কোপা আমেরিকা
কোনো কিছু না জেনেই স্রেফ একটা ছবি নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা করায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ দরিভাল জুনিয়র, তার কাছে এসব কথাবার্তা ‘হাস্যকর ও অযৌক্তিক’
Published : 09 Jul 2024, 12:22 PM
কোপা আমেরিকা থেকে ছিটকে পড়ার যন্ত্রণা তো আছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে একটি ছবি নিয়ে ফুটবলবিশ্বে অপমানজনক নানা কথা। দরিভাল জুনিয়রের যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা লেগেছে। কোনো কিছু বিস্তারিত না জেনেই স্রেফ একটি ছবিকে ঘিরে এত আলোচনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ ব্রাজিল কোচ। তার কাছে এসব আলোচনা পুরোপুরিই হাস্যকর ও অযৌক্তিক। পুরো ব্যাপারটির বিশদ ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।
কোপা-আমেরিকার কোয়ার্টার-ফাইনালে টাইব্রেকারে উরুগুয়ের কাছে হারার পর একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, টাইব্রেকারের আগে ব্রাজিলের ফুটবলাররা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। কিন্তু সেই দলীয় বৃত্তে নেই দরিভাল জুনিয়র। ব্রাজিলের কোচকে দেখা যায় পেছনে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাতে।
ঘটনার ভিডিও ক্লিপও একই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। দরিভালকে দেখা যায় দলীয় বৃত্তের পেছন থেকে উঁকিঝুঁকি দিতে। এক পর্যায়ে আঙুল উঁচিয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করেন তিনি। এরপর মাথা চুলকান।
উরুগুয়ের কোচ মার্সেলো বিয়েলসার একটি ছবিও দেখা যায়, যেখানে তিনি হাতে কাগজ নিয়ে দলীয় বৃত্তে দাঁড়িয়ে দলকে কিছু বলছিলেন।
এই দুটি ছবি মিলিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রবল সমালোচনা ও কৌতুক করা হয় দরিভালকে নিয়ে। তার ব্যক্তিত্ব ও দলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়। শুধু সামাজিক মাধ্যমে নয়, সংবাদমাধ্যমেও অনেক বিশেষজ্ঞ একইরকম প্রশ্ন তোলেন।
উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ছোট করে এটির ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন দরিভাল। কিন্তু সেটা যথেষ্ট হয়নি। এই ছবি ছড়িয়ে পড়তে থাকে দাবানলের মতো। পরে গ্লোবো ইস্পোর্তে-কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলেন তিনি।
“তারা যা করেছে, আমার কাছে পুরোপুরি হাস্যকর লেগেছে। তারা আমাকে সরাসরি প্রশ্ন করার প্রয়োজনই বোধ করেনি… এমনকি এই ব্যাপারে কিছুই জানতাম না আমি। স্রেফ একটা ছবিকে তারা এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছে যেন এটা ভিনগ্রহের কোনো ব্যাপার। দলে আমার নিয়ন্ত্রণ আছে এবং সব গোছানো হচ্ছে, এটা বোঝাতে কি হাতে ক্লিপবোর্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে আমাকে?”
“দুঃখিত… তারা যারা করেছে, তা পুরোপুরি অযৌক্তিক। সামান্য একটি ছবি নিয়ে তারা এভাবে বিতর্ক ছড়িয়েছে।”
শুধু ফুটবল কোচ হিসেবেই নয়, একজন মানুষ হিসেবে প্রাপ্য সম্মানটুকু না পাওয়াতেও সমালোচকদের একহাত নিয়েছেন ৬২ বছর বয়সী এই কোচ।
“পেশাদার একজন মানুষকে জিজ্ঞেস না করেই স্রেফ একটি ছবিকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা… দুঃখিত, এটা পুরোপুরি অবিবেচকের মতো কাজ। যারা এটা নিয়ে এত কথা বলেছে, তাদের উচিত একজন পেশাদার মানুষকে নিয়ে মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া।”
