সিটির ‘ট্রেবল’ নাকি ইন্টারের ‘মিরাকল’

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের মহারণে ‘ফেভারিট’ ম্যানচেস্টার সিটির সামনে ইন্টার মিলান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2023, 01:15 PM
Updated : 9 June 2023, 01:15 PM

‘এই ট্রফি ম্যানচেস্টার সিটির প্রাপ্য, তাদের হারাতে হলে অলৌকিক কিছু করে দেখাতে হবে ইন্টার মিলানকে’- চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল নিয়ে বলেছেন লিভারপুল গ্রেট ডিটমার হামান। সার্বিক বিবেচনায় তার কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার লোক হয়তো খুব বেশি পাওয়া যাবে না। সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স কিংবা দলের শক্তির বিচারে আসছে ফাইনালে পরিষ্কার ফেভারিট ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা। 

আর একটি জয়ে কেবল ইউরোপ সেরা হওয়ার দীর্ঘ অপেক্ষাই ঘুচবে না সিটির, তাদের নাম উঠে যাবে ট্রেবল জয়ের ইতিহাসেও। ইন্টারের সামনে হাতছানি ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ট্রফিটা চতুর্থবারের মতো ঘরে তোলার। 

ইস্তানবুলের আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে শনিবার শিরোপা লড়াইয়ে নামবে সিটি ও ইন্টার। ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত একটায়। 

২০২২-২৩ মৌসুমে ইতোমধ্যেই প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ জিতেছে সিটি। গত কয়েক বছরে লিগ শিরোপাকে তো রীতিমতো নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে পেপ গুয়ার্দিওলার দল। ছয় মৌসুমের মধ্যে পাঁচবারই ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছে ম্যানচেস্টারের ক্লাবটি। সেখানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বরাবরই তাদের জন্য হাহাকারের প্রতিশব্দ। শিরোপা দূরে থাক, আগে তারা ফাইনালই খেলতে পেরেছে স্রেফ একবার। ২০২১ সালের ওই লড়াইয়ে তাদের বেদনায় ভাসিয়ে উৎসব করেছিল চেলসি।

তিন মৌসুমের মধ্যে আরও একবার ফাইনালে সিটি। সেমি-ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে উড়িয়ে যেভাবে ফাইনালে এসেছে তারা, শিরোপা তাদের ঘরেই দেখছে অনেকে। সেটা হলে দ্বিতীয় ইংলিশ দল হিসেবে ট্রেবল (একই মৌসুমে ঘরোয়া লিগ, ঘরোয়া কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জয়ের কীর্তি গড়া হয়ে যাবে তাদের। ১৯৯৯ সালে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের হাত ধরে যা করে দেখিয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। 

তবে সিটির জন্য কাজটা মোটেও সহজ হবে না। সেমি-ফাইনালের দুই লেগ মিলিয়ে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলানকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে একটা বার্তা আগেই দিয়ে রেখেছে ইন্টার। তাদের জমাট রক্ষণের সামনে বড় পরীক্ষা দিতে হবে সিটিকে। ফাইনালে আসার আগে নকআউট পর্বের ছয় ম্যাচে স্রেফ তিনটি গোল হজম করেছে ইন্টার। এই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, ইতালিয়ান দলটিকে হারাতে সেরা ফুটবলই খেলতে হবে সিটিকে।

অবাক করা হলেও সত্যি, সিটি ও ইন্টারের আগে কখনও মুখোমুখি দেখাই হয়নি! ১৮ বছর পর ইস্তানবুলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল ফেরার রাতে প্রথম সাক্ষাৎটা হয়ে যাচ্ছে দল দুটির। এই মাঠে সবশেষ ইউরোপ সেরার ফাইনালে হয়েছিল ২০০৫ সালে। সেখানেও লড়াইটা ছিল ইংলিশ বনাম ইতালিয়ান দলের। সেই লড়াই সবার কাছে পরিচিত হয়ে আছে লিভারপুলের ‘মিরাকল অব ইস্তানবুল’ নামে। এসি মিলানের বিপক্ষে প্রথমার্ধে তিন গোল হজমের পর দ্বিতীয়ার্ধে সাত মিনিটের মধ্যে সমতা টেনে টাইব্রেকারে জিতেছিল লিভারপুল। 

সেই রাতে লিভারপুল ছিল ‘আন্ডারডগ’, অনেকটা এবারের ইন্টারের মতো। পাওলো মালদিনি, আন্দ্রেয়া পিরলো, এরনান ক্রেসপোদের নিয়ে গড়া এসি মিলান তখন বিশ্বের সেরা দলগুলির একটি। এখন যেমনটা সিটি। কেভিন ডে ব্রুইনে, ইলকাই গিনদোয়ানরা আছেন আগে থেকে, গত গ্রীষ্মে দলটিতে যোগ হয় আর্লিং হলান্ড। তাতে এই মৌসুমে সিটি হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। 

ইংলিশ ফুটবলে নিজের অভিষেক মৌসুমে হলান্ড এখন পর্যন্ত সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে করেছেন ৫২ গোল। যার ১২টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে, এর ৫টি আবার একই ম্যাচে, শেষ ষোলোয় লাইপজিগের বিপক্ষে। ফাইনালেও তার দিকে খুব করে তাকিয়ে থাকবে দল। নরওয়ের এই তারকা আগেই বলে দিয়েছেন, ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন পূরণে ‘সবকিছুই’ করবেন তিনি।

ইন্টারের সামনেও এই মৌসুমে তৃতীয় শিরোপা জয়ের হাতছানি। এবার তারা জিতেছে ইতালিয়ান কাপ ও ইতালিয়ান সুপার কাপ। এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এক যুগের শিরোপা খরা কাটাতে মরিয়া তারা। 

সিমোনে ইনজাগির দল এবার ফাইনালে আসবে, এমনটি ভাবার লোক চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ড্রয়ের সময় কজন ছিল?  বায়ার্ন মিউনিখ ও বার্সেলোনার সঙ্গে মিলিয়ে তাদের গ্রুপটা পেয়েছিল ‘মৃত্যুকূপ’ তকমা। আসরে তারা হেরে বসে প্রথম ম্যাচেই। সেই তারাই পরে বার্সেলোনার মতো দলকে পেছনে ফেলে গ্রুপ পেরিয়ে, নকআউটের একেকটি ধাপ পেরিয়ে এখন শিরোপা থেকে এক জয় দূরে। 

শেষ পর্যন্ত কোন দলের স্বপ্ন পূরণ হয়, সেটিই এখন দেখার।