ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
ফাইনালে নিজেদের মোটেও ফেভারিট মানছেন না স্পেন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে, ফাইনালে তিনি দলকে দেখতে চান নিজেদের চেনা ঘরানাতেই খেলতে।
Published : 14 Jul 2024, 10:01 AM
একটিই ভয়, নিজেদের হারিয়ে না ফেললেই হয়! হ্যাঁ, ফাইনালে তাকিয়ে লুইস দে লা ফুয়েন্তের সবচেয়ে বড় শঙ্কা কিংবা দুর্ভাবনা এটিই। প্রতিপক্ষ নিয়েও তাদের ভাবনা আছে অবশ্যই। তবে স্পেন কোচের মূল চিন্তার জায়গা, ফাইনালের চাপে তার দলের খেলার ধরনে যেন প্রভাব না পড়ে। ফাইনালেও স্পেন যদি স্পেন থাকতে পারে, তাহলেই ট্রফি জয়ের বড় সুযোগ তিনি দেখছেন।
এবারের ইউরোতে দুর্দান্ত ফুটবলের প্রদর্শনীতে সাড়া জাগানো স্পেন এখন শেষের পরীক্ষার অপেক্ষায়। রোববারের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, যাদেরকে হারানো কঠিন।
স্পেন অবশ্য সব প্রতিপক্ষকে হারিয়েই এসেছে ফাইনালে। সব ম্যাচেই জয়ী হওয়া আসরের একমাত্র দল তারা। টানা এই ছয় জয়ের পথে আগ্রাসী, ছন্দময়, নান্দনিক ও কার্যকর ফুটবল মেলে ধরেছে দে লা ফুয়েন্তের দল। লুইস আরাগোনেস ও ভিসেন্তে দেল বস্কের জমানার পর এরকম খেলতে আর দেখা যায়নি স্পেনকে। ‘হাই প্রেসিং’ ও ‘ওয়ান টাচ’ ফুটবল খেলে চলেছে এই দল, মাঠে যারা সিদ্ধান্ত নেয় খুব দ্রুত এবং আক্রমণে উঠে যায় গতিময়তায়।
ছয় ম্যাচে ১০৮টি শট নিয়েছে তারা গোলে, এর মধ্যে লক্ষ্যে ছিল ৩৭টি। গোল করেছে ১৩টি। বলার অপেক্ষা রাখে না, সবকটিই আসরের সর্বোচ্চ। ইংল্যান্ড দলের খেলার ধরন বরাবরই উল্টো। এবারের পরিসংখ্যানেও সেটির প্রমাণ। গোলে শট নিয়েছে তারা মোট ৬৬টি, লক্ষ্যে ছিল ১৯টি। গোল করেছে ৭টি।
তবে ফাইনালের চাপ, প্রত্যাশার ভার, আরও অনেক সমীকরণ, সবকিছুই আলাদা। এই মঞ্চে বদলে যায় অনেক কিছুই। দে লা ফুয়েন্তের ভয়ের জায়গা এখানেই।
তার চাওয়া, ফাইনালেও যেন বদলে না যায় তার দল।
“আমরা যদি স্পেন না থাকি, তাহলে কোনো সুযোগই নেই। আমরা অনেক কষ্ট করেছি প্রতি ম্যাচেই উন্নতি করতে… আরও উন্নতি আমরা করতে পারি অবশ্যই। তবে সবচেয়ে জরুরি, আমাদেরকে চেনা চেহারায় থাকত হবে, নিজেদের শক্তিমত্তা অনুযায়ী খেলতে হবে।”
“এভাবে খেলেই আমাদেরকে জিততে হবে, তা ইংল্যান্ড যা করুক বা যেভাবেই খেলুক। নিজেদের মতো খেললে আমাদের সুযোগ থাকবে। এসব হলো স্টাইল, খেলার ধরন। আমাদের চাওয়া পরিষ্কার। যদি ম্যাচে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং আমরা অন্যভাবে খেলি, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু এমনিতে নিজেদের ঘরানায় অটল থকত হবে আমাদের।”
