স্পেন জাতীয় দলের অধ্যায় শেষ পর্যন্ত চুকিয়ে ফেললেন সের্হিও রামোস। জাতীয় দলের নতুন কোচের পরিকল্পনায় নেই জানার পর তার এই সিদ্ধান্ত। প্রায় বছর দুয়েক ধরেই তিনি জাতীয় দলের বাইরে। এবার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটল বর্ণাঢ্য এক অধ্যায়ের।
২০১০ বিশ্বকাপ, ২০০৮ ও ২০১২ ইউরো জয়ী স্পেন দলের অবিচ্ছেদ্দ অংশ ছিলেন রামোস। স্পেনের ফুটবল ইতিহাসে সোনালি সাফল্যে মোড়ানো সেই সময়টার নায়কদের একজন তিনি। দেশের হয়ে খেলেছেন রেকর্ড ১৮০ ম্যাচ। নেতৃত্বে দিয়েছেন ৫২ ম্যাচে।
গৌরবময় পথচলার শেষটা যে সুখকর হলো না, সেটা ফুটে উঠল বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যমে ৩৬ বছর বয়সী ডিফেন্ডারের বিবৃতিতেই।
“আমাদের ভালোবাসার ও রোমাঞ্চকর জাতীয় দলকে বিদায় বলে দেওয়ার সময় হলো। আজ সকালে আমাদের বর্তমান কোচের কাছ থেকে ফোনকল পাই আমি। তিনি জানান যে, আমি নিজেকে যতটাই মেলে ধরি বা যেভাবে ক্যারিয়ার চালিয়ে যা-ই না কেন, তিনি কোনোভাবেই আমাকে আর বিবেচনা করবেন না।”
গত বিশ্বকাপের পর লুইস এনরিকের জায়গায় স্পেনের কোচের দায়িত্ব পান লুইস দে লা ফুয়েন্তে। এই মাসের শুরুতেই তিনি বলেছিলেন, রামোসের জন্য জাতীয় দলের দুয়ার খোলা। কিন্তু রামোসের বিদায়ের প্রেক্ষাপট বলছে, স্পেন কোচের ভাবনা ভিন্ন কিংবা বদলে গেছে।
স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে কোচের সঙ্গে রামোসের আলোচনা হওয়ার কথা। তবে বিষয়বস্তু নিয়ে তারা বিশদ কিছু জানায়নি।
২০২১ সালের ৩১ মার্চ কসোভোর বিপক্ষে ম্যাচে মিনিট চারেক মাঠে ছিলেন রামোস। জাতীয় দলের হয়ে সেটিই হয়ে রইল তার শেষ ম্যাচ। ওই বছরই রিয়াল মাদ্রিদ থেকে পিএসজিতে পাড়ি জমান এই ডিফেন্ডার। সেখানে চোটের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই চলে তার। স্পেন কোচ এনরিকে তাকে আর সুযোগ দেননি জাতীয় দলে। এটা নিয়ে বিতর্কও হয় অনেক।
স্পেনের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে দুর্দান্ত পারফর্ম করে ২০০৫ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয়ে যায় তার ১৯তম জন্মদিনের ৫ দিন আগে। এরপর দীর্ঘ পথচলায় দেশের হয়ে খেলেছেন ৭টি বড় আসরে। রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি গোল করেছেন ২৩টি।
বিদায়বেলায় রামোসের কথায় অভিমান ও ক্ষোভের সুর ছিল স্পষ্ট।
“ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে, এটাই আমার পথের সমাপ্তি। তবে দলের হয়ে যা অর্জন করেছি আমরা, এটা (বিদায়) আরও মধুর হতে পারত কিংবা দলের অংশ হয়ে হতে পারত। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, আমার পথচলা শেষ হওয়াটা প্রাপ্য ছিল নিজের সিদ্ধান্তে, কিংবা আমার পারফরম্যান্স যদি জাতীয় দলের খেলার মতো না হতো। কিন্তু বয়সের কারণে বা অন্য কোনো সিদ্ধান্তে শেষ হওয়াটা কাম্য নয়।”
“বয়স কম বা বেশি হওয়াটা কখনোই কোনো গুণ বা ত্রুটি নয়। বয়স স্রেফ সংখ্যা ও ক্ষণস্থায়ী ব্যাপার মাত্র, সামর্থ্য বা পারফরম্যান্সের সঙ্গে যেটির সরাসরি সম্পর্ক সবসময় নেই। মদ্রিচ, মেসি, পেপে-তাদেরকে দেখে আমি মুগ্ধ হই, ইর্ষা করি… ফুটবল এই সত্ত্বা, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, যোগ্যতা ও ন্যায্যতার প্রতিরূপ তারা, আমার ক্ষেত্রে যা হলো না। ফুটবল সবসময় ন্যায্য নয়, কখনও কখনও ফুটবল শুধু ফুটবলই নয়।”
বিদায় মনের মতো না হলেও পেছন ফিরে তাকিয়ে গর্বের উপলক্ষ অনেক পাচ্ছেন রামোস।
“হতাশা ও দুঃখবোধ থাকলেও মাথা উঁচু রাখছি আমি। অবিস্মরণীয় সব স্মৃতি আমার সঙ্গী, যেসব শিরোপার জন্য আমরা একসঙ্গে লড়েছি ও উদযাপন করেছি, স্পেনের জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার যে রেকর্ডে আমি অসাধারণ গর্ববোধ করি।”