আয়ারল্যান্ডে খেলতে গিয়ে বিরূপ অভিজ্ঞতার শিকার হলেও তা সাদরেই গ্রহণ করছেন ইংল্যান্ডের দুই ফুটবলার।
Published : 08 Sep 2024, 01:39 PM
বলে প্রথম স্পর্শ থেকেই দুয়োর শুরু। এরপর যতবার বল পেয়েছেন জ্যাক গ্রিলিশ ও ডেক্লান রাইস, যত সময় বল ছিল তাদের পায়ে, একই সুর ভেসে এসেছে গ্যালারি থেকে। ম্যাচজুড়ে এভাবেই দুয়ো শুনে গেছেন দুজন। তবু হাসিমুখেই মাঠ ছেড়েছেন দুই ইংলিশ ফুটবলার। ম্যাচ শেষে দুজনের কণ্ঠেই একই কথা, একটি বাজে কথাও তারা বলতে চান না দর্শকদের নিয়ে।
তাদের খুশির একটি কারণ অবশ্যই দলের জয় ও নিজেদের পারফরম্যান্স। ডাবলিনে শনিবার আয়ারল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে নেশন্স লিগের অভিযান শুরু করে আয়ারল্যান্ড। মজার ব্যাপার হলো, দুয়োর স্রোতের মধ্যে গোল দুটি করেছেন ওই রাইস ও গ্রিলিশই!
পারফরম্যান্সের পাশাপাশি আয়ারল্যান্ডের প্রতি অনুরাগের কারণেও তারা বিরক্ত হননি দর্শকের প্রতিক্রিয়ায়।
এই দুজনের প্রতি আইরিশ দর্শকের এই ক্ষোভের কারণও সহজেই অনুমেয়। দুজনেই যে আয়ারল্যান্ডের জার্সিতে খেলেছেন লম্বা সময়!
রাইসের জন্ম লন্ডনে হলেও তার শেকড় আয়ারল্যান্ডে। দাদা-দাদির সূত্রে আয়ারল্যান্ডে খেলার যোগ্য ছিলেন এই মিডফিল্ডার। ক্লাব ফুটবলে ওয়েস্ট হ্যামে খেললেও ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত আইরিশদের অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২১ দলে বেশ কিছু ম্যাচ তিনি খেলেছেন। এমনকি আয়ারল্যান্ড জাতীয় দলের হয়েও তিনটি ম্যাচ খেলেছেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে। এর মধ্যে দুটি ছিল বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ।
তবে ২০১৮ সালে ইংল্যান্ড দলে খেলার প্রস্তাব পেয়ে তার ভাবনায় পরিবর্তন আসে। এটা জানতে পেরে আয়ারল্যান্ডের তখনকার কোচ মার্টিন ও’নিল দল থেকে বাদ দেন তাকে। পরে রাইস চলে যান ইংল্যান্ডেই। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের জার্সিতে অভিষেক হয় তার।
গ্রিলিশের গল্পটাও কাছাকাছি। তার দাদা, নানা, নানি সবাই আইরিশ। ক্লাব ফুটবলে তখন অ্যাস্টন ভিলায় খেললেও বংশ পরিচয়ের সুবাদে আয়ারল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৮, অনূর্ধ্ব-২১ দলে তিনি খেলেছেন। রাইসের মতো অবশ্য আইরিশদের জাতীয় দলে কখনও খেলা হয়নি তার। জাতীয় দলে খেলার প্রস্তাব ছিল তার কাছেও। বয়সভিত্তিক দলগুলিতে খেলার সময় তিনি জোর দিয়েই বলেছিলেন, ভবিষ্যতে জাতীয় দলেও বেছে নেবেন আয়ারল্যান্ডকে। কিন্তু পরে তার সেই ভাবনা বদলে যায়। কোচ মার্টিন ও’নিল তাকে দলে ডেকেছিলেন। কিন্তু তিনি সেটি উপেক্ষা করে বেছে নেন ইংল্যান্ড।
এরপর অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু রাইস-গ্রিলিশকে যে আইরিশ দর্শকেরা ক্ষমা করেননি, সেটির প্রমাণ এই ম্যাচেই।
দুজনই দর্শকের এই আচরণ মেনে নিয়েছেন। একাদশ মিনিটে গোল করার পর উদযাপন করেননি রাইস। সেটির কারণ জানালেন তিনি ম্যাচ শেষে। আয়ারল্যান্ডের প্রতি ভালোবাসার কথাও জানালেন আর্সেনালের ২৫ বছর বয়সী মিডফিল্ডার।
“আমার দাদা-দাদি, বাবার দিকের পরিবারের সবাই আইরিশ। তারা কেউ এখন আর বেঁচে নেই এবং এখানে আর নেই। আমার তাই মনে হয়েছিল, উদযাপন করাটা হবে অসম্মানজনক। এজন্যই তা করতে চাইনি।”
“আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার দিনগুলিতে অসাধারণ সময় কেটেছে আমার। জাতীয় দলে, অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-২১ দলে খেলা, দারুণ সব স্মৃতি এখনও হৃদয়ে লালন করি। তাদের প্রতি একটি বাজে শব্দও বলার নেই আমার। তাদের প্রতি আমার শুভ কামনা থাকবে আর সবার মতোই।”
গ্রিলিশ জানালেন, দর্শকদের কাছ থেকে এমন অভ্যর্থনা পাবেন বলে আগেই অনুমান ছিল তাদের। কোনে ক্ষোভ নেই তারও।
“আমি ও ডেক্লান (রাইস) এমন কিছু আশা করছিলামই। বাজে কোনো কিছুই বলার নেই আমাদের। আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার সময়টুকু আমরা দুজনই উপভোগ করেছি।”
“আমি তো অবশ্যই উপভোগ করেছি এবং আমার পরিবারেও অনেক আইরিশ আছেন। আমার দিক থেকে তাই বিন্দুমাত্র বিদ্বেষ নেই।”
গ্রিলিশের জন্য এই ম্যাচ আরেকটু আবেগময় ছিল অন্য কারণেও। গত ইউরোর দলে জায়গা হয়নি তার। সেটিকে তিনি বলেছিলেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময়। সেই দুৎসহ স্মৃতির কথা বললেন তিনি আবারও। এবার নতুন শুরুতে বেশ উজ্জীবিত ম্যানচেস্টার সিটির ২৮ বছর বয়সী ফুটবলার।
“গ্রীষ্মের ওই সময়টা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে সময়। কারণ চোখের সামনে যা হচ্ছিল, দেখার অবস্থা ছিল না আমার।”
“খুবই কঠিন ছিল। তবে এটিই আমাকে আরও ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা জুগিয়েছে। ম্যাচ শেষে সমর্থকদের কাছ যাওয়া, তারা আমার নাম ধরে চিৎকার করছিল, এসব আমার কাছে অনেক বড় কিছু।”