রিয়ালের জালে চার গোল দিয়ে কাস্তেইয়ানোসের ‘স্বপ্নের রাত’

কৌতূহলের কেন্দ্রে এখন ২৪ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। দুই বছর আগে তাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন ম্যান সিটি কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা, সেটিও এখন জানা যাচ্ছে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2023, 05:29 AM
Updated : 26 April 2023, 05:29 AM

রূপকথার রাত একে বলাই যায়। কিংবা আরও রঙিন, আরও বিশাল, আরও ঐন্দ্রজালিক কিছু! রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গোল করার স্বপ্ন মনের কোণে পুষে রাখতেন ভালেন্তিন কাস্তেইয়ানোস। তবে স্পেনের ও ইউরোপের সফলতম দলের বিপক্ষে এক ম্যাচেই চার গোল করবেন, এটা তার কল্পনার সীমানাতেও ছিল না কখনও। জিরোনার এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড তাই আছেন যেন অনেকটা ঘোরের মধ্যে।  

এই ম্যাচের আগেও ফুটবলবিশ্বে পরিচিতি তেমন একটা ছিল না তার। থাকার মতো তেমন কিছু করতেও পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার থেকে ধারে খেলতে এসেছেন তিনি জিরোনায়। তাকে ঘিরে আগ্রহ থাকার কথাও নয়। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদকে বিধ্বস্ত করা রাতের পর এই ২৪ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড এখন কৌতূহলের কেন্দ্রে। দুই বছর আগে তাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন পেপ গুয়ার্দিওলা, সেই ঘটনাও এখন জানা যাচ্ছে।

লা লিগায় মঙ্গলবার বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ৪-২ গোলে হারানোর ম্যাচে জিরোনার সবকটি গোলই করেন কাস্তেইয়ানোস।

রিয়াল মাদ্রিদের জালে একাই ৪ গোল দেওয়ার কাজটি যে কতটা কঠিন, তা তুলে ধরবে ইতিহাস। সবশেষ তাদের বিপক্ষে ৪ গোল করতে পেরেছিলেন রবের্ত লেভানদোভস্কি। ২০১২-১৩ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে অমন বিধ্বংসী পারফরম্যান্স করেছিলেন এখন বার্সেলোনায় চলে আসা ফরোয়ার্ড।

লা লিগায় রিয়ালের বিপক্ষে ৪ গোল খুঁজতে হলে যেতে হবে কয়েক যুগ পেছনে! সেই ১৯৪৭ সালে রিয়াল ওভিয়েদোর হয়ে ৫ গোল করেছিলেন এস্তেবান এচেভেরিয়া।

কাস্তেইয়ানোস ফিরিয়ে আনলেন রিয়ালকে বিব্রত করার সেই ইতিহাস। জন্ম তার আর্জেন্টিনার মেন্দোসায়। পুরো নাম ভালেন্তিন মারিয়ানো হোসে কাস্তেইয়ানোস হিমেনেস। ডাকনামের সঙ্গে মিলিয়ে তাকে ট্যাটি কাস্তেইয়ানোস নামেই বেশি ডাকা হয় তাকে।

