২২ বছর পর ব্রাজিলকে হারাল উরুগুয়ে

প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণ ভাঙতে যতটা কার্যকরী হওয়া দরকার, তার ধারেকাছেও যেতে পারলেন না ভিনিসিউস জুনিয়র-রদ্রিগোরা। ব্রাজিলের জন্য আরও বড় ধাক্কা হয়ে এলো নেইমারের চোট। প্রতিপক্ষের এমন বিবর্ণতার সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগাল উরুগুয়ে। দীর্ঘ ২২ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে সেলেসাওদের বিপক্ষে জয়ের সুবাস পেল তারা।

মন্তেভিদিওতে বাংলাদেশ সময় সকালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি ২-০ গোলে জিতেছে উরুগুয়ে। দারউইন নুনেস দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দে লা ক্রুস।

উরুগুয়ের বিপক্ষে টানা ১২ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর হারের তেতো স্বাদ পেল ব্রাজিল। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা এর আগে উরুগুয়ের বিপক্ষে সবশেষ হেরেছিল সেই ২০০১ সালের জুনে; বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১-০ গোলে।

ব্রাজিলের বিপক্ষে দীর্ঘ জয় খরা ঘোচানোর এই দিনে শুরু থেকে রক্ষণ সামলানোয় মনোযোগী ছিল উরুগুয়ে। আক্রমণাত্মক ফুটবলে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করতে থাকে ব্রাজিল। তবে প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণ কিছুতেই ভাঙতে পারেনি তারা।

বারবার ফাউলের ঘটনায় খেলায় ঘটছিল ছন্দপতন। প্রথমার্ধেই রেফারিকে ১৯ বার ফাউলের বাঁশি বাজাতে হয়; এর ১২টিই করে উরুগুয়ে।

নিজেদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়ায় ২৭তম মিনিটে উল্লেখযোগ্য একটি আক্রমণ শাণান রদ্রিগো ও গাব্রিলেল জেসুস। বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন তারা। কিন্তু শেষটা ভালো হয়নি; রেয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ডের ভুল পাসে ভেস্তে যায় সেই সুযোগ।

অবশেষে ৪২তম মিনিটে লক্ষ্যে প্রথম শট রাখতে পারে কোনো দল এবং তা থেকেই এগিয়ে যায় উরুগুয়ে। বাঁদিক দিয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় বল পায়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন মাক্সিমিলিয়ানো আরাউহো, এরপর বাইলাইন থেকে কাটব্যাক করেন তিনি। আর নিচু হয়ে জোরাল হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন লিভারপুল ফরোয়ার্ড নুনেস।

বিরতির আগে দুই দল মিলিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারা শট ছিল ওই একটিই।

পিছিয়ে পড়ার খানিক বাদে আরও বড় ধাক্কা খায় ব্রাজিল। নিকোলাস দে লার ফাউলে পায়ে ব্যথা পান নেইমার। কিছুক্ষণ মাঠেই পড়ে থাকেন তিনি, পরে স্ট্রেচারে তাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বদলি নামানো হয় রিশার্লিসনকে।

দ্বিতীয়ার্ধেও একইরকম ধীর গতিতে চলতে থাকে ম্যাচ। ৫৩তম মিনিটে প্রতিপক্ষের সীমানায় ফ্রি কিক পায় উরুগয়ে, তবে দে লা ক্রুসের শট ভাবাতেও পারেনি ব্রাজিল গোলরক্ষককে। ৬১তম মিনিটে গিয়ে ম্যাচে প্রথম কর্নার পায় ব্রাজিল, গাব্রিয়েলের হেড হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট।

৬৮তম মিনিটে ব্রাজিলের সবচেয়ে ভালো সুযোগটি তৈরি করেন রদ্রিগো। তবে ভাগ্য সহায় হয়নি তাদের, তরুণ ফরোয়ার্ডের ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া ফ্রি কিকে বল মানব দেয়ালের ওপর দিয়ে গিয়ে ক্রসবারে বাধা পায়।

৭৭তম মিনিটে ব্রাজিলের লড়াইয়ে ফেরার আশা অনেকটাই শেষ হয়ে যায়। উরুগুয়ের ব্যবধান দ্বিগুণ করা গোলটির পেছনে অনেক বড় অবদান নুনেসের। ডান দিকের বাইলাইনে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়ের প্রবল চ্যালেঞ্জের মুখে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি, পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে কোনোরকমে কাটব্যাক করেন। ছয় গজ বক্সে বল পেয়ে জালে পাঠাতে ভুল করেননি দে লা ক্রুস।

তখনও বাকি ছিল অনেক সময়, ব্রাজিলের লড়াইয়ে ফেরার সুযোগ ছিল ঢের। কিন্তু বিবর্ণতা ঝেড়ে ফেলতে পারেনি তারা।

কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে বিদায়ের পর চলতি বছরে এই নিয়ে তিন ম্যাচ হারল ব্রাজিল। গত মার্চে মরক্কোর বিপক্ষে ২-১ এবং জুনে সেনেগালের বিপক্ষে ৪-২ গোলে হারে তারা।

এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে প্রথম দুই ম্যাচ জয়ের পর গত শুক্রবার ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ১-১ ড্র করে ব্রাজিল।

চার ম্যাচে ২ জয় ও ১ ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে ব্রাজিল। তাদের সমান পয়েন্ট নিয়ে দু্ইয়ে উঠে এসেছে উরুগুয়ে।