কত পিঁপড়া দুনিয়ায়?

আকারে তারা ক্ষুদ্র হতে পারে, সংখ্যায় নয়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2022, 04:32 AM
Updated : 30 Sept 2022, 04:32 AM

চারপাশে দেখা মেলে নানা রকম পিঁপড়ার; সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, আকারে ক্ষুদ্র হলেও ফরমিসিডে পরিবারভুক্ত কয়েক হাজার প্রজাতির এই প্রাণীর সংখ্যা অবাক করার মত।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, যে কোনো সময় হিসাব করলে পৃথিবীতে ২০ কোয়াড্রিলিয়ন পিঁপড়া পাওয়া যাবে।

২০ কোয়াড্রিলিয়ন মানে কত! সংখ্যায় ভেঙে লিখতে ২০ এর ডানে দিতে হবে ‍১৫টি শূন্য; অর্থাৎ ২০,০০০০০০০০০০০০০০০।

এক প্রতিবেদনে সিএনএন লিখেছে, পিঁপড়ার সংখ্যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা আগে যেসব ধারণা দিয়েছিলেন, এই সংখ্যা তার চেয়ে দুই থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি।

নতুন এ গবেষণা প্রতিবেদনের সহ লেখক জার্মানির ভুর্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গ বাস্তুবিদ সাবিন এস নুটেন বলেন, “পিঁপড়ার যে বিপুল সংখ্যা আমরা দেখলাম, তাতে আমরা খুবই অবাক।”

অবশ্য পিঁপড়ার সংখ্যা কত হওয়া উচিত, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যার প্রত্যাশা নুটেন আর তার সহকর্মীদের ছিল না। কারণ এযাবৎকালের গবেষণা প্রবন্ধগুলোতে পিঁপড়ার সংখ্যা নিয়ে যে ধারণা পাওয়া যায়, তার সবই মূলত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নির্ভর অনুমান, তার সমর্থনে প্রায়োগিক কোনো উপাত্ত ছিল না।

“যে কারণে এটাই আমাদের গবেষণার নতুনত্ব, কারণ আমরা অনেক প্রায়োগিক বা বাস্তব গবেষণা থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়েছি,” বলেন নুটেন।

প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী বার্ট হোল্ডোব্লার এবং এডওয়ার্ড ও উইলসনের অনুমান ছিল, বিশ্বে ১ কোয়াড্রিলিয়ন থেকে ১০ কোয়াড্রিলিয়ন পিঁপড়া রয়েছে, যা বিশ্বের মোট পোকামাকড়ের ১ শতাংশ।

তবে নুটেন ও তার সহকর্মীরা বিশ্বব্যাপী পিঁপড়ার নমুনাগুলো থেকে পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে নতুন অনুমান হাজির করেছেন। তারা ৪৬৫টি গবেষণাপত্র, ১৩ হাজার নমুনা স্থান এবং সব মহাদেশের পিঁপড়ার প্রধান বাসস্থানগুলো নিয়ে কাজ করেছেন।

নুটেন বলছেন, তাদের গবেষণায় প্রায় ৮০ বছরের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতের মানববসতি বা পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা পেতেও কাজে লাগানো যেতে পারে।

বিজ্ঞানীরা দক্ষিণ আমেরিকার বনভূমির মত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের মাটিতে থাকা পিঁপড়ার সংখ্যাও অনুমান করেছেন, যা প্রায় ৩ কোয়াড্রিলিয়ন।

এ গবেষণা প্রতিবেদনের আরেক সহলেখক ভুর্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্যাট্রিক শুলথেইজ সিএনএনকে বলেন, যে দীর্ঘ সময়ের তথ্য তারা ব্যবহার করেছেন, সেখানে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কীটপতঙ্গের সংখ্যায় পরিবর্তনটাও স্পষ্ট। কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তন বা বন যেভাবে উজার করা হয়েছে, তা পিঁপড়ার সংখ্যার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

এ তো গেল সংখ্যা, বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর সব পিঁপড়ার মোট ওজন সব বন্য পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর মোট ওজনেরও বেশি এবং সব মানুষের ওজনের ২০ শতাংশের সমান।

গবেষকরা বলছেন, পিঁপড়ার এই সংখ্যা অকল্পনীয়ভাবে বিশাল মনে হলেও অনুমানের ক্ষেত্রে তারা ছিলেন রক্ষণশীল, অর্থাৎ খানিকটা কম করে ধরেই হিসাবটা করেছেন, কারণ প্রায় ৫০০ গবেষণা থেকে যেসব তথ্য উপাত্ত তারা জড়ো করেছিলেন, তার সব তারা যুক্ত করতে পারেননি।

যেমন- প্রচুর পিঁপড়া মাটির নিচে বাস করে, কিন্তু তাদের সংখ্যা নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। ফলে নতুন গবেষণায় সেগুলো যুক্ত করা যায়নি।