জিরোনায় যেমন তিনি ধারে খেলছেন, তার ক্লাব ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় কেটেছে এভাবে অতিথি হয়েই। নিজ শহর মেন্দোসার একটি ক্লাবের একাডেমির হয়ে খেলা শুরু করে পরে তিনি পাড়ি জমান চিলির ক্লাব ইউনিভার্সিদাদের যুব দলে। ২০১৭ সালে এই ক্লাবের হয়েই ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে তার অভিষেক। ওই মৌসুমেই তাকে ধারে পাঠানো হয় উরুগুয়ের ক্লাব মন্দেভিদেয়ো সিটি তর্কেতে। পরের বছর এই ক্লাবেই চলে যান তিনি। সেখান থেকে ধারে খেলতে যান তিনি মেজর লিগ সকারের দল নিউ ইয়র্ক এফসিতে। নতুন ক্লাবের হয়ে প্রথম ম্যাচেই গোলের দেখা পান তিনি। পরের বছর ‘অপশন টু বাই’ কাজে লাগিয়ে তাকে দলে নিয়ে নেয় নিউ ইয়র্ক এফসি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে পাকাপাকিভাবে নাম লিখিয়ে হয়ে ওঠেন ক্লাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রথম মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ১১ গোল করেন তিনি, সহায়তা করেন ৭ গোলে। কোভিড মহামারিতে বাধাগ্রস্ত পরের মৌসুমে খুব ভালো কিছু করতে পারেননি তিনি। তবে তার সেরাটা মেলে ধরেন ২০২১ সালে। সেবার ১৯ গোল করে ও ৮ গোলে সহায়তা করে জিতে নেন মেজর লিগ সকার গোল্ডেন বুট।

তখনই তিনি নজরে আসেন ম্যানচেস্টার সিটির স্কাউটদের। সিটির কোচ পেপ গুয়ার্দিওলার সঙ্গে তখন স্কাউটদের আলোচনা হয় তাকে দলে নেওয়া নিয়ে। নিউ ইয়র্ক এফসির এমএলএস কাপ জয়ে বড় অবদান ছিল কাস্তেইয়ানোসের। সেই ম্যাচটি একটি রেস্টুরেন্টে বসে দেখেছিলেন গুয়ার্দিওলা। ওই ম্যাচ দেখেই এই ফরোয়ার্ডকে মনে ধরে সিটি কোচের। সেই মুগ্ধতার কথা তিনি বলেছিলেন পরে এক সংবাদ সম্মেলনেও।

“আমার মনে হয়, এই ছেলেটির পরের পদক্ষেপ হবে ইউরোপে। স্কাউটিং বিভাগ আমাকে ওর কথা বলার পর যা দেখলাম, তাকে দারুণ মানসম্পন্ন ফুটবলার মনে হলো এবং ইউরোপে যেতে তাকে তৈরি বলেই মনে হলো।”

শেষ পর্যন্ত গুয়ার্দিওলার দলে তাকে দেখা যায়নি, তবে ইউরোপে ঠিকই পা রাখেন তিনি। আরেক দফা ধারের পালায় গত বছরের জুলাইয়ে তিনি আসেন স্পেনে। এক মৌসুমের জন্য ধারে প্রথমবারের মতো তাকে ইউরোপে নিয়ে আসে জিরোনা। মঙ্গলবারের আগ পর্যন্ত লিগে তার গোল ছিল ৭টি। এবার এক ম্যাচেই ৪ গোল করে তিনি উঠে এলেন শিরোনামে।

ম্যাচ শেষে মুভিস্টারকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় কাস্তেইয়ানোসের উচ্ছ্বাস ফুটে উঠছিল পুরোপুরিই।

“এটা ছিল স্বপ্নের এক রাত। বিশ্বের সেরা দলগুলির একটির বিপক্ষে অসাধারণ এক ম্যাচ খেলেছি আমরা। আমি কখনও ভাবতেও পারিনি… মাদ্রিদের বিপক্ষে গোল করার স্বপ্ন আমার ছিল, কিন্তু চার গোল করা কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। আমি সত্যিই খুব খুশি।”

“সমর্থকদের সঙ্গে আজকের ম্যাচটি ছিল দারুণ উপভোগ্য এবং আমার সতীর্থ, পরিবার, মেন্দোসার (জন্ম শহর) মানুষেরা এবং এখনও পর্যন্ত যারা আমার পাশে থেকেছেন নানাভাবে, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ আমি। সবকিছুর জন্য আমি খুশি।”

আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে এখনও তার খেলা হয়নি। তবে অনূর্ধ্ব-২৩ দলে খেলেছেন। রিয়ালকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর জাতীয় দলের কোচ লিওনেল স্কালোনির নজর তার ওপর পড়লে হয়তো বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।