলে ফাইনালে, দুই গ্রুপ রানার্সআপ মুখোমুখি হয় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে।
এই ফরম্যাট কেবল দশম ও একাদশ বিশ্বকাপেই ব্যবহৃত হয়।
গ্রুপ ১: পশ্চিম জার্মানি, পূর্ব জার্মানি, চিলি, অস্ট্রেলিয়া
গ্রুপ ২: ব্রাজিল, যুগোস্লাভিয়া, স্কটল্যান্ড, জায়ার
গ্রুপ ৩: নেদারল্যান্ডস, উরুগুয়ে, সুইডেন, বুলগেরিয়া
গ্রুপ ৪: আর্জেন্টিনা, ইতালি, পোল্যান্ড, হাইতি
গ্রুপ ১ থেকে পরের ধাপে যায় জার্মানির দুই দল। সবাইকে বিস্ময়ে ভাসিয়ে দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয় পূর্ব জার্মানি। দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ হয় পশ্চিম জার্মানি।
দুই ড্রয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয় অস্ট্রেলিয়া। প্রথম আসরে অস্ট্রেলিয়া পায় ১ পয়েন্ট।
১৯৭০ আসর থেকে সরাসরি লাল কার্ডের প্রচলন হয়। তবে সেবার কেউই এই কার্ড দেখেননি। পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ম্যাচে প্রথম দেখেন চিলির কার্লোস গারিদো।
গ্রুপ ২ থেকে পরের ধাপে যায় যুগোস্লাভিয়া ও ব্রাজিল। এই দুই দলের সঙ্গে স্কটল্যান্ডেরও পয়েন্ট ছিল ৪। তিন দলের এক জয়ের সঙ্গে ছিল দুই ড্র। গোল পার্থক্যে পিছিয়ে থাকায় বিদায় নেন স্কটল্যান্ড। অভিষেকে ১৪ গোল হজম করে শূন্য হাতে ফেরে জায়ার।
আফ্রিকার এই দেশটির বিপক্ষে ৯-০ ব্যবধানের জয়ে টুর্নামেন্টের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন যুগোস্লাভিয়ার দুসান বাজেভিচ।
গ্রুপ ৩ থেকে পরের ধাপে যায় নেদারল্যান্ডস ও সুইডেন। দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয় নেদারল্যান্ডস। এক জয় ও দুই ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ সুইডেন। দুই ড্রয়ে বুলগেরিয়ার প্রাপ্তি ২ পয়েন্ট। তলানিতে থেকে বিদায় নেয় উরুগুয়ে।
গ্রুপ ৪ থেকে এগিয়ে যায় পোল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা। তিন জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় পোল্যান্ড। একটি করে জয় ও ড্রয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে পরের জায়গার জন্য লড়াইয়ে নামে আর্জেন্টিনা ও ইতালি। গোল পার্থক্য এগিয়ে থেকে টিকে যায় আর্জেন্টিনা, তৃতীয় হয়ে বিদায় নেয় ইতালি। জায়ারের মতো ১৪ গোল হজম করে হাইতিও। তবে দলটি প্রতিপক্ষের জালে দিতে পারে দুই গোল।
দ্বিতীয় রাউন্ড
গ্রুপ ১: নেদারল্যান্ডস, ব্রাজিল, পূর্ব জার্মানি, আর্জেন্টিনা
গ্রুপ ২: পশ্চিম জার্মানি, পোল্যান্ড, সুইডেন, যুগোস্লাভিয়া
গ্রুপ ১ থেকে ফাইনালে যায় নেদারল্যান্ডস। টোটাল ফুটবল দিয়ে আয়াক্স ক্লাব ফুটবলে আগেই সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ক্রুইফদের হাত ধরে বিশ্ব মঞ্চও তার প্রবল প্রতাপ। সেখানে পেরে উঠল না ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও পূর্ব জার্মানি। এই তিন দল একবারের জন্যও বল পাঠাতে পারেনি ডাচদের জালে।
২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয় ব্রাজিল। নিজেদের মধ্যে ড্র একটি করে পয়েন্ট পায় পূর্ব জার্মানি ও আর্জেন্টিনা।
গ্রুপ ২ থেকে ফাইনালে যায় পশ্চিম জার্মানি। নেদারল্যান্ডসের মতোই জাল অক্ষত রেখে তিন জয় পায় স্বাগতিকরা। বিশ্বকাপে চমক জাগানো ফুটবল উপহার দেওয়া পোল্যান্ড দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সুযোগ পায় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে খেলার।
এক জয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয় সুইডেন। তিন হারে তলানিতে থেকে আসর শেষ করে যুগোস্লাভিয়া।
জেগ্রোস লাটোর একমাত্র গোলে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে তৃতীয় হয় পোল্যান্ড। যা এখন পর্যন্ত তাদের সেরা ফল।
ফাইনাল
৭ জুলাই, ১৯৭৪! ৭৫ হাজারের বেশি দর্শক নিয়ে মুখর মিউনিখের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি পশ্চিম জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। বেশিরভাগ ফুটবল বোদ্ধার মতে এই ম্যাচে ফেভারিট ছিল নেদারল্যান্ডস।
টোটাল ফুটবলের মন্ত্রে উজ্জীবিত ডাচরা দ্বিতীয় মিনিটে সফল স্পট কিকে এগিয়ে যায়। এরপর যেন জেগে ওঠে ‘জার্মান যন্ত্র।’ ২৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরান পল ব্রাইটনার। ৪৩ মিনিটে তারকা স্ট্রাইকার জার্ড মুলারের গোলে ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে জার্মানি। জিতে নেয় নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা।
এক নজরে দশম বিশ্বকাপ
· স্বাগতিকঃ পশ্চিম জার্মানি
· চ্যাম্পিয়নঃ পশ্চিম জার্মানি
· রানার্সআপঃ নেদারল্যান্ডস
· মোট ম্যাচঃ ৩৮
· মোট গোলঃ ৯৭
· গোল গড়ঃ ২.৫৫
· সর্বোচ্চ গোলদাতাঃ জেগ্রোস লাটো। [পোল্যান্ড -৭ গোল]
· সেরা খেলোয়াড়ঃ ইয়োহান ক্রুইফ (নেদারল্যান্ডস) [আন অফিসিয়াল]