ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
ইউরোর গোল্ডেন বলজয়ী রদ্রিকে এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ফুটবলার মনে করেন স্পেন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে।
Published : 15 Jul 2024, 12:33 PM
বিষাদের একটা শঙ্কা উঁকি দিচ্ছিল। ফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর পর দেখা গেল রদ্রি বসে আছেন ডাগআউটে। তাকে তুলে নিয়েছেন কোচ। ধারাভাষ্যে পিটার ড্রুরি বললেন, “নিশ্চয়ই কোনো চোট সমস্যা আছে, নইলে তাকে তুলে নেওয়ার কথা নয়। রদ্রিকে হারানো স্পেনের জন্য বিশাল এক ধাক্কা…।”
তবে শেষ পর্যন্ত ধাক্কাটা লাগেনি, বরং হয়েছে ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ।’ স্পেনের জয়ে হাসি ফিরেছে রদ্রির মুখে। পরে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে তার খুশি হয়ে উঠেছে দ্বিগুণ।
স্পেনের কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তের মতে শুধু এই টুর্নামেন্টেই নয়, এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ফুটবলার রদ্রিই। এবারের ব্যালন দ’র এই মিডফিল্ডারেরই প্রাপ্য বলে মনে করেন কোচ।
ক্লাব মৌসুম শেষ হওয়ার পর অবশ্য ব্যালন দ’র জয়ের দাবিদার হিসেবে সংবাদমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে ভিনিসিউস জুনিয়র ও জুড বেলিংহ্যামের নাম। রেয়াল মাদ্রিদের লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ের পথে দুর্দান্ত খেলেছেন দুজনই।
পরে কোপা আমেরিকায় ভিনিসিউস এক ম্যাচে জোড়া গোল করলেও তার দল ব্রাজিল ছিটকে যায় কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে। বেলিংহ্যাম অবশ্য দু-একটি ম্যাচ বাদ ইউরোতে ভালো খেলেছেন। তার শেষ ষোলোয় স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে তার ওভারহেড কিকে করা গোল তো আসরের সেরা গোলগুলির একটি। ফাইনালে ইংল্যান্ড হারলেও তিনি দুর্দান্ত খেলেছেন।
এখন তাদের পাশে উঠে আসছে রদ্রির নামও। ম্যানচেস্টার সিটির ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল তার। এবার ইউরোতে তিনি ফাইনালের এক অর্ধ না খেলেও জিতে গেলেন গোল্ডেন বল।
এবারের ব্যালন দ’অর জয়ীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যাবে অক্টোবরের শেষে। কিন্তু স্পেন কোচ দে লা ফুয়েন্তে এখনই রদ্রিকে বিজয়ী ঘোষণা করে দিলেন।
“আমার মতে, বিশ্বের সেরা ফুটবলার রদ্রি। দয়া করে ওকে এখনই ব্যালন দ’র দিয়ে দিন।’
রদ্রি অবশ্য সেই আলোচনায় যাচ্ছেন না। বরং অসাধারণ অর্জনের প্রাপ্তিতেই তিনি উচ্ছ্বসিত। গত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির ঐতিহাসিক ট্রেবল জয়ে তার ছিল অমূল্য অবদান। এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ জয়ের পাশাপাশি জিতলেন দেশের হয়ে ট্রফি। স্পেনের হয়ে নেশন্স লিগজয় ও ক্লাবের হয়ে আরও অনেক ট্রফি তিনি জিতেছেন। তবে ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন তার কাছে এই ইউরোর ট্রফি।
“কী দারুণ একটা দিন… নিশ্চিতভাবেই আমার খেলোয়াড়ি জীবনের সেরা দিন। এই দলে একটা পরিবার গড়ে তুলতে পেরেছি আমরা। এখন আমরা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন। কাজটা কঠিন ছিল। তবে আমরা পেরেছি। ইউরোর ইতিহাসের সবচেয় সফল দল আমরা।”
একটা সময় স্পেনের ফুটবলে ট্রফির হাহাকার ছিল যুগ যুগ ধরে। ১৯৬৪ ইউরোর পর ৪৪ বছরের খরা কাটিয়ে ২০০৮ ইউরোতে লুইস আরাগোনেসের কোচিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। পরে ভিসেন্তে দেল বস্কের কোচিংয়ে বিশ্ব ফুটবলে রাজত্ব করে ২০১০ বিশ্বকাপ ও ২০১২ ইউরোও তারা জিতে নেয়। এরপর এবার এক যুগের অপেক্ষা ঘুচিয়ে আবার ইউরোপের সেরা স্পেন। চারবার ট্রফি জিতে তারাই এখন ইউরোর ইতিহাসের সেরা দল।
এই সাফল্যের দিনে পূর্বসূরীদেরও স্মরণ করলেন রদ্রি।
“আগের প্রজন্মগুলো কীভাবে আমাদের জন্য পথ তৈরি করে দিয়েছে, সেসব নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সেই পথ ধরে আমরা এখন ইউরোপের সেরা। সবার জন্যই অসাধারণ একটি দিন, আমরা ইতিহাস গড়েছি।”
ক্রোয়েশিয়াকে উড়িয়ে এবারের আসর শুরু করেছিল স্পেন। এরপর গ্রুপ পর্বে তারা হারায় ইতালি ও আলবেনিয়াকে। চমক দেখিয়ে শেষ ষোলোয় আসা জর্জিয়া বিধ্বস্ত হয় স্পেনে জাদুকরি ফুটবলে। রদ্রিরা এরপর একে এক হারায় জার্মানি, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডকে।
এই স্পেন দলের অনেকেই বয়সভিত্তিক বিভিন্ন আসরে স্পেনের হয়ে খেলেছেন, শিরোপা জিতেছেন। সেই অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লেগেছে বলে মনে করেন রদ্রি।
“শিরোপা জয়ের পথে চারটি সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলকে আমরা হারিয়েছি। এই দলের মানসিকতাই এমন দুর্দান্ত। আমরা অনেকেই বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এবং এখন মূল জায়গাতেও আমরা ইউরোপের সেরা।”