‘গোলের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে আছি, পাগল হয়ে আছি’

ম্যাচ সামনে রেখে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় নিজের প্রতি ক্ষোভ জানালেন অকপটে। না পারার বৃত্ত ভেঙে এবার গোলের আনন্দে ডানা মেলতে আত্মবিশ্বাসী তিনি।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়ের সিলেট থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2022, 02:27 PM
Updated : 28 March 2022, 03:03 PM

বাংলাদেশের হয়ে ১৩ ম্যাচে মাত্র ১ গোল-সুমন রেজার না পারার হতাশা, গোলের জন্য তিনি কতটা ক্ষুধার্ত ও মরিয়া, তা বোঝাতে এই পরিসংখ্যানটুকুই যথেষ্ট।  ২৬ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডও তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো অপেক্ষায়। মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে

বেশ কিছুদিন ধরে দলের প্রথম পছন্দের ফরোয়ার্ড তিনি। কিন্তু প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারছেন ছিটেঁফোঁটা। একমাত্র গোলটি করেছিলেন গত অক্টোবরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিপক্ষে ১-১ ড্র ম্যাচে। এর বাইরে লাল-সবুজ জার্সিতে কিরগিজস্তান অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে একটি গোল আছে তার। কিন্তু এতটুকুতে তৃপ্তি কোথায়? সুমনও অতৃপ্ত। সবশেষ মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে শুরুর দিকে পাওয়া সুযোগ নষ্ট হওয়া সে অতৃপ্তি বাড়িয়েছে আরও।

প্রশ্ন: ফরোয়ার্ডদের নিয়ে কথা বলতে গেলে গোল না পাওয়ার প্রসঙ্গ আসেই। তো মঙ্গোলিয়া ম্যাচ নিয়ে কি ভাবছেন? মালদ্বীপে সুযোগ নষ্ট করা নিয়ে হতাশা নিশ্চয় বেশি?

সুমন রেজা: আসলে আমরা স্ট্রাইকাররা গোলের জন্য পাগল হয়ে আছি। গোল না হওয়া পর্যন্ত শান্তি নেই। মালদ্বীপের বিপক্ষে সুযোগ নষ্ট করেছি, ওই রাতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারিনি। যদি গোলটা করতে পারতাম, তাহলে হয়ত ভালো কিছু হতো। যেদিন গোল করতে পারি, সেদিন খুব ভালো লাগে। গোল না পেলে আর কিছুই ভালো লাগে না।

প্রশ্ন: বেশি চাপ নেওয়ার কারণেই কি সুযোগগুলো নষ্ট হয়ে যায়?

সুমন রেজা: চাপ নিয়ে মাঠে নামি- বিষয়টা এরকম না, আবার সবসময় যে খুব বেশি সুযোগ পাই, সেটাও না। হুট করে সুযোগ আসে, হয় গোল করি, না হয় মিস করি। আসলে আমাদের ফরোয়ার্ডদের সামনে সুযোগই আসে কম। যখন আপনি একটা ম্যাচে পাঁচ-ছয়টা সুযোগ পাবেন, তখন গোল হবেই। কিন্তু আমরা খুব বেশি সুযোগ পাই না। হয়ত একটা-দুটো সুযোগ পাচ্ছি, কখনও গোল পাচ্ছি, কখনও পাচ্ছি না। বিল্ড-আপ খেলানোর চেষ্টা বর্তমান কোচ করাচ্ছেন, দেখা যাক কী হয়।

প্রশ্ন: নেপালের বিপক্ষে প্রথম এবং সবশেষ গোল, এরপর নষ্ট করেছেন অনেক সুযোগ। এসব বিষয় নিয়ে কোনো কাজ করেছেন কি? কখনও মনোবিদের কাছে গিয়েছেন মানসিক দিকের উন্নতির জন্য?

সুমন রেজা: নেপাল ম্যাচের পর শ্রীলঙ্কায় (চার জাতি ফুটবল টুর্নামেন্ট) আমি এমন কোনো সুযোগ পাইনি যেটা থেকে গোল করব। কিছু বল পেয়েছিলাম, সেগুলো নিয়ে চেষ্টা করেছি কিন্তু হয়নি। কিরগিজস্তানের বিপক্ষেও সুযোগ মিস করেছি। তবে সবসময় গোল করার চেষ্টা করি। কিন্তু অনুশীলনে যেটা পারছি, সেটা কোনো কারণে ম্যাচে হচ্ছে না। এটা যখন মাঠে হওয়া শুরু হয়ে যাবে, তখন ঠিক হয়ে যাবে।

আমরা ওভাবে কোনো মনোবিদের সঙ্গে কাজ করি না। সিনিয়রদের কাছ থেকে পরামর্শ নেই। আলফাজ ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা হয়। তারা নানা বিষয় বলেন, পরামর্শ দেন। কখনও পুরানো গোলের ভিডিও দেখি, এগুলো মানসিকভাবে অনুপ্রাণিত করে। মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে আলফাজ ভাইয়ের দুটো গোল দেখেছি।

প্রশ্ন: উত্তর বারিধারা থেকে এবার বসুন্ধরা কিংসে এসে কোচ হিসাবে পেয়েছেন অস্কার ব্রুসনকে। নিজের খেলায় কোনো উন্নতি দেখছেন কি?