“পেশাদার হিসেবেও যদি সম্মান না করে, সবকিছুর ওপরে তারা আমাকে একজন পারিবারিক মানুষ হিসেবেও দেখতে পারে, যে সবাইকে ও সবকিছুকে সম্মান করে। যা হয়েছে, এতে আমি মর্মাহত। খুবই বিরক্ত। যদিও পেশাদারদের জন্য এটা বড় কিছু নয়। এই ধরনের অনেক অভিজ্ঞতাই হয়।”
ব্রাজিলের ফুটবলে ২২ বছর ধরে কোচিং করিয়ে আসা এই কোচ জানালেন, টাইব্রেকারের আগে কখনোই তিনি দলীয় বৃত্তে থাকেন না। এই সময়টায় তিনি ফুটবলারদের তাদের মতো করেই থাকতে দেন।
“যত পেনাল্টি শুটআউটে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম, কখনোই দলীয় বৃত্তে প্রবেশ করিনি। প্রস্তুতির সবকিছু ম্যাচের আগেই করা হয়েছে। ওই মুহূর্তে আমার আর কিছু বলার নেই। যদি ভিন্ন কিছু চোখে পড়ে, কোনো সমস্যা বা অসুবিধা কিংবা শেষ মুহূর্তে কোনো বদল আসে, তাহলে অন্য কথা। সেরকম কিছু তো এখানে হয়নি। সব নির্দেশনা আগেই দেওয়া ছিল।”
“ম্যাচের শেষ সময়টাতেই আমরা ঠিক করে ফেলি, পেনাল্টি কে কে নেবে। সাধারণত এই সময়টায় আমি একটু দূরেই থাকি। অন্য ম্যাচগুলির ছবি-ভিডিও দেখলে জানতে পারবেন, এই সময়টায় সাধারণত সম্পৃক্ত হতে চাই না আমি। এই সময়টা শুধুই ফুটবলারদের। তাদের নিজেদের সময়। এখানে অংশ নিতে আমার ভালো লাগে না এবং সাধারণত এড়িয়ে চলি এটা, কারণ এই সময়টা হলো স্থির থাকার এবং যা কিছু করেছি, সবকিছু মনে করার।”
ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে ১৬ বছর খেলেছেন সাবেক এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। তার দাবি, খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই এই ধরনটা তিনি অনুসরণ করে আসছেন।
“সবাই প্রস্তুত ছিল। খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই এই ধারাটা আমি মনে চলি। ১৯৮৮ সালে একটি টুর্নামেন্ট ছিল, যেখানে সব ম্যাচই ড্র হয়েছিল এবং টাইব্রেকারে গড়িয়েছিল। এই সময়টায় নিজেকে আলাদা রাখতে পছন্দ করি, নিজের মতো করে।”
এই বিতর্কে ম্যাচ শেষে কোচের পাশে দাঁড়িছিলেন মার্কিনিয়োস। অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার তখন বলেছিলেন, পেনাল্টির দায়িত্ব মূলত সহকারী কোচ ও দরিভালের ছেলে লুকাস সিলভেস্ত্রের।
“তিনি (দরিভাল) তা বৃত্তের বাইরে ছিলেন না, ঠিক পেছনেই ছিলেন, তাই না? আর এই ব্যাপারটার মূলত লুকাস দেখভাল করেন, অনুশীলনেও পেনাল্টি নিয়ে তিনিই বেশি সম্পৃক্ত, মাঠে সিদ্ধান্তও তিনিই নিচ্ছিলেন। তবে কোচের পূর্ণ কর্তৃত্ব আছে দলে। তিনি বৃত্তের বাইরে থাকলে সম্ভবত ইচ্ছে করেই থেকেছেন।”
পেনাল্টির অনুশীলন ও সিদ্ধান্ত নিয়ে একই কথা জানালেন দরিভালও। আবারও তার কথা, শেষ সময়ে কাগজে লিখে সিদ্ধান্ত জানানোর প্রয়োজন তিনি দেখেন না।
“পেনাল্টি শট নিয়ে প্রস্তুতি তো আগেই হয়ে যায়, এখনকার মতোই। কেবল ম্যাচের আগের দিনই নয়, সবসময়ই আমাদের এই অনুশীলন চলে। অনুশীলনে ফ্রি-কিক নিয়েই আমার মনোযোগ বেশি থাকে, পেনাল্টির অনুীলনের দায়িত্ব বেশি থাকে লুকাস (সিলভেস্ত্রে) ও পেদ্রোর (সোতেরো, আরেক সহকারী কোচ)।”
“খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই বয়ে চলেছি এটা, ম্যাচ শেষে আমি দলীয় বৃত্তে থাকি না। কে কে পেনাল্টি শট নেবে, এটা বলে দেওয়ার জন্য ক্লিপবোর্ড নিয়ে নামতে হবে না আমাকে। এসব তো আগেই ঠিক হয়ে আছে। আমার সহকারী সেখানে ছিলেন।”
টাইব্রেকারের আগে দলকে কিছু পরামর্শ যে তিনি দিয়েছিলেন, সেটিও তুলে ধরলেন কোচ।
“চতুর্থ রেফারি আমাকে ডেকেছিলেন এটা জানার জন্য যে, পেনাল্টিতে কোন কোন ফুটবলার থাকছে না, কারণ উরুগুয়ের একজন লাল কার্ড দেখেছিল। সেখান থেকে ফেরার পর দলের উদ্দেশ্যে আমার সেভাবে বলার কিছু ছিল না। তারপরও ওদেরকে বলেছি মনোযোগ ধরে রাখার কথা। শুধু এই ব্যাপারটি নিয়েই কথা বলেছি। তাছাড়া দলকে এমনিতেও ধীরস্থিরই দেখছিলাম আমি।”