রোনালদোর স্বপ্নপূরণের শেষ বাধা ছন্দময় ফ্রান্স

দেশের জন্য একটি শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর বহু দিনের। এই লক্ষ্য অর্জনের শেষ ধাপে এসে দাঁড়িয়ে আছেন এই ফরোয়ার্ড। পুরো পর্তুগাল দলেরই বিশ্বাস, এবার তারা পারবে, এখন তাদের সাফল্য অর্জনের সময়। তবে স্বপ্ন আর বিশ্বাসের পূর্ণতা দিতে তাদের পেরোতে হবে ছন্দময় ফ্রান্সের বাধা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2016, 03:31 PM
Updated : 12 July 2016, 12:06 PM

সাঁ-দেনিতে ইউরোর শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি শুরু হবে আগামী রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়।

ফেভারিটদের মধ্যে থেকেই এবারের টুর্নামেন্ট শুরু করে স্বাগতিক ফ্রান্স। গ্রুপ পর্বে নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে না পারলেও নকআউট পর্বে অসাধারণ খেলে ফাইনালে উঠে দিদিয়ে দেশমের দল। বিশেষ করে কোয়ার্টার-ফাইনালে আইসল্যান্ডকে ৫-২ গোলে উড়িয়ে দিতে অসাধারণ ফুটবল খেলে তারা।

এর পর সেমি-ফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে ২-০ গোলে হারায় তারা। দুটি গোলই করেন ৬ গোল নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পথে বেশ এগিয়ে থাকা অঁতোয়ান গ্রিজমান।

অন্যদিকে গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচই ড্র করে সেরা চারটি তৃতীয় স্থানের দলের একটি হয়ে নক-আউট রাউন্ডে উঠে পর্তুগাল। শেষ ষোলোতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল পায়নি। অতিরিক্ত সময়ে রিকার্দো কারেসমার গোলে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে তারা। এর পর পোল্যান্ডকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেন রোনালদোরা। 

সেমি-ফাইনালে ওয়েলসের বিপক্ষেই কেবল কিছুটা আলো ছড়াতে পারে তারা। ২-০ ব্যবধানে জেতা এই ম্যাচে অবশ্য ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেন রোনালদো। টুর্নামেন্টের বেশিরভাগ ম্যাচেই নিজের ছায়া হয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা ফরোয়ার্ড ওয়েলসের বিপক্ষে দলকে এগিয়ে দেওয়া গোলটি করেন। নানির করা অপর গোলটিতে সহায়তাও করেন তিনি।

ওয়েলসের বিপক্ষে দলের ভালো পারফরম্যান্স আর এ পর্যন্ত খেলা ৬ ম্যাচে তিনটি গোল পাওয়া রোনালদোর ফর্মে ফেরার ইঙ্গিতে উচ্ছ্বসিত পুরো পর্তুগাল দল। অধিনায়ক রোনালদোর সঙ্গে তার সতীর্থরাও এখন বেশ আত্মবিশ্বাসী।

স্বপ্ন পূরণের বিষয়টি উল্লেখ করে রোনালদো বলেন, “ক্লাব আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমি সবকিছু জিতেছি, পর্তুগালের হয়ে কিছু জেতাটা হবে দারুণ এক অর্জন।”

“আমি বিশ্বাস করি যে এটা সম্ভব, আমার সতীর্থরাও তাই করে এবং পুরো দেশই এটা বিশ্বাস করে। আমাদের ভাবনাটা ইতিবাচক থাকতে হবে কারণ, আমি বিশ্বাস করি, রোববারই প্রথমবারের মতো পর্তুগাল বড় কোনো শিরোপা জিতবে।”

ফ্রান্সের বিপক্ষে মুখোমুখি লড়াইয়ের ইতিহাস আর পরিসংখ্যান অবশ্য পর্তুগালের পক্ষে কথা বলে না। এই নিয়ে বড় কোনো টুর্নামেন্টে চতুর্থবারের মতো দেখা হতে যাচ্ছে পর্তুগাল-ফ্রান্সের। আগের তিনটি ম্যাচই ছিল সেমি-ফাইনালে-১৯৮৪ ও ২০০০ সালের ইউরো আর ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে। তিনটি ম্যাচেই হেরেছিল পর্তুগাল। সবশেষ ১০টি লড়াইয়ের সবকটি ম্যাচেই পর্তুগালের বিপক্ষে জয় পেয়েছে ফ্রান্স।”

ম্যাচটি ঘরের মাঠে বলে ইতিহাস থেকেও প্রেরণা নিতে পারে ফ্রান্স। ইউরোতে দেশটি তাদের প্রথম মুকুটটি পায় ১৯৮৪ সালে, নিজেদের মাঠে। এর পর ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপও জেতে তারা স্বাগতিক হিসেবে। দেশের মাটিতে আরেকটি বড় টুর্নামেন্ট, ফরাসিরা স্বপ্ন দেখছে এবারও শিরোপা ঘরে তুলবে তাদের দল।

রোনালদো মানছেন এই ম্যাচে ফ্রান্সই ফেভারিট। তবে আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই তার।

