‘অমরত্ব’ থেকে দুই ম্যাচ দূরে ম্যান সিটি

দ্বিতীয় ইংলিশ দল হিসেবে ট্রেবল জয়ের হাতছানি ম্যানচেস্টার সিটির সামনে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2023, 01:25 PM
Updated : 21 May 2023, 01:25 PM

পেপ গুয়ার্দিওলার কোচিংয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপাকে যেন নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে ম্যানচেস্টার সিটি। অসাধারণ ধারাবাহিকতায় তারা নিশ্চিত করে ফেলেছে আরেকটি লিগ শিরোপা। এবার ঐতিহাসিক ট্রেবল জয়ের হাতছানি তাদের সামনে। এজন্য জিততে হবে স্রেফ দুটি ম্যাচ। সেটা করতে পারলে ম্যানচেস্টারের ক্লাবটি ‘অমরত্ব’ পেয়ে যাবে বলে মনে করেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালান শিয়েরার। 

নটিংহ্যাম ফরেস্টের মাঠে শনিবার আর্সেনালের হারে লিগ শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যায় সিটির। দ্বিতীয় ইংলিশ দল হিসেবে তাদের সামনে ট্রেবল জয়ের সুযোগ। 

আগামী ৩ জুন এফএ কাপের ফাইনালে তারা খেলবে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে। এর সপ্তাহ খানেক পর ইস্তানবুলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ইন্টার মিলান। ইউরোপ সেরার স্বাদ এখনও পায়নি তারা। 

একই মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে পেরেছে কেবল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের হাত ধরে সেই কীর্তি গড়ে দলটি। সিটির সামনে সেটির পুনরাবৃত্তি করার দারুণ সুযোগ দেখছেন শিয়েরার। 

“তারা ট্রেবল জিততে পারলে তাদের নিয়ে আগামী অনেক বছর ধরে আলোচনা হবে। অসাধারণ এক অর্জন হবে, তাদের জন্য কী দারুণ এক সুযোগ। তারা অমরত্ব থেকে দুটি ম্যাচ দূরে।”

এবার সিটির লিগ শিরোপা নিশ্চিত হয়ে গেছে তিন ম্যাচ বাকি থাকতেই। অথচ মাস দুয়েক আগেও তাদের চেয়ে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে টেবিলের শীর্ষে ছিল আর্সেনাল। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথম লিগ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন পূরণের পথে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিল এমিরেটস স্টেডিয়ামের দলটি। প্রায় ২৫০ দিন শীর্ষে থাকার পর পথ হারিয়ে ফেলে মিকেল আর্তেতার দল। সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগায় সিটি। 

লিগে নিজেদের সবশেষ ৪২ পয়েন্টের মধ্যে ৪০ পয়েন্টই ঝুলিতে তুলে নিয়েছে সিটি। এই সময়ে ১৪ ম্যাচের মধ্যে ১৩টিই তারা জিতেছে, ড্র একটি। এর মধ্যে আছে আর্সেনালের বিপক্ষে ৩-১ ও ৪-১ গোলের জয়। এই সময়টায় ৩৯ গোল করার বিপরীতে তারা হজম করেছে ১০টি।

এই নিয়ে ছয় মৌসুমের মধ্যে পাঁচটি এবং টানা তিনটি লিগ শিরোপা জিতল সিটি। সবগুলিই ২০১৬ সালের মাঝামাঝি দায়িত্ব নেওয়া গুয়ার্দিলার হাত ধরে। 

সিটির আগে সবশেষ ছয় মৌসুমের মধ্যে পাঁচটি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এর মধ্যে। এর মাঝেই ১৯৯৯ সালে সেই ঐতিহাসিক ট্রেবল জয়। 

‘এই সিটির কোনো দুর্বলতা নেই’ 

সিটি এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠে সেমি-ফাইনালের ফিরতি লেগে ১৪ বারের রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে গুঁড়িয়ে। তার আগে শেষ আটের প্রথম লেগে তারা ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় ছয়বারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখকে।  শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে আরেক জার্মান ক্লাব লাইপজিগের বিপক্ষে তারা গোল করে ৭টি!

