তরুণদের নিয়ে সাজানো গ্যারেথ সাউথগেটের দলটি যেকোনো প্রতিপক্ষকে সমস্যায় ফেলতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই সাবেক ইংলিশ কোচ।
Published : 13 Nov 2022, 09:47 AM
প্রতিবারই তারা থাকে ফেভারিটদের তালিকায়। বিশেষ করে ইংলিশ গণমাধ্যমের উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা চড়ে সপ্তাকাশে। ধুন্দুমার আলোচনা চলে, নানা ছক কষে দেখানো হয় তাদের সম্ভাবনা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আরেকটি বিশ্বকাপ খালি হাতে শেষ করার হতাশা নিয়ে থামে ইংল্যান্ড। এবারও যথারীতি আলোচনায় ‘থ্রি লায়ন্স।’ আরও অনেকের মতো জেমি ডের চোখেও ফেভারিট ইংল্যান্ড।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকা বিদেশি কোচদের কয়েকজন কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে। নিজেদের দেশ, দলের তারকা, সম্ভাবনাময় উদীয়মানদের নিয়ে ভাবনাগুলো জানিয়েছেন বিশ্লেষণী চোখে। আজ থাকছে ইংল্যান্ড ও জেমিকে নিয়ে।
সেই ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর আর সাফল্যের আনন্দে ভাসতে পারেনি ইংল্যান্ড। এরপর একে একে হয়েছে ১৩টি বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের সেই সাফল্যের গল্পে আর কোনো পাতা যোগ হয়নি, বরং জমেছে সময়ের ধুলো। মাঝে দুটি আসরে স্বপ্ন একটু উঁকি দিলেও পূর্ণতা পায়নি। তাই ১৯৯০ ও সবশেষ ২০১৮ সালের রাশিয়া কাপে চতুর্থ হওয়াই ওয়েম্বলির সেই অর্জনের পরের সময়ের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।
এবার তারুণ্য নির্ভর গ্যারেথ সাউথগেটের দলকে অনেকে রাখছেন সম্ভাব্য জয়ীদের তালিকায়। যদিও সে তালিকা নেহাত ছোট নয়- আছে জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্সের মতো দল। তাদের পরের সারিতে জায়গা মিলছে ইংল্যান্ডের।
এই বাস্তবতাটুকু অজানা নয় জেমির। তিনিও বিশ্লেষণী চোখে দেখছেন ইংল্যান্ডকে। তবে দেশপ্রেমের জন্যই হয়তো বাংলাদেশের এই সাবেক কোচ তাই হাসির ইমোজিতে দিলেন ফেভারিট নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তর।
“আমার ফেভারিট ইংল্যান্ড (হাসি)। আশা করি, আমরা এবারের প্রতিযোগিতায় ভালো করতে পারব। ইংল্যান্ড আমার ফেভারিট, কেননা আমি এই দেশটাতে জন্মেছি এবং যে যে দেশে জন্ম নেয়, তারা শুধু তাদের দলটাকেই সমর্থন করে। আমিও তাই।”
রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে শিরোপার দৌড়ে এগিয়ে রাখছেন জেমি। ৪৩ বছর বয়সী এই ইংলিশ কোচও লাতিন আমেরিকার দলটির সুন্দর ফুটবলের ভক্ত।
“ব্রাজিল যেভাবে আকর্ষণীয় ফুটবল খেলে, তাদের ফুটবল খেলা দেখাটা দারুণ ব্যাপার এবং সবসময় আনন্দদায়ী।”
দুর্বার গতিতে ছুটে চলা ব্রাজিলকে নিয়ে বাজি ধরার লোক যত, ইংল্যান্ডকে নিয়ে হয়ত তত নয়। তবে দলটির ফরোয়ার্ড হ্যারি কেইন বাজির দরে বেশ এগিয়ে। এতটাই যে, লিওনেল মেসি, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, নেইমার কিংবা কিলিয়ান এমবাপের মতো গোলমেশিনও বাজির দরে তার কাছে ঘেঁষতে পারছেন না! গোল্ডেন বুটের সম্ভাব্য জয়ীদের তালিকায় তাই সবার উপরে কেইনের নাম।
এর কারণও কয়েক বছর ধরে ইংল্যান্ডের জার্সিতে কেইনের আলো ঝলমলে পারফরম্যান্স। এ মুহূর্তে দেশটির সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে থাকা ওয়েইন রুনির চেয়ে মাত্র দুই গোল কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন তিনি (৫১টি)।
কেইন আলো ছড়ান রাশিয়া আসরেও। গ্রুপ পর্বে তিউনিশিয়ার জালে দুই গোল দেওয়ার পর পানামার বিপক্ষে ৬-০ গোলের জয়ে করেন হ্যাটট্রিক। কলম্বিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে করেন এক গোল। সব মিলিয়ে ছয় গোল করে গত বিশ্বকাপে জেতেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট।
টটেনহ্যাম হটস্পারের এই অভিজ্ঞ এবং পরীক্ষিত স্ট্রাইকার যথারীতি এবারও ইংল্যান্ডের তুরুপের তাস। জেমির বিশ্বাস এবারের বিশ্বকাপেও ইংল্যান্ডকে পথ দেখাবেন কেইন।
“ইংল্যান্ডের হয়ে বড় প্রতিযোগিতায় কেইন গোল করে। এই বিশ্বকাপেও দলকে এগিয়ে যেতে হলে তার পারফরম্যান্স, গোলগুলোর প্রয়োজন পড়বে।”
দলটির আক্রমণভাগ ও মিডফিল্ডেও আছে নির্ভর করার মতো তরুণ। ম্যাসন মাউন্ট, জুড বেলিংহ্যামরা মাঝমাঠের সুর বেঁধে দিতে পারদর্শী। কেইনের মতো আক্রমণভাগে প্রতিপক্ষের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারেন ম্যানচেস্টার সিটির ফিল ফোডেন, আর্সেনালের বুকায়ে সাকা। গতি, স্কিল এবং সাফল্য পাওয়ার দুর্বিবার আকাঙ্ক্ষা, নিবেদন-সবই আছে এই তরুণদের মধ্যে। জেমির তাই মনে হচ্ছে, এই তরুণদের কাঁধে সাওয়ার হয়ে বাধাগুলো ডিঙাতে পারে তার দেশ।
“ইংল্যান্ডের ভালো একটা তরুণ দল আছে, যাদের গতি এবং শক্তি আছে। যদি নিজেদের মেলে ধরতে পারে, তাহলে যে কোনো দলকে সমস্যায় ফেলতে পারে তারা।”
২০ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়ার কাতার বিশ্বকাপে ‘বি’ গ্রুপে ইংল্যান্ডের সঙ্গী ইরান, যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েলস। ২১ নভেম্বর ইরান ম্যাচ দিয়ে পথচলা শুরু করবে সাউথগেটের দল। পরীক্ষা শুরু হবে কেইন-ফোডেন-বেলিংহ্যামদেরও।