চার ম্যাচে ৫ গোল নিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বোচ্চ গোলদাতা। এর মধ্যে দুটি আবার তিন গোল হজম করে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভারতকে হারানোর ম্যাচে করা। তরুণ ফরোয়ার্ড জাফর ইকবালের মধ্যে আগামীর তারকাকে দেখছে বাংলাদেশ। আর সবার মতো প্রশংসা করছেন তার ক্লাব চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ সাইফুল বারী টিটোও। চান গোলের ক্ষুধাটা ধরে রাখুক তার তরুণ শিষ্য।
Published : 27 Sep 2017, 10:52 PM
সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের বিপক্ষে জাফরের দুটি গোল নিখুঁত হেডের ফল। ২-০ ব্যবধানে মালদ্বীপকে হারানো ম্যাচে দলকে এগিয়ে নেওয়া গোলটি বাঁ পায়ের মাপা শটের। সবশেষ ভুটানকে হারানো ম্যাচে দুইবার লক্ষ্যভেদ করে ৫ গোল নিয়ে প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতা চট্টগ্রাম আবাহনীর এই ফরোয়ার্ড। জাফরের মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা দেখছেন টিটো।
“গত বছরই সে যেহেতু জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে, সেহেতু আমরা তাকে দারুণ সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছি। আমি আশা করি, গোল পাওয়ার ধারাবাহিকতা সে সিনিয়র টিমে ধরে রাখবে। সে এখনও তরুণ। আমার ধারণা সে আমাদের ফুটবলের জন্য ভালো একটা সম্ভাবনা। অনেক কিছু দেওয়ার ক্ষমতা সে রাখে।”
“ওর মধ্যে ক্ষুধা থাকে সবসময়। খুব ভালো মানসিকতার ছেলে। ওর কোনো কিছুতেই মন খারাপ হয় না। ভেঙে পড়ে না। লড়াই করার জন্য সবসময় প্রস্তুত। আমি চাই, জাফর ক্ষুধাটা ধরে রাখুক। আমি খুব আশাবাদী যে, ওর মানসিকতার মধ্যে কোনো পরিবর্তন হবে না। আরও পাওয়ার ক্ষুধাটা ধরে রাখতে পারলে আমার ধারণা দেশের মধ্যে ও সেরা খেলোয়াড় হবে।”
“জাফরের যেটা সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা, সেটা হচ্ছে ওর গতি এবং গোল করার ক্ষমতা। কিন্তু যেখানে ওকে উন্নতি করতে হবে, সেটা হচ্ছে ফুটবল ইনটেলিজেন্স আর টেকনিক্যাল ডিসিশন মেকিং। মানে সতীর্থের পায়ে যদি বল থাকে, তাহলে আমি কোথায় দাঁড়াব, কোথায় গেলে সাপোর্টটা ভালো দেওয়া যাবে বা আমাদের পায়ে বল না থাকলে কি করতে হবে, সেগুলো আরও ভালোভাবে জানতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রগুলোতে জাফরকে আরও নিখুঁত হতে হবে।”
চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে সেরা একাদশে সে অর্থে সুযোগ মেলে না জাফরের। টিটো জানালেন বেঞ্চে বসে থাকলেও তার মনটা দমে যায় না কখনও। বরং শেখার জন্য থাকে উদগ্রীব থাকে সবসময়।
“ওর ভেতরে শেখার আগ্রহটা প্রবল। দেখুন আমরাও তো জাতীয় দলে খেলে এসেছি। তো আমরা এখন জানি, কোন জিনিসটা সেই সময় করলে আমাদের ক্যারিয়ার আরও ভালো হতে পারত। ওই বিষয়গুলো নিয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করি এবং বলি এটা করবে-এটা করবে না। সে ভীষণ মনোযোগ দিয়ে শোনে এবং সে অনুযায়ী চলার চেষ্টা করে। এটাও ওর ভালো দিক।”
“আসলে আমাদের একটা সমস্যা আছে, আমরা কারো পারফরম্যান্স দেখে দ্রুতই তৃপ্ত হয়ে যাই। কিন্তু এই পর্যায়ে আমাদের বলতে হবে- ঠিক আছে, যা করছ ভালো কিন্তু এর চেয়ে ভালো করতে হবে। আমি বেশি প্রশংসা দিয়ে ওকে ভাসিয়ে দিতে চাই না।”
“ছেলেদের সব সময় মনে রাখতে হবে, বয়স যেহেতু বেশি নয়, তোমরা খুব বেশি খেলোনি। তোমাদের আরও অনেক পথ যেতে হবে। তোমাদের অনেক কিছু দেওয়ার আছে। অল্পতে কোনোভাবেই খুশি হওয়া যাবে না। দেখা যায় যে, কেউ যদি জাতীয় দলে সুযোগ পায়, সে মনে করে তার লক্ষ্যপূরণ হয়ে গেছে। সব পেয়ে গেছে। এটা খুব অবাস্তব ভাবনা। বিশ্বে যারা ভালো করে, তারা উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য চেষ্টা করে।”
ভারতের বিপক্ষে নেপালের জয়ে শিরোপা জেতা হয়নি বাংলাদেশের। তবে উত্তরসূরিদের রানার্সআপ হওয়াতেও খুশি টিটো।
“চার ম্যাচে নয় গোল বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় বিষয়। আমরা খুবই খুশি যে, অনূর্ধ্ব-১৮ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অনেক ভালো করছে। দলের পারফরম্যান্সেও আমি খুশি। এখন আমাদের সচেতন থাকতে হবে, পরেরবার এই টুর্নামেন্টে কারা খেলবে। কদিন আগে কাতারে অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইও দেখলাম। কয়েকজনের খেলা আমার খুব আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।”