ইউরোপ সেরা হয়ে নতুন যুগের আশায় ইংল্যান্ড

১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম বড় কোনো শিরোপার স্বাদ পেয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছে ইংলিশরা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2022, 10:24 AM
Updated : 1 August 2022, 10:24 AM

১৯৬৬ সালের পর একের পর এক বছর পেরিয়েছে। টুর্নামেন্টের পর টুর্নামেন্ট গড়িয়েছে। কিন্তু ’৬৬’র ওই বিশ্বকাপ সাফল্যের পর আর কোনো বড় শিরোপা উৎসবের উপলক্ষ পায়নি ইংল্যান্ড। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সে হতাশার বৃত্ত ভাঙল মেয়েদের হাত ধরে, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের মধ্য দিয়ে। ফুটবলের আঙিনায় নতুন যুগ শুরুর আশায় এখন বুধ বাঁধছে ইংলিশরাও।

ইংল্যান্ড-জার্মানির ফাইনালে ইংলিশ ফুটবলপ্রেমীদের চোখ ছিল বিশেষভাবে। গ্যালারিতে রেকর্ড ৮৭ হাজার ১৯২ জন দর্শকের উপস্থিতিতে প্রতিযোগিতার রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে সমর্থকদের শিরোপা ক্ষুধা মিটিয়েছে ইংল‍্যান্ড।

শুধু ওয়েম্বলির ফাইনাল নয়, টুর্নামেন্ট জুড়েই স্বাগতিকদের গর্জনে ছিল নতুনের আগমণী সুর। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর প্রথম কোনো বড় শিরোপার স্বাদ তো বটেই, ইংল্যান্ডের মেয়েরা ছাপ রাখল আরও অনেক কিছুতে।

কেবল সাফল্য খরার অবসান নয়, দেশটির ক্রীড়াঙ্গণে মেয়েদের বিজয় কেতনও উড়ল নতুন করে। এই ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনই ১৯২১ সালে প্রায় ৫০ বছরের জন্য মেয়েদের ফুটবল নিষিদ্ধ করেছিল!

এর আগেও দুইবার এই শিরোপার খুব কাছাকাছি পৌঁছেছিল মেয়েরা। ১৯৮৪ সালে সুইডেনের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়। এরপর ২০০৯ সালে জার্মানির কাছে তারা উড়ে যায় ৬-২ গোলে।

এবার ইংলিশরা প্রথম উইমেন’স ইউরো জিতল মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার গল্প লিখে। সেমি-ফাইনালে সুইডেনকে বিধ্বস্ত করার পর ফাইনালে হারাল আটবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে।

বিজয়ীদের কাছে এসেছে বৃটেনের রানী এলিজাবেথের চিঠিও। সে চিঠির পরতে পরতে ঝরছে প্রশংসা।

“এই চ্যাম্পিয়নশিপ্স এবং ম্যাচগুলোতে তোমাদের পারফরম্যান্স প্রশংসা অর্জন করেছে। তবে, যোগ্য হিসাবে তোমরা যে সফলতা অর্জন করেছ, তা এই ট্রফির চেয়েও বেশি কিছু।”

“তোমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছ, তোমাদের এই অর্জন আজকের দিনের মেয়ে ও নারীদের এবং আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার হবে।”

এই টুর্নামেন্টের দিকে পিছু ফিরে তাকালে প্রেরণা পাওয়ার মতো যথেষ্ট রসদ পাবে ইংল্যান্ডের আগামী প্রজন্ম। টুর্নামেন্ট জুড়েই অদম্য ছিল সারিনা ভিগমানের দল। রেকর্ড ২২ গোল করেছে তারা, এর মধ্যে সেমি-ফাইনালে র‌্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সুইডেনকে উড়িয়ে দেয় ৪-০ ব্যবধানে।

ওয়েম্বলির ফাইনালের আগে অধিনায়ক উইলিয়ামসন ভিন্ন এক বার্তা দিয়েছিলেন। ফলাফল যেটাই হোক না কেন, টুর্নামেন্টটি শুধু মেয়েদের আসর হিসেবে নয়, বরং লিঙ্গ সমতার রূপান্তরের উপলক্ষ হবে-এমন আশাবাদ জানিয়েছিলেন তিনি।

ট্রফি উঁচিয়ে ধরার ক্ষণেও উইলিয়ামসনের কণ্ঠে শোনা গেল তেমন কথাই, “এই টুর্নামেন্ট এবং এই দলের লেগ্যাসি সমাজে একটি পরিবর্তন (আনবে); আমরা সবাইকে এক ছাতার নিচে এনেছি।”

ইংল্যান্ড ও আর্সেনালের সাবেক ডিফেন্ডার অ্যালেক্স স্কটও রোববারের ফাইনাল জয়কে মেয়েদের ফুটবলের ‘দ্য মোমেন্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। স্বপ্ন পূরণের উচ্ছ্বাস প্রকাশের সঙ্গে নতুন দিনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন ২০০৯ সালের উইমেন’স ইউরোর রানার্সআপ জয়ী দলের এই খেলোয়াড়।

“মেয়েদের ফুটবলকে আজকের এই জায়গায় নিয়ে আসতে, এই ট্রফি জয়ে অনেক মানুষের ভূমিকা আছে। এটার জন্যই আমরা স্বপ্ন দেখেছি।”

“এই মুহূর্ত আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৯৯ সালের উইমেন’স বিশ্বকাপের কথা, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র শিরোপা জিতেছিল এবং সেই জয় যুক্তরাষ্ট্রের সকারের চেহারায় বদলে দিয়েছিল। ইংল্যান্ডেও আমি সেই মুহূর্তটি অনুভব করছি। এটাই সেই ক্ষণ।”