প্যারিস অলিম্পিকস
মেয়েদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে বাজিমাত করার পর সেদিনের সকালের গল্প শোনালেন সেন্ট লুসিয়ার এই অ্যাথলেট।
Published : 04 Aug 2024, 03:42 PM
সাফল্যের চূড়ায় উঠতে নিজের সামর্থ্যে আস্থা থাকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার উদাহরণ হতে পারেন জুলিয়েন আলফ্রেড। কদিন আগেও যিনি ছিলেন আড়ালে, তার দেশ সেন্ট লুসিয়াকেও চিনত না অনেকে, সেই তিনিই পাদপ্রদীপের আলোয় কী দারুণভাবেই না উঠে এলেন। প্যারিস অলিম্পিকসে দ্রুততম মানবীর মুকুট জিতলেন, বিশ্ববাসীর সামনে নিজের দেশকে তুলে ধরলেন নতুন করে।
স্তাদে দে ফ্রান্সের ট্র্যাকে ঝড় তুলে মেয়েদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ১০ দশমিক ৭২ সেকেন্ড সময় নিয়ে সোনার হাসি হেসেছেন জুলিয়েন। অলিম্পিকসের কোনো ইভেন্টে সেন্ট লুসিয়াকে এনে দিয়েছেন প্রথম পদক পাওয়ার অনিবর্চনীয় স্বাদ। প্রাপ্তির উচ্ছ্বাসে স্বাভাবিকভাবেই ভাসছেন তিনি।
জুলিয়েনের অবশ্য মনে পড়ছে আরও অনেক কিছু। ট্যাক্সি ক্যাবে প্রায়ই তাকে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। চালক জিজ্ঞেস করেন কোন দেশ থেকে এসেছেন; জুলিয়েন যখন বলেন, সেন্ট লুসিয়া। তখন চালক ফের প্রশ্ন করে বসেন, “সেন্ট লুসিয়া কোথায়?” জুলিয়েনের মনে হচ্ছে, এখন তার দেশ সম্পর্কে খোঁজখবর নিবেন অনেকেই।
“এটা এখনও পুরোপুরি হজম হয়নি। ধীরে ধীরে এবং নিশ্চিতভাবে হজম হয়ে যাবে। আমি মনে করি, লোকে এখন সার্চ করে সেন্ট লুসিয়াকে বের করবে। আমি এখন ঘরে ফিরতে এবং তাদের সঙ্গে উদযাপন করতে মুখিয়ে আছি।”
বিশ্বের মানচিত্রে সেন্ট লুসিয়া মাত্র এক লাখ ৮০ হাজার মানুষের দেশ। যে দেশে নেই আধুনিক মানের টার্ফ, যেখানে উন্নত পরিবেশে অনুশীলন করার সুযোগ বলতে গেলে নেই। দৌড়ে জুলিয়েনের শুরুটাও নগ্ন পায়ে। সেই মেয়েটিই আজ সেন্ট লুসিয়াকে আনন্দের সাগরে ভাসিয়েছে।
এই স্বপ্নের বুনোন হঠাৎ করে হয়নি। খেলাটির প্রতি নিবেদন, নিজের প্রতি প্রবল আত্মবিশ্বাস জুলিয়েনকে পৌঁছে দিয়েছে চূড়ায়। ২০১৮ সালে যুব অলিম্পিক গেমসে ১০০ মিটারে রুপা জিতেছিলেন তিনি, সেটি ছিল যুব অলিম্পিকে দেশটির প্রথম পদক পাওয়ার ঘটনা। এ বছর ওয়ার্ল্ড ইনডোরে ৬০ মিটারে সেরা হয়েছিলেন জুলিয়েন। সেটিও ছিল বৈশ্বিক কোনো আসরে সেন্ট লুসিয়ার প্রথম পদক প্রাপ্তির গল্প।
প্যারিসে তাই অর্জনের আরও বড় গল্প লেখার স্বপ্ন ছিল জুলিয়েনের। নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে তাই অন্য এক পথই বেছে নেন তিনি। সোনা জয়ের দিনের সকালের সেই গল্পটা ২৩ বছর বয়সী এই অ্যাথলেট শোনালেন; যেখানে আগামী দিনের অ্যাথলেটদের জন্যও থাকল দারুণ বার্তা।
“আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি লিখে রেখেছিলাম, ‘জুলিয়েন আলফ্রেড, অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন’। তো আমি মনে করি, নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ।”
“সেন্ট লুসিয়া থেকে উঠে আসা আমার কাছে অনেক বড় বিষয়। ওয়ার্ল্ড ইনডোরেও আমি সাফল্য পেয়েছি। জানতাম, সেন্ট লুসিয়ানরা আমার দৌড় দেখবে। আমি জানি, দেশে তারা এখন উদযাপন করছে।”