ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচে সতীর্থ, ক্লাব ও সমর্থকদের স্মরণীয় আয়োজনে বিদায় জানানো হলে গত ১০ বছরে রেয়াল মাদ্রিদের অনেক সাফল্যের নায়ককে।
Published : 26 May 2024, 11:16 AM
ফুটবল পায়ে টনি ক্রুস সৃষ্টিশীল, তবে ধারাবাহিকতায় পুরো জার্মান যন্ত্র। মানসিকতা যার ভীষণ কঠিন। সেই তিনি একটু সময়ের জন্য ভেঙে পড়লেন বিদায় বেলায়। ৮৫তম মিনিটে যখন তুলে নেওয়া হলো তাকে, মাঠের বাইরে কাঁদছিলেন তার তিন শিশু সন্তান, ক্রুসের চোখ বেয়েও তখন নেমে এলো প্লাবন। পরে তিনি বললেন, “আমি নিজেকে খুব শক্ত মানুষ বলেই মনে করি। কিন্তু বাচ্চাদের চোখে পানি আমার ভেতরটা ভেঙেচুরে ফেলেছে।”
রেয়াল বেতিসের বিপক্ষে শনিবার এই ম্যাচ দিয়ে লা লিগার এবারের মৌসুম শেষ করেছে রেয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচে গোল করতে পারেনি কোনো দলই। তবে ফলাফল নিয়ে কারও কৌতূহল খুব একটা ছিল না। রেয়াল চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে বেশ আগেই। এটি ছিল স্রেফ টনি ক্রুসের ম্যাচ। ম্যাচের আগে-পরে বা গোটা ম্যাচ, সবই ছিল ক্রুসময়। আর কিছু নয়।
কদিন আগেই অবসরের ঘোষণা দেওয়া এই মিডফিল্ডার আরও একটি ম্যাচ খেলবেন রেয়ালের হয়ে। সামনেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল। তবে ১০ বছরে যে মাঠ ছিল তার নিজের আঙিনা, যেখানে তিনি নিজের জাদু মেলে ধরেছেন সপ্তাহের পর সপ্তাহ, যে সবুজ ঘাসে ছুটে তিনি হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তি, সেই সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে তার শেষ ম্যাচ ছিল এটিই।
ইউরোপের সফলতম ক্লাবের হয়ে ৪৬৪ ম্যাচ খেলে ২২টি ট্রফি জয়ের স্মরণীয় ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে রেয়ালের মাঠে তার পথচলা থামল।
ক্লাবের অনেক সাফল্যের নায়ককে বিদায় জানাতে বের্নাবেউয়ের আবহ ছিল স্মরণীয়। বিশালাকৃতির একটি টিফো ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল গ্যালারির উঁচু থেকে নিচ পর্যন্ত। ‘ধন্যবাদ কিংবদন্তি’ লেখা ব্যানার ছিল অনেক দর্শকের হাতে।
‘ক্রুস… ক্রুস’ ধ্বনি আর গর্জন ছিল ম্যাচজুড়েই। তার ছবি, তার প্রতিকৃতি, তাকে নিয়ে নানা লেখা ছিল দর্শকের হাতে হাতে। তার প্রতি মুগ্ধতা ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ ছিল চারপাশে। স্টেডিয়ামের বড় পর্দায় বারবার ফুটে উঠেছে ‘সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ, কিংবদন্তি।’ ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্সিতে পেরেস ও অন্যান্য বড় কর্তারা গ্যালারিতে ছিলেন বিদায় জানাতে।
ক্রুস মাঠে নামার সময় দুই পাশে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেন সতীর্থরা। সবার গায়েই তখন ছিল ক্রুসের ৮ নম্বর জার্সি।
৮৫তম মিনিটে তাকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেওয়ার সময় খেলা বন্ধ থাকে বেশ কিছুক্ষণ। সতীর্থদের সবার সঙ্গেই গিয়ে হাত মেলান ক্রুস, আলিঙ্গনে জড়ান। গোটা গ্যালারি উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায় তাকে।
ম্যাচ শেষে গোটা দলের সঙ্গে পুরো মাঠ প্রদক্ষিণ করে দর্শকের ভালোবাসার জবাব দেন ক্রুস। বিদায়ের এই পর্ব চলতে থাকে আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে। সতীর্থরা তাকে উঁচিয়ে ধরে ছুড়ে মারেন শূন্যে। ছবির পর ছবির জন্য পোজ দেওয়া চলতে থাকে। রেয়ালে নিজের সব ট্রফির সঙ্গে ক্লাব সভাপতিকে নিয়েই ফ্রেমবন্দি হন তিনি।
আবেগের এই প্রবল আবহে খুব বেশি কিছু বলতে পারেননি ক্রুস। তবে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি সবাইকে।
“সমর্থকদেরকে, এই ক্লাব, আমার সব সতীর্থ ও এই স্টেডিয়ামকে কেবল কৃতজ্ঞতাই জানাতে পারি। এই ১০ বছরে এটিকে নিজের বাড়ি বলেই মনে হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু চাইতে পারতাম না। অবিস্মরণীয় ১০ বছর, কখনোই ভোলার নয়।”