সুমন রেজা:  অস্কার সবসময় আমাদের ফিনিশিং নিয়ে কাজ করেন। কিভাবে ডিফেন্ডারকে বোকা বানাতে হবে, কিভাবে রানিং করতে হবে, এগুলো নিয়ে কাজ করেন। উত্তর বারিধারা থেকে কিংসে আসাতে টেকনিক্যাল দিকে উন্নতি হয়েছে এবং সেটা আমি এখন উপলব্ধিও করতে পারি।

প্রশ্ন: কিন্তু কিংসে আসার পর তো আপনার ম্যাচ টাইম কমেছে। লিগে ৯ রাউন্ডের মধ্যে ৭ ম্যাচে খেলেছেন মাত্র ৩২৪ মিনিট।

সুমন রেজা: কিংসে আসার পর খুব বেশি ম্যাচ টাইম পাইনি, উত্তর বারিধারায় যেটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। সবগুলো ম্যাচ খেলতাম, বেশি ম্যাচ টাইম পেতাম। খুব খোলামনে খেলার সুযোগ পেতাম, সতীর্থরা সব বল আমাকেই দিত, আমিই খেলতাম। কিংসে আমি সবকিছু নই। এখানে সবাই ভালো খেলোয়াড়। যার যার নিজস্ব দায়িত্ব আছে। আক্রমণভাগে আরও অনেকে থাকায় সুযোগগুলোও ভাগাভাগি হয়। উত্তর বারিধারায় কিন্তু এটা ছিল না, সুযোগগুলো সবই আমার কাছে আসত।

গত বছর যে পরিমাণ সুযোগ পেয়েছি, এবার অত সুযোগ আমার কাছে আসেনি। আসলে হয়ত আরও বেশি গোল পেতাম। কিংসে হয়ত কোনো ম্যাচে ৪০ মিনিট খেলেছি, কোনোটাতে ৩০ মিনিট, কোনোটাতে ২০ মিনিট-এভাবে। যদি সবগুলো ম্যাচ পুরোপুরি খেলতে পারতাম, তাহলে বলতে পারতাম কিংসে আমার খুব ভালো সময় কাটছে। উত্তর বারিধারায় একরকম খেলতাম, কিংসে টিম গেম খেলি।

প্রশ্ন: মঙ্গোলিয়া ম্যাচে তো আপনার কাছে প্রত্যাশা থাকবে বেশি। যেহেতু মতিন মিয়া, মাহবুবুর রহমান সুফিল নেই। চাপ অনুভব করছেন কী?

সুমন রেজা: এসব নিয়ে আমি চাপ অনুভব করি না। যদি ওরা থাকত, তাহলে ওরাও দেশের জন্য খেলত, আমিও দেশের জন্য খেলব। ওরাও ভালো খেলোয়াড় এবং নিজেদেরকে প্রমাণ করেছে। কিন্তু এবার কোচ তাদেরকে নেয়নি…হয়ত ক্লাবে বেশি ম্যাচ টাইম পাইনি বলে কোচ তাদের বিবেচনা করেনি। এসব নিয়ে আমি কোনো চাপ নেই না। আমি নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে খেলব, এটাই আমার ভাবনা।

প্রশ্ন: গোলের সুযোগ পর্যাপ্ত না পাওয়ার কথা বলছিলেন। গোল না পাওয়ার দায় তাহলে কিছুটা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারদের উপরও পড়ে।

সুমন রেজা: দেখুন, আমাদের যারা আছে তারাও ভালো, কিন্তু আরও ভালো অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার থাকলে আমাদের আরও ভালো হতো। একই সঙ্গে বিষয়টা এমন যে, আমার চেয়ে ভালো ফরোয়ার্ড থাকলে দলের জন্য আরও ভালো হবে। ভালোর তো আর শেষ নেই। এখন আমাদেরকেই আরও ভালো খেলোয়াড় হতে হবে। মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে সেটা করেও দেখাতে হবে।

প্রশ্ন: একই চাওয়া নিয়ে মালদ্বীপে গিয়েছিলেন, জয় মেলেনি। সিলেটে মিলবে…কতটা আত্মবিশ্বাসী।

সুমন রেজা: আসলে কোচ যেটা চাচ্ছে, সেটা আমরা হয়ত করতে পারছি না। কিন্তু তিনি খুব চেষ্টা করছেন। খুবই আন্তরিক। সবসময় অনুপ্রাণিত করেন; আরও ভালো করার তাগিদ দেন। মালদ্বীপে জয় পাইনি, কিন্তু এবার ঘরের মাঠে খেলা; ইনশাল্লাহ আমরা ভালো খেলব এবং জিতব।