ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
প্রথমবার ইউরোতে খেলতে এসেই নকআউটে জায়গা করে নেওয়ায় জর্জিয়ার মানুষের আনন্দের যেন সীমা নেই।
Published : 27 Jun 2024, 03:37 PM
মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় প্রথমবার সুযোগ পাওয়াই জর্জিয়ার জন্য অনেক বড় অর্জন। কিন্তু এতটুকুতে থামছে না তারা, তুলছে না তৃপ্তির ঢেকুর। চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে দলটি জায়গা করে নিয়েছে টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে। তাদের এই সাফল্যে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে জর্জিয়ার অলিগলি। বিশেষ করে, দেশটির রাজধানী তিবিলিসি তো রীতিমত কাঁপছে মানুষের উল্লাস, হই-হুল্লোড়ে।
জার্মানির পশ্চিমের শহর গেলসেনকিরশেনে বুধবার রাতে স্মরণীয় এক জয় তুলে নিয়েছে জর্জিয়া। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে শক্তি-সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে থাকা পর্তুগালকে ২-০ গোলে হারিয়ে উপহার দিয়েছে চমক। জায়গা করে নিয়েছে শেষ ষোলোয়।
বিশ্ব ফুটবলের বড় কোনো তারকা নেই দলটিতে। তবে পজিশনভিত্তিক কার্যকর সব খেলোয়াড় নিয়ে দারুণ পরিকল্পনা এবং মাঠে তার সঠিক প্রয়োগে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে সেরা সাফল্য পেয়েছে জর্জিয়া। প্রথমবার কোনো বড় টুর্নামেন্টে (বিশ্বকাপ, ইউরো) খেলতে এসেই নকআউটে পা রেখেছে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ৭৪ নম্বর দলটি।
তুরস্কের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরে ইউরো শুরু করে জর্জিয়া। পরের ম্যাচে তারা রুখে দেয় চেক রিপাবলিককে। ম্যাচটি ড্র হয় ১-১ গোলে। এরপর পর্তুগালের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য জয়ে সেরা চার তৃতীয় দলের একটি হয়ে শেষ ষোলোয় ওঠে দলটি।
ফুটবলারদের এই সাফল্যের ছোঁয়া লেগেছে দেশটির মানুষের গায়ে। পর্তুগাল ম্যাচ শেষেই তিবিলিসির রাস্তায় নামে মানুষের ঢল। গাড়ির জানালা দিয়ে জাতীয় পতাকা ওড়াতে থাকেন অনেকে। ফোটানো হয় আতশবাজি। প্রথমবার বড় টুর্নামেন্টের নক আউট পর্বে ওঠা বলে কথা!
জর্জিয়ার ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট লেভান কোবিয়াশভিলি তো ভাষাই খুঁজে পাচ্ছেন না অনুভূতি প্রকাশের, “এটা অবিশ্বাস্য। ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ড্রেসিং-রুমে কি হচ্ছে সেটা আপনার দেখা উচিত।”
পর্তুগাল ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতে না বাজতেই মাঠে ঢুকে পড়েন জর্জিয়ার অন্য খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সদস্যরা। মাঠে থাকা সতীর্থদের সঙ্গে উদযাপনে মাতেন তারা। পরে ড্রেসিং-রুমেও চলে তাদের উল্লাস।
খেলোয়াড়দের মতো জর্জিয়ার মানুষও ফেটে পড়েন উল্লাসে। আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করতে তিবিলিসিতে রাস্তায় রাস্তায় বাজানো হয় গাড়ির হর্ন। চারপাশ কেঁপে ওঠে ‘সাকার্তভেলো’ ধ্বনিতে, স্থানীয়রা জর্জিয়াকে ডাকেন এই নামে।
ফুটবল দলের এই সাফল্যে আনন্দে আত্মহারা জর্জিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি কোবাখিদজে।
“ছেলেরা সত্যিই আমাদের অলৌকিক কিছু উপহার দিয়েছে। সবারই ধন্যবাদের চেয়ে বেশি কিছু প্রাপ্য। এটা বিস্ময়কর।”
“তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে এবং লড়াই বাদেও এটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে জর্জিয়ানদের ফুটবল প্রতিভা রয়েছে।”
তিবিলিসির মাঝে লিবার্টি স্কয়ারে এদিন জড়ো হয় শতশত গাড়ি। তাতে পুরো জর্জিয়ার রাজধানীতে তৈরি হয় যানজট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, অনেকে তো সেন্ট জর্জের ভাস্কর্যে উঠে মুহূর্তটি উদযাপন করছেন।
খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানানোর পর জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট সালোমি জোরাবিশভিলি ফেইসবুকে লিখেছেন, “এর অর্থ যেখানেই বিশ্বাস, লক্ষ্য, নিঃস্বার্থ তাড়না এবং বিজয়ের চেতনা রয়েছে, সেখানেই বিজয় রয়েছে!”
“সবাইকে অভিনন্দন! আমি জর্জিয়াকে অভিনন্দন জানাই...শুধু ইউরোপে প্রবেশের জন্যই নয়...লক্ষ্য উপরের দিকে রাখার জন্য!”
জর্জিয়ার রূপকথার পথচলা কোথায় গিয়ে থামে সেটা তোলা থাকা সময়ের হাতে। আগামী রোববার শেষ ষোলোর লড়াইয়ে শিরোপা প্রত্যাশী স্পেনের মুখোমুখি হবে তারা।