হাঁটুর চোটে টুর্নামেন্টে যার খেলারই কথা ছিল না, ১৯ বছর বয়সী সেই উঠতি তারকা জন্ম দিলেন নতুন এক রূপকথার।
Published : 31 Mar 2025, 04:57 PM
টুর্নামেন্টের শুরুতেই দুর্ভাগ্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইয়াকুব মেনসিকের সামনে। হাঁটুর প্রচণ্ড ব্যথায় হাল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু ঘটনাক্রমে খেলা চালিয়ে যেতে হয় তাকে। এরপর অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় তিনি লিখলেন যেন এক রূপকথার গল্প। শৈশবে যাকে আদর্শ মানতেন, সেই নোভাক জোকোভিচকে ফাইনালে হারিয়ে মায়ামি ওপেনের ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন চেক রিপাবলিকের টিনএজ তারকা।
ফ্লোরিডার হার্ড রক স্টেডিয়ামে শিরোপা লড়াইটি মাঠে গড়ানোর কথা ছিল রোববার স্থানীয় সময় বেলা তিনটায়। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে ম্যাচটি শুরু হয় রাত আটটা ৩৭ মিনিটে। শুরু হয় রোমাঞ্চে ঠাসা এক লড়াইয়ের।
প্রথমবার এটিপি ১০০০-এর ফাইনালে খেলতে নেমেই ৭-৬ (৭-৪), ৭-৬ (৭-৪) গেমে জিতে ইতিহাস রচনা করেন ১৯ বছর বয়সী মেনসিক।
গত ২০ মার্চ প্রথম রাউন্ডে রবের্তো বাউতিস্তার বিপক্ষে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচের আগে ওই চোট ছোবল দেয় মেনসিকের শরীরে। হাঁটুর সমস্যায় নিজেকে টুর্নামেন্ট থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানাতে রেফারিদের রুমে যান তিনি; কিন্তু তখন সবাই মধ্যাহ্নভোজের জন্য বাইরে ছিলেন।
সেখান থেকে ফিরে তিনি ফিজিওথেরাপিস্টদের কাগজপত্রের কাজ এগিয়ে রাখতে বলেন। কিন্তু তারা তাকে সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্য বোঝায়। ভীষণ কঠিন সেই সময়ের কথা নিজেই শোনালেন মেনসিক।
“আমি হাঁটতে পারছিলাম, দৌড়াতে পারছিলাম না। চিকিৎসা নেওয়া শুরু করি, ব্যথানাশক ওষুধ খাচ্ছিলাম। ‘আমি সরে দাঁড়াচ্ছি’ এটা বলতে রেফারিদের রুমে গিয়েছিলাম; কিন্তু তিনি লাঞ্চ করছিলেন।”
এরপর মেনসিক ফিজিওর কাছে গেলে তিনি বুঝতে পারেন চোট অতটা গুরুতর নয় এবং চিকিৎসা শুরু করেন।
“কিছুক্ষণ পর আমি একটা স্বস্তি পাই। তখন অন্য ধরনের ব্যথানাশক নেই আমি, যা একটু সাহায্য করে। তখন ভাবলাম, চেষ্টা করা যেতে পারে। ম্যাচ শুরু হতে তখন আধা ঘণ্টার মতো বাকি ছিল, আমি তখন হাঁটতে পারছিলাম, দৌড়াতে পারছিলাম।“
“কোনোভাবে আমি প্রথম রাউন্ডের ম্যাচটি জিতে যাই এবং এরপর আমার একদিনের বিরতি ছিল। তাতে আমার হাঁটুর সমস্যা অনেকটা কেটে যায়। দিনে দিনে আমি আরও সুস্থ হয়ে উঠি এবং আমার খেলারও উন্নতি হয়।”
এতে একে সব বাধা পেরিয়ে তিনি পৌঁছে যান ফাইনালের মঞ্চে। যেখানে তার প্রতিপক্ষ জোকোভিচ ছিলেন শততম ক্যারিয়ার শিরোপার লক্ষ্যে, টেনিস ইতিহাসেই তার চেয়ে বেশি শিরোপা জয়ের রেকর্ড আছে কেবল জিমি কনর্স (১০৯) ও রজার ফেদেরারের (১০৩)।
আর মেনসিকের ছিল না এত বড় টুর্নামেন্টের কোনো ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা। বিস্ময়কর সংখ্যা আছে আরও কিছু। তার বয়স যখন ১০ মাস তখন (২০০৬ সালে) প্রথম শিরোপার স্বাদ পান জোকোভিচ, মেনসিকের বয়স যখন ২ বছর, তখন প্রথম মায়ামি ওপেন জিতেছিলেন জোকোভিচ, ২০০৭ সালে।
এরপর আরও পাঁচবার মায়ামিতে শিরোপা উল্লাস করেছেন জোকোভিচ; ২০১১, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে। এবার জিতলে এখানে রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন আন্দ্রে আগাসির পাশে বসতেন রেকর্ড ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী।
ক্যারিয়ার ট্রফির শতক কিংবা এখানে সপ্তম শিরোপার জন্য এখন অপেক্ষাটা আরও বাড়ল এই গ্রেট সার্ব তারকার।
দুই প্রজন্মের এই দুজনের মধ্যে বয়সের পার্থক্যও (১৮ বছর ১০২ দিন) জন্ম দিয়েছে এটিপি ১০০০ ফাইনালে নতুন রেকর্ডের।