ম্যানচেস্টার ডার্বিতে ব্রুনো ফের্নান্দেসের সমতা ফেরানো গোলটি এখন শিরোনামে। আসলেই সেটি গোল কি-না, প্রশ্ন উঠেছে চারদিকে। কোচ, খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ফুটবল পন্ডিতরাও দ্বিধাবিভক্ত। কারো কাছে এটি ‘রসিকতার ফল’, কেউ আবার আকণ্ঠ প্রশংসা করছেন ফের্নান্দেসের বুদ্ধিমত্তার।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে শনিবার জমজমাট ডার্বিতে ম্যানচেস্টার সিটিকে ২-১ গোলে হারায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে পিছিয়ে থাকা ইউনাইটেডকে সমতায় ফেরান ফের্নান্দেস। পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের গোলটি নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
তা হওয়ার কারণও আছে যথেষ্ট। মাঝমাঠ থেকে কাসেমিরো পাস দেন মার্কাস র্যাশফোর্ডের উদ্দেশ্যে। পরিষ্কার অফসাইডে ছিলেন তিনি, তবে স্পর্শ না করে বলের পেছনে পেছনে র্যাশফোর্ড এগিয়ে চলে যান ডি–বক্সের মুখে, এরপরই ছুটে গিয়ে জোরাল শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ফের্নান্দেস। লাইন্সম্যান শুরুতে অফসাইডের পতাকা তোলেন, ভিএআরে পাল্টায় সিদ্ধান্ত।
সিটি ডিফেন্ডার মানুয়েল আকনজির দৃষ্টিতে ফের্নান্দেসের গোলটি যেন ‘রসিকতা’। এই দাবির পেছনে বিবিসির সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি যুক্তি দেখান অফসাইডের প্রসঙ্গ টেনে।
“সত্যি বলতে প্রথম গোলটি একটা রসিকতা। আমি র্যাশফোর্ডকে দেখলাম, সে পরিষ্কার অফসাইডে ছিল, তাই আমিও ওকে অফসাইডের ফাঁদে রেখে এগিয়েছিলাম। শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত সে বলের পেছনে ছোটে এবং যখন বল তার সামনে, তখন থামে এবং সে ঠিক এদেরসনের (গোলরক্ষক) সামনে ছিল, গোল করার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু ব্রুনো ফের্নান্দেস তার উদ্দেশে চিৎকার করছিল (তাই সে থেমে যায়)।”
“আমি জানি সে (র্যাশফোর্ড) বলে স্পর্শ করেনি, কিন্তু সে ৩০ গজ পর্যন্ত বলের পেছনে ছুটেছে, শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত ছুটেছে। আমার কাছে এটা পরিষ্কার অফসাইড। এমনকি রেফারি এই পরিস্থিতিটা বিবেচনাও করল না; বছরের শুরুতে এমন বিষয়ের যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, তাতে এটা পরিষ্কার অফসাইড।”
এই ইস্যুতে ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগ অবশ্য কৌশলী উত্তর দিয়েছেন। তবে তিনিও মেনে নিয়েছেন, এভাবে তার দল গোল হজম করলে মেনে নিতে পারতেন না।
“আমি অন্যপ্রান্ত থেকে দেখছিলাম যে, এটা ব্যাকলাইনকে বিভ্রান্ত করেছে এবং সেটা স্পষ্ট। এটাও নিয়ম। আমার দল এমন গোল হজম করলে আমিও খুশি হতাম না। অন্যদিকের হতাশা বুঝতে পারছি, কিন্তু এটাও দেখতে পাচ্ছি যে রেফারি ভালো কাজ করেছেন।”
সিটি কোচ পেপ গুয়ার্দিওলার দৃষ্টিতে র্যাশফোর্ড পুরোপুরি অফসাইডে ছিলেন। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সিদ্ধান্ত নেওয়া রেফারিদের জন্য ‘কঠিন’ বলে খোঁচা দিয়েছেন তিনি। সিটির সাবেক ডিফেন্ডার মিকাহ রিচার্ডসের কাছেও এটি ‘বাজে সিদ্ধান্ত’।
ইংল্যান্ড ও আর্সেনালের সাবেক স্ট্রাইকার ইয়ান রাইটও মনে করেন অফসাইড দেওয়া ‘উচিত ছিল’। র্যাশফোর্ড অফসাইডে থাকার কারণে আকনজি থেমে ছিল বলেও মত দিয়েছেন তিনি। ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা গ্যারি লিনেকার তো বুঝেই উঠতে পারছেন না, র্যাশফোর্ড কোনো কিছুতে ‘হস্তক্ষেপ’ করেননি, এই দাবি কেন করা হচ্ছে।
ইউনাইটেডের সাবেক ডিফেন্ডারও রিও ফার্ডিন্যান্ড এবং মিডফিল্ডার পল স্কলস অবশ্য গোলের পেছনে র্যাশফোর্ডের বুদ্ধিমত্তা দেখছেন। ফার্ডিন্যান্ডের মতে র্যাশফোর্ড কোথাও প্রভাব রাখেননি।
“র্যাশফোর্ড কোনো ডিফেন্ডারকে ছুটতে, কোনো পজিশনে কিংবা ছকে কাউকে প্রভাবিত করেনি। এটা তার এবং ফের্নান্দেসের বুদ্ধিমত্তা। র্যাশফোর্ডের মুভে কোনো ডিফেন্ডার প্রভাবিত হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।”
বিটি স্পোর্টসে ফার্ডিন্যান্ডের মতো পন্ডিতের কাজ করা স্কলসও ফের্নান্দেসের ফিনিশিংয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
“সে কাউকে প্রভাবিত করেনি। এটা দারুণ যোগাযোগ এবং দুর্দান্ত ফিনিশ।”