দুটি ম্যাচে মাথায় আঘাত পাওয়ার পরও খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানালেন ফরাসি ডিফেন্ডার।
Published : 02 Apr 2024, 09:58 PM
একের পর এক চোটে ক্যারিয়ারজুড়েই ভুগতে হচ্ছে রাফায়েল ভারানেকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফরাসি ডিফেন্ডার এবার জানালেন, দুটি ম্যাচে মাথায় আঘাত পাওয়ার পরও খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে তার শরীরে।
জাতীয় দল ফ্রান্স ও রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার সময় এই অভিজ্ঞতা হয় ভারানের। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় নাইজেরিয়ার বিপক্ষে মাথায় আঘাত পেয়েও খেলা চালিয়ে যান তিনি। সম্প্রতি ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘লেকিপ’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই সময়ের কঠিন অবস্থার কথা তুলে ধরেন ৩০ বছর বয়সী এই সেন্টার-ব্যাক।
“আমি ম্যাচটি শেষ করেছিলাম, কিন্তু আমি যেন ‘অটোপাইলট’ অবস্থায় ছিলাম। ওই সময়ে কেউ যদি আমার সঙ্গে কথা বলত, আমি প্রতিক্রিয়া জানাতে পারতাম কিনা জানি না।”
শুধু নাইজেরিয়া ম্যাচই নয়, কোয়ার্টার-ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষেও খেলেন ভারানে, যেখানে ১-০ গোলে হেরে যায় ফ্রান্স।
"আমি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলাম না, আমার ওজন কমে গিয়েছিল, কারণ আমি পানিশূন্যতায় ভুগছিলাম, আমার স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো ছিল না, তারপরও আমি খেলেছিলাম, কারণ ম্যাচটি ছিল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল।”
তিনি আরেকবার মাথায় আঘাত পান ২০১৯-২০ মৌসুমে রেয়ালের হয়ে লা লিগায় গেতাফের বিপক্ষে খেলার সময়ে। ওই ম্যাচে তাকে বদলি হিসেবে তুলে নেওয়া হলেও পরে বেশ কয়েকদিন ধরে তিনি ক্লান্ত বোধ করেন।
রেয়ালের পরের ম্যাচ ছিল ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে, তাই তেমন একটা বিশ্রাম নিতে পারেননি ভারানে। ম্যাচের আগে ওয়ার্ম-আপের সময় তিনি পুরোপুরি ফিট ছিলেন না এবং ম্যাচের সময় নিজেকে ‘একজন দর্শকের মতো’ মনে হচ্ছিল তার। এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, নিজেকে স্বাভাবিক করার মরিয়া চেষ্টায় নিজেকে ‘প্রায় চড় মারতে চেয়েছিলেন।’ ম্যাচটি ২-১ গোলে হেরে যায় রেয়াল, দুটি গোলেই দায় ছিল ভারানের।
ভারানে কনকাশন সম্পর্কে বুঝতে পারেন সম্প্রতি এসে। সম্প্রতি চোখের সমস্যায়ও একটি ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি।
"আমি প্রথমবার (মাইক্রো-কনকাশন) সম্পর্কে শুনলাম যখন এই মৌসুমে বিশেষজ্ঞরা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে এলো... খেলোয়াড় হিসেবে আমরা প্রায় সময়ই বুঝতে পারি না, এমনকি আমরা পরীক্ষা করার কথাও ভাবি না।”
"এই মৌসুমের শুরুতে আমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে একটি ম্যাচের সময় বারবার হেড করেছিলাম এবং পরের দিনগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে ক্লান্ত বোধ করেছিলাম, সেই সঙ্গে চোখেও কিছুটা ক্লান্ত বোধ করতাম। বিষয়টি আমি স্টাফদের কাছে জানালে তারা আমাকে না খেলার পরামর্শ দেয়।”
ভারানে জানালেন, ইউনাইটেডের খেলোয়াড়দের অনুশীলন সেশনে ১০ বারের বেশি হেড করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও ম্যাচের সময়ে এই পরামর্শ মেনে চলা কঠিন। ভারানে চান না তার সাত বছর বয়সী ছেলে একই অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাক, তাই ছেলেকে হেড না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
"আমার সাত বছর বয়সী ছেলে ফুটবল খেলে, আমি তাকে হেড না করার পরামর্শ দিয়েছি।”
"এতে (হেড করলে) তাৎক্ষণিক ট্রমা দেখা না দিলেও আমরা জানি, দীর্ঘমেয়াদে বারবার এমনটা হলে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। জানি না আমি একশ বছর বেঁচে থাকব কিনা, তবে জানি যে, আমার শরীরের ক্ষতি করেছি। আমরা ফুটবলাররা সর্বোচ্চ স্তরে খেলি, আমরা ব্যথায় অভ্যস্ত, আমরা যেন অনেকটা সৈনিকের মতো, শক্ত, শারীরিক শক্তির প্রতীক, তবে এই লক্ষণগুলো প্রায় অদৃশ্য থাকে।”