“ফ্রান্স আমাদের চেয়ে কিছুটা ফেভারিট, কিন্তু আমি মনে করি, পর্তুগালই জিতবে।”

মিডফিল্ডার জোয়াও মুতিনিয়োও অধিনায়কের সুরে কথা বলেন।

“আমরা ফেভারিট নই কিন্তু আমরা মনে করি, আমরা জিততে পারি। ফ্রান্স শক্তিশালী কিন্তু আমরা এই কাপটা চাই।”

এই ক্ষেত্রে একটি পরিসংখ্যান অবশ্য পর্তুগালকে অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে। কোচ ফের্নান্দো সান্তোসের অধীনে ১৩ ম্যাচে অপরাজেয় পর্তুগাল। এর মধ্যে ৯টিতে জয় পায় তারা, বাকি চারটি ম্যাচ হয়েছে ড্র।

পর্তুগাল-ফ্রান্স ম্যাচটিতে রোমাঞ্চকর একটি দ্বৈরথও দেখতে পাবে ফুটবল বিশ্ব। অনেকেই মনে করেন রোনালদো আর গ্রিজমানের সেই দ্বৈরথে যিনি জিতবেন শিরোপা ঘরে তুলতে তার দলই।

ফ্রান্সকে হারাতে হলে পর্তুগালকে অবশ্যই রুখতে হবে গ্রিজমানকে। এ ক্ষেত্রে তাদের নিশ্চিত করতে হবে আতলেতিকো মাদ্রিদের এই ফরোয়ার্ড যেন তার সতীর্থদের কাছ থেকে যথেষ্ট বল না পান।

তবে গ্রিজমানকে নিষ্প্রভ করে রাখতে পারলেও টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে অসাধারণ খেলা দিমিত্রি পায়েত মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন। অলিভিয়ে জিরুদও তার সামর্থ্যের প্রমাণ এরই মধ্যে রেখেছেন।

সুন্দর খেলা উপহার দিতে না পারলেও জিততে হবে-এই মন্ত্র আর দারুণ টিম স্পিরিটে ভর করে এগিয়ে চলছে পর্তুগাল। এমনকি দলে চোট থাকার পরও সান্তোস তার পর্তুগালকে ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলাচ্ছেন। চোটের কারণে ওয়েলসের বিপক্ষে ছিলেন না রিয়ালের ডিফেন্ডার পেপে। এই ম্যাচেও তাকে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে তবে সেমি-ফাইনালে ব্রুনো আলভেস তার অভাব খুব কমই বুঝতে দেন।

সেমি-ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ফ্রান্সের ম্যাচ থেকে দিদিয়ে দেশমের দলের একটি দুর্বলতা হয়ত খেয়াল করে থাকবেন সান্তোস। ফ্ল্যাঙ্কে দুর্বলতা আছে ফ্রান্সের। বিশেষ করে বাঁ দিকে, যেখানে পাট্রিস এভরা খেলেন।

ফুল-ব্যাকদের উইঙ্গারের মতো ব্যবহার করে জার্মানি ফ্রান্সকে অনেক নিচে নিয়ে গিয়েছিল। জসুয়া কিমিচ ও ইউনাস হেক্টরকে প্রচুর জায়গা দিয়ে ফ্রান্সের মাঝমাঠের জুটি পল পগবা আর ব্লেইস মাতুইদি ম্যাচের বেশিরভাগ সময় জুড়েই যেন ছায়া তাড়া করে বেড়ান।

পর্তুগালের ফুল-ব্যাক রাফায়েল গেরেইরো ও সেদ্রিক সোয়ারেস এই কাজটা করার জন্য যথেষ্ট ভালো। আর এটাই দেশমকে বেশি আক্রমণাত্মক ৪-২-৩-১ ফর্মেশন থেকে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে ফিরে যেতে বাধ্য করতে পারে। আর তাতে দলে জায়গা পাবেন রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার এনগোলো কান্তে।

ওয়েলসের বিপক্ষে উইলিয়াম কার্ভালিয়োর জায়গায় নামা দানিলো রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে বেশ কার্যকরী। তবে জোয়াও মারিও ও আদ্রিয়েন সিলভা রোনালদো আর তার আক্রমণের সঙ্গী নানিকে তেমন নিখুঁত পাস দিতে পারছেন না। ফাইনালে তাই পর্তুগালের শুরুর একাদশে থাকতে পারেন জোয়াও মুতিনিয়ো।

এসব থেকে বোঝা যায়, পর্তুগাল দলটি এখন আর পুরোপুরি রোনালদো-নির্ভর নয়। তিনি যখন নিষ্প্রভ থাকেন, তখন অন্যরা জ্বলে ওঠে।

পোল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে ১৮ বছর বয়সী মিডফিল্ডার রেনাতো সানচেস অসাধারণ খেলে নজর কেড়েছিলেন। ফুটবল পণ্ডিতদের প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া ৩ গোল করে নানি এখন পর্যন্ত যৌথভাবে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা।

তবে নিজের স্বপ্নটি পূরণ করতে হলে শেষ পর্যন্ত জ্বলে উঠতে হবে রোনালদোকেই। আর এটা তিনি পারবেন বলেই বিশ্বাস করেন।