উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ
হ্যাটট্রিক করে জাতীয় দলে অভিষেক রাঙানো এই ফরোয়ার্ড উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও দলের আক্রমণভাগের নির্ভরতা হয়ে উঠতে চান।
Published : 17 Oct 2024, 03:57 PM
‘আগে কারো পাশ দিয়ে গেলেও কেউ গুরুত্ব দিত না, এখন সবাই চেনে, কথা বলে’- কাঠমাণ্ডুর আনফা গ্রাউন্ডের টার্ফে দাঁড়িয়ে যখন এই কথা বলছিলেন সাগরিকা, তখন তার চোখে-মুখে অন্যরকম প্রাপ্তির উচ্ছ্বাস যেন ঠিকরে পড়ছিল। তা পড়াই কথা। অনূর্ধ্ব-১৯ সাফে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয় পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছিলেন তিনি; এরপর জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক রাঙান হ্যাটট্রিক উপহার দিয়ে। সাগরিকা এখন মুখিয়ে আছেন সিরাত জাহান স্বপ্না শূন্যতা পূরণ করতে।
উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গত আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বাংলাদেশের আক্রমণভাগের নির্ভরতা ছিলেন স্বপ্না। ৪ গোল করেছিলেন ওই আসরে। এরপর আচমকাই অবসরে চলে যান স্বপ্না। সেই শূন্যতা পূরণের মহাভার এবার উঠতে পারে সাগরিকার কাঁধে। ছোটখাট গড়নের ফরোয়ার্ড দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েই বললেন, আক্রমণভাগের ভার বইতে প্রস্তুত তিনি।
“স্বপ্না আপুর মতো হয়তো নাও পারি, তবে নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব। নেপালে এসে… আমার লক্ষ্য একটাই, যদি মাঠে নামি, আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করব ভালো কিছু করার, গোল দেওয়ার। দেশবাসীকে ভালো কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব।”
সেরাটা নিংড়ে দেওয়ার চেষ্টা সাগরিকা করতে চান আরও অনেক কারণে। ফুটবলের সবুজ আঙিনায় তার পা রাখার পথটা ছিল কাটায় ভরা। সমাজের চোখ রাঙানি, পরিবারের চাপ, যেন প্রতিকূলতার অন্ত নেই। বিরুদ্ধ স্রোতে ভেসে এতদূর এসে তাই কোনোভাবেই থামতে চান না তিনি।
“গ্রামের মানুষ তো অনেক কথাই বলত। আমরা হাফ প্যান্ট পরে খেলি, মেয়ে মানুষ কেন হাফ প্যান্ট পরে খেলবে? আমার বাবা এই কথাগুলো সহ্য করতে পারত না, তাই আমাকে নিষেধ করত। কিন্তু আমি বলেছিলাম, একদিন এমন কিছু করব, ভালো কিছু করব যেন, সবাই আমাকে উৎসাহ দেয়, আমাকে সমর্থন করে। আমি অনেক জেদিও। যেটা বলি, সেটা করি। আম্মার ইচ্ছা ছিল আমি ফুটবলে আসব, আমি সেটাই করেছি।”
“এখন অনেক ভালো লাগে। আগে তো কেউ চিনত না, কথা বলত না। আগে কারো পাশ দিয়ে গেলেও অতটা গুরুত্ব দিত না। এখন পাশ দিয়ে গেলে গুরুত্ব দেয়, কথা বলে, অনেক-অনেক ভালো লাগে।”
আগামী ২০ অক্টোবর পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ। ‘জেদি’ সাগরিকার স্বপ্নার শূন্যতা পূরণ করে আপন আলোয় আলোকিত হওয়ার পথ চলা শুরু হতে পারে এ ম্যাচ দিয়েই।