মঙ্গোলিয়ার চোখ দাম্মামে, বাংলাদেশের সিলেটেই

অদ্ভূত এক কথা সংবাদ সম্মেলনে বলে বসলেন মঙ্গোলিয়া কোচ ইচিরো ওতসুকা। তার দলের সবার নামই নাকি জানেন না তিনি! কিন্তু জানেন ২১ বছর আগে দাম্মামের সেই ‘ঐতিহাসিক’ ড্রয়ের কথা। ঘুরে-ফিরে সেই ম্যাচের কথা বললেন দলটির কোচ ও অধিনায়ক। বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা অবশ্য চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো কিছু বলেননি। সুদূর অতীতের ইতিহাসও ঘাটলেন না। তার দৃষ্টি আবদ্ধ সিলেটে। যে আঙিনায় ফুটবলের রঙ-তুলির আচঁড়ে তিনি আঁকতে চান বাংলাদেশ কোচ হিসেবে প্রথম জয়ের ছবি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2022, 02:58 PM
Updated : 28 March 2022, 03:11 PM

সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টায় প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও মঙ্গোলিয়া। ২০০১ সালের পর প্রথম মুখোমুখি হবে দল দুটি। সিলেটে তো বটেই, বাংলাদেশেই এই প্রথম এসেছে মঙ্গোলিয়া দল।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে কোচ হিসেবে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুজনের মিল আছে। দুজনই হেরেছেন। ওতসুকির দল লাওসের কাছে ১-০ ব্যবধানে, কাবরেরার দল মালদ্বীপের কাছে ২-০ গোলে। স্বাভাবিকভাবে প্রথম জয়ের খোঁজে আছেন তারা। দুজনের অনুপ্রেরণার উৎস অবশ্য দুই দিকে। মঙ্গোলিয়া কোচের দৃষ্টি সুদূর দাম্মামে, বাংলাদেশ কোচ তাকিয়ে ঘরের মাঠ সিলেটে।

এ পর্যন্ত সিলেটে চারটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সবগুলোই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে এবং প্রতিটি ম্যাচের স্কোরলাইন ১-০। ২০১৫ সালের আসরে মালয়েশিয়ার কাছে হারের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতেছিল দল। ২০১৮ সালে লাওসের বিপক্ষে জয়ের পর ফিলিস্তিনের কাছে হেরেছিল। মানে ‘দুটি পাতা-একটি কুঁড়ির’ শহরে আনন্দ-বিষাদ দুটোই সঙ্গী হয়েছে।

প্রাপ্তির পরিসংখ্যান এবার বাড়িয়ে নেওয়ার লক্ষ্য কাবরেরার। দলের আক্রমণভাগে মতিন মিয়া, মাহবুবুর রহমান সুফিলের মতো অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড, রক্ষণে তপু বর্মনের মতো নির্ভরতা না থাকলেও আশা হারাচ্ছেন না এই স্প্যানিশ কোচ।

“গতকাল (রোববার) প্রথমবার এ মাঠে অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছি। যেটা খেলোয়াড়দের উন্নতিতে অনেক কাজে দিয়েছে। মাঠ বেশ ভালো; ভালো ফুটবল খেলার জন্য যেটা গুরুত্বপূর্ণ। জয়ের লক্ষ্য নিয়েই আমরা মাঠে নামব। জয়টা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। মালদ্বীপেও আমরা একই লক্ষ্য নিয়ে গিয়েছিলাম (কিন্তু পূরণ হয়নি)। আমরা অবশ্যই দেশকে জয় এনে দিতে চাই।”

জিততে চান ওতসুকাও। তবে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রস্তুতির ঘাটতি, শিষ্যদের নাম না জানার বিস্ময়কর কথা শোনালেন। কিন্তু অধিনায়ক টিসেন্ড আইয়ুশ ২০০১ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দাম্মামের সেই ২-২ ড্রয়ের প্রসঙ্গ বলার পর জাপানি কোচের কণ্ঠও গেল বদলে। দৃঢ় কণ্ঠে দিলেন স্বাগতিকদের রুখে দেওয়ার বার্তা।

“মার্চ থেকে অনুশীলন শুরু করেছি। মাত্র ৭ জন খেলোয়াড় নিয়ে অনুশীলন শুরু করেছিলাম। এমনকি সব খেলোয়াড়ের নামও আমি জানি না। বুঝতেই পারছেন, আমাদের অনুশীলনটা একদমই ভালো হয়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে এ ম্যাচটি আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, খেলোয়াড়দের জন্যও তাই। আমি জিততেই চাই; তবে ড্র হলে মন্দ হবে না।”

দাম্মামে বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছিল মঙ্গোলিয়া। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের গোলে ড্র করেছিল তারা। দেশটির ফুটবল ইতিহাসে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সেটিই ছিল প্রথম পয়েন্ট পাওয়া।

গর্বভরে সেই স্মৃতি আওড়ালেন আইয়ুশ। বললেন ফুটবলার হয়ে ওঠার স্বপ্নও ডানা মেলেছিল ওই ম্যাচ দেখে। এবার ছাপিয়ে যেতে চান মরুভুমির মাঠের অর্জনকে। সিলেটে আইয়ুশের চাওয়ার পূরণের পথ আগলে দাঁড়াতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূইয়াও।

“আমি এই স্টেডিয়াম সবসময় পছন্দ করি। মনে হয়, সবসময় দর্শকরা খুব কাছে আছে। আমরা সবাই চাই দর্শক মাঠে আসুক। আমরা ভালো খেলা উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব। কেবল সিলেট নয়, সারা দেশই আমাদের কাছে ভালো ফুটবল প্রত্যাশা করে। সেটা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমরা।”