ফাইনালের মতো ম্যাচে ফেভারিট বলে সাধারণত কিছু থাকে না। তবে এবারের আসরে স্পেন যেভাবে খেলেছে, তাদেরকে একটু এগিয়ে রাখছেন হয়তো প্রায় সবাই। দে লা ফুয়েন্তে অবশ্য এই আলোচনাতেই যেতে চান না।
“এখানে কোনো ফেভারিট নেই। দুই দল সমানে সমান, ঠিক আমাদের আগের নক-আউট ম্যাচগুলির মতোই। আগের ম্যাচগুলির মতো খেলতে না পারলে এবং ভুল করলে আমাদের কোনো সুযোগ থাকবে না। ফেভারিট তকমার ব্যাপারটি জুয়ারিদের ওপর ছেড়ে দিলাম।”
“এই পর্যন্ত আসতে পারা দারুণ ব্যাপার এবং ফাইনালে উঠতে পেরে আমরা রোমাঞ্চিত। সবচেয়ে বড় অর্জনগুলির একটি এটি। আমরা শান্ত আছি ও মাঠে নামার অপেক্ষায় আছি। দুর্দান্ত একটি দলের বিপক্ষে পরিপূর্ণ ম্যাচ হবে রোববার, আসরের সেরা দুই দলের ম্যাচ।”
স্পেন কোচের মতে, এই ধরনের বড় ম্যাচে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ছোটখাট খুঁটিনাটি ব্যাপার ঠিক রাখা।
“এই ধরনের ম্যাচে লড়াই এতটা কাছাকাছি, শেষ পর্যন্ত ছোট ছোট ব্যাপারগুলিই বড় ব্যবধান গড়ে দেয়। যে দল কম ভুল করবে তাদেরই জয়ের সুযোগ বেশি থাকবে।
স্পেনের এই দলের খেলা অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে আরাগোনেস ও দেল বস্কের সেই অপ্রতিরোধ্য স্পেন দলকে। আরাগোনেসের কোচিংয়ে ২০০৮ ইউরো জয়ের পর দেল বস্কের কোচিংয়ে ২০১০ বিশ্বকাপ ও ২০১২ ইউরো জিতে স্প্যানিশ ফুটবলের অনেক অনেক আক্ষেপ ঘোচানোর পাশাপাশি দারুণ সব কীর্তি গড়ে তারকায় ঠাসা সেই দ্যুতিময় দল।
এই দল এখনও শিরোপা জেতেনি। সেই দলের সঙ্গে তাই তুলনাও করছেন না দে লা ফুয়েন্তে। তবে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ঝিলিক তিনি দেখতে পাচ্ছেন। সেই আলোর পথে এগিয়ে যেতে এবার শিরোপায় উদ্ভাসিত হতে চান তিনি।
“অসাধারণ এক প্রজন্ম এটি। এই দলের অনেকেই আছে, যারা স্পেন যুব দলের হয়ে সাফল্য পেয়েছে। অনেক সময় এভাবেই ভবিষ্যৎ সাফল্যের ভিত গড়া হয়। ওই দলের (২০০৮-২০১২) সঙ্গে তুলনায় যাব না আমি, তবে আমরাও ইতিহাস গড়তে চাই। এখানে যারা আছে, স্পেনে আরও যে ফুটবলাররা আছে, সবাইকে নিয়ে স্পেনের ভবিষ্যৎ দারুণ।”
“তবে আমাদের জন্য ভবিষ্যৎ এখানেই। যে প্রক্রিয়ায় আমরা এই পর্যন্ত এগিয়েছি, তাতে আমি গর্বিত। এই দল কোনো কিছু এমনি এমনি পেয়ে যায়নি, অর্জন করে নিয়েছি আমরা এবং ওদের সবার এটা উপভোগ করা উচিত। একটি জাতীয় দল যখন দেশের প্রতি নিবেদিত থাকে, তখন তা দারুণ ব্যাপার। এই দলের সামনে হাতছানি আছে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে স্পেনকে সবচেয়ে সফল দল করে তোলার।”
এবার শিরোপা জিতলে এককভাবে ইউরোর সফলতম দল হয়ে উঠবে স্পেন। এখনও পর্যন্ত তাদের ট্রফি জার্মানির সমান তিনটি।