সিটির সাবেক গোলরক্ষক শেই গিভেন মনে করেন, গুয়ার্দিওলার বর্তমান দল আগের যেকোনো দলের চেয়ে শক্তিশালী। 

"তারা অসাধারণ। এমনকি জন স্টোনসের মতো ‘অখ্যাত নায়কও’ আছে, যে রাইট-ব্যাক, সেন্টার-ব্যাক বা মিডফিল্ডও সামলাতে পারে। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে একটা সময় বক্সের বাইরে সে অতিরিক্ত ব্যক্তি ছিল। তাকে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে দলে নেওয়া হয়েছিল এবং এই দলে সে এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।” 

"আমি দুর্বলতা দেখতে পাচ্ছি না (এই দলে)। (কেভিন) ডে ব্রুইনে, বের্নার্দো সিলভা, (রিয়াদ) মাহরেজ, পুরো মাঠেই তারকারা আছে।” 

গুয়ার্দিলার দলের এই অপ্রতিরোধ্য পথচলায় বড় অবদান আর্লিং হলান্ডের। ইংলিশ ফুটবলে নিজের প্রথম মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৮ ম্যাচে তিনি গোল করেছেন ৫২টি। এর মধ্যে প্রিমিয়ার লিগে ৩৩ ম্যাচে গোল ৩৬টি। গড়েছেন প্রিমিয়ার লিগ যুগে এক আসরে সবচেয়ে বেশি গোলের নতুন রেকর্ড। 

আগের রেকর্ডটি (৩৪ গোল) অ্যান্ডি কোলের সঙ্গে যৌথভাবে যার ছিল, সেই শিয়েরারের বিশ্বাস, সিটিকে অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা এনে দিতে পারেন হলান্ড। 

"আর্লিং হলান্ডকে কেনার মূল কারণই সিটিকে এই অবস্থানে নিয়ে আসা। তাদের ঝুলিতে একটি ট্রফি আছে, এবং তারা আরও দুটি ফাইনালে উঠেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের জন্য তাকে আনা হয়েছে, গোল করার জন্যই সে আছে, এটাই যেন তার জীবনের মানে।”

“আমি তার মনোভাবকে ভালোবাসি। সে খুব ক্ষুধার্ত এবং একটি গোলের অর্থ তার কাছে অনেক। আমি তার এই মনোভাবের অনেক প্রশংসা করি।” 

গত মার্চে লাইপজিগের বিপক্ষে সিটির ৭ গোলের ওই ম্যাচে হলান্ড একাই করেছিলেন পাঁচটি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে স্রেফ তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এই কীর্তি গড়েন নরওয়ের তরুণ ফরোয়ার্ড। ২০১২ সালে বার্সেলোনার হয়ে বায়ার লেভারকুজেনের বিপক্ষে লিওনেল মেসি ও ২০১৪ সালে শাখতার দোনেৎস্কের হয়ে বাতে বরিসভের বিপক্ষে লুইস আদ্রিয়ানো এই নজির গড়েছিলেন। 

একই ম্যাচে সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৩০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন হলান্ড। প্রতিযোগিতাটিতে ২৯ ম্যাচে তার গোল এখন ৩৫টি। সিটির হয়ে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের নতুন রেকর্ডও তিনি গড়েন ওই রাতেই। ভেঙে দেন টমি জনসনের ৯৪ বছরের রেকর্ড। ১৯২৮-২৯ মৌসুমে ৩৮ গোল করে রেকর্ডটি গড়েছিলেন সাবেক এই ইংলিশ স্ট্রাইকার। 

ইপিএলে সবসময়ের সেরা দল? 

আর্সেনালের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি দ্বৈরথের পরও সিটি এবার লিগ শেষ করতে পারে ১৩ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে। আসছে দুই ফাইনালেও তারা ফেভারিট। ইতিহাসের পাতায় তারা কোথায় থাকবে, সেটা বিতর্কের বিষয়। তবে সাবেক ইংলিশ স্ট্রাইকার গ্লেন মারের মতে, স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ১৯৯৯ সালের ট্রেবল জয়ী ইউনাইটেডের চেয়ে ভালো দল এই সিটি।

"হ্যাঁ এরা আরও ভালো দল। এটা আমি অনিচ্ছাসত্ত্বে বলছি, কারণ ছোটবেলায় আমি ইউনাইটেড ভক্ত ছিলাম। সেই প্রজন্মের দিকে তাকালে মনে হতো, এই কীর্তির (ট্রেবল জয়) পুনরাবৃত্তি হবে না। কিন্তু এই সিটি দল ভয়ঙ্কর। তারা সবাইকে পরাজিত করে এবং এগিয়ে যায়। তারা আবেগহীন এক জয়ী মেশিন। কিছুই তাদের দমাতে পারে না।” 

"যদি তারা এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং সম্ভাব্য ট্রেবল জিততে পারে, তাহলে পেপের বার্সেলোনার মতো তারা আলোচনায় থাকবে।”