ভিনিসিউসকে নিয়ে টুইটের জন্য ক্ষমা চাইলেন লা লিগা সভাপতি

বর্ণবাদ বিতর্কে ভিনিসিউসকে নিয়ে টুইটের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে, দাবি লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাসের।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2023, 06:32 AM
Updated : 25 May 2023, 06:32 AM

তুমুল সমালোচনার মুখে অবশেষে ভিনিসিউস জুনিয়রকে নিয়ে টুইটের জন্য ক্ষমা চাইলেন হাভিয়ের তেবাস। লা লিগা সভাপতির দাবি, তার টুইটের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বর্ণবাদীদের শাস্তির ক্ষেত্রে লা লিগার কর্তৃপক্ষের খুব বেশি কিছু করার নেই জানিয়ে তিনি কাঠগড়ায় তুললেন স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনকে।

গত রোববার ভালেন্সিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে বর্ণবাদের শিকার হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন ভিনিসিউস, যেখানে তিনি স্পেনকে বলেছিলেন বর্ণবাদী দেশ। লা লিগায় বর্ণবাদ খুব সাধারণ ঘটনা বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমই সেটির জবাব দিয়েছিলেন তেবাস, যেখানে তিনি ভিনিসিউসের দিকেই পাল্টা আঙুল তুলেছিলেন বলে মনে করছিলেন অনেকে। তাই তার তুমুল সমালোচনা চলছিল স্পেনে, ব্রাজিলে ও গোটা ফুটবল বিশ্বেই। এমনকি স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস পর্যন্ত ভিনিসিউসকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তেবাসের মন্তব্যকে পাত্তা না দিতে।

এবার ইএসপিএন ব্রাজিলকে তেবাস বললেন, তার বক্তব্য লোকে ঠিকভাবে বুঝতে পারেনি। বিশেষ করে ব্রাজিলে ভুল বোঝাবুঝি বেশি হয়েছে বলে মনে করেন লা লিগা সভাপতি।

“আমি আমার গোটা ওয়ার্ক টিমকে এটাই বলি। যখন অনেক লোকে বা একটা বড় অংশের মানুষ কোনো বার্তা একটি নির্দিষ্টভাবে বুঝে নেয়, তখন তারাই সঠিক। কাজেই আমাকে দুঃখপ্রকাশ করতেই হবে। কারণ আমার বার্তা লোকে বুঝতে পারেনি, বিশেষ করে ব্রাজিলে।”

“এজন্যই আমাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে, কারণ আমার মনে হয়, আমার বার্তা ও যে ইচ্ছা থেকে এটা লিখেছিলাম, এটির গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু লোকে বুঝতে পারেনি। বিশেষ করে ব্রাজিলে। ভিনিসিউসকে আক্রমণ করার ইচ্ছে আমার ছিল না। বরং এটা পরিষ্কার করে দিতে চাইছিলাম যে, স্রেফ এক মাস আগেই লা লিগার পদক্ষেপকে সমর্থন করে ভিনিসিউস ভিডিও দিয়েছিল।”

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও আরেক দফায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন লা লিগা সভাপতি।

“মনে হচ্ছে, (টুইটের) ফলাফল খুব ভালো হয়নি, তাই না? যারাই অনুভব করেছেন যে, এই সময়ে এবং এভাবে এটি করা ভুল হয়েছে… আমাকে ক্ষমতা চাইতেই হবে। ভিনিসিউসের কাছেও ক্ষমা চাই আমি এবং তাদের কাছেও, যারা মনে করেছেন আমি ভিনিসিউসকে আক্রমণ করেছি।”

বর্ণবাদীদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে লা লিগার সীমাবদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দেন তেবাস। স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনকে ধুয়ে দিয়ে লা লিগা সভাপতি বলেন, বর্ণবাদ থামাতে আরও অনেক কিছু করার আছে ফেডারেশনের। লা লিগা কর্তৃপক্ষের যা করণীয়, সেখানে কোনো ঘাটতি দেখেন না তেবাস।

“এই মৌসুমে বর্ণবাদী আচরণের ৯টি ঘটনা নিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যেই ৮টিই হয়েছে ভিনিসিউসকে নিয়ে। আমরা সবসময়ই এই উন্মাদ লোকগুলিকে সনাক্ত করি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করি। সংখ্যায় তারা যত কমই হোক না কেন, আমরা সবসময়ই একইরকম গুরুত্ব দেই।”

“স্প্যানিশ ফেডারেশন ও লা লিগা দুটি আলাদা সত্ত্বা। মাঠ থেকে দর্শক বের করে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তাদের (ফেডারেশনের) আছে। অপরাধীদের নিষেধাজ্ঞা ও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের থাকলে আমরা অবশ্যই আরও ব্যবস্থা নিতাম। সম্ভব হলে আমরা স্টেডিয়াম বন্ধ করে দিতাম, দর্শকদের নিষিদ্ধ করতাম। কিন্তু আমাদের ক্ষমতা কেবল মাঠের বাইরে।”

স্টেডিয়ামের ভেতরে লা লিগা কতৃর্পক্ষের ক্ষমতা বাড়ানো হলো বর্ণবাদ একদম দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন তেবাস।

“বর্ণবাদ নিয়ে আমরা অভিযোগ দায়ের করেছি, যেসবে স্রেফ জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে গেছে (দোষীরা)। আশা করি যে, ব্যবস্থা নেওয়ার কর্তৃত্ব আমাদের দেওয়া হবে। কারণ আমাদের যদি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা থাকত, স্টেডিয়ামের ভেতরে বর্ণবাদ আমরা কয়েক মাসের মধ্যে খতম করে দিতাম।”

স্প্যানিশ ফেডারেশনের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস অবশ্য গত সোমবার স্বীকার করেন যে স্পেনে বর্ণবাদ একটি বড় সমস্যা এবং বর্ণবাদে জড়িত সমর্থকদের নিষেধাজ্ঞা ও কড়া শাস্তির দাবি তোলেন তিনি। পরে ভালেন্সিয়াকে আর্থিক জরিমানা করা যায়। তাদের স্টেডিয়ামের যে অংশ থেকে ভিনিসিউসকে বর্ণবাদী আক্রমণ করা হয়েছিল, সেই সাউথ স্ট্যান্ড বন্ধ করে দেওয়া হয় পাঁচ ম্যাচের জন্য।