কুড়িগ্রামে নদীতে বাড়ছে পানি, ভাঙন হুমকিতে কমিউনিটি ক্লিনিক

ভাঙন রোধে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে; বরাদ্দ আসলেই কাজ শুরু হবে বলে জানায় পাউবো।

আহসান হাবীব নীলুকুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2023, 03:35 PM
Updated : 29 May 2023, 03:35 PM

উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। বন্যার আগেই জেলার ১৬টি নদীতে পানি বাড়ায় দেখা দিয়েছে ভাঙন।

নদীভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনার শেষ রক্ষা হচ্ছে না।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, হঠাৎ পানি বাড়ায় দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলাসহ নদী তীরবর্তী বসতভিটা ও ফসলি জমি নিয়ে আতঙ্কে দিন পারছেন বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে উলিপুর, চিলমারী, নাগেশ্বরী এবং সদর উপজেলার দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে অনেকেই বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়েছে।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরভগবতীপুরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে চরভগবতীপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও হুমকির মুখে পড়েছে চরভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকসহ আশপাশের ৪টি গ্রাম।

স্থানীয় বাসিন্দা ফজলু মিয়া বলেন, বন্যা আসার আগেই যেভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে আগামীতে নদী আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। বন্যায় মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।

জরুরি ভিত্তিতে নদী শাসন না করলে ভাঙন আরও বাড়বে বলে মত এলাকাবাসীর।

কৃষক নুর ইসলাম বলেন, “গত এক সপ্তাহে আমার দুই বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এখনও বন্যা আসে নাই, এতেই যে ভাঙনের অবস্থা–জানি না কপালে কী দুঃখ আছে।”

চরভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি রাশেদুল ইসলাম বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে কয়েকদিনের মধ্যে অনেক জমি ও বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিকটি ভাঙনের মুখে।

“রোববার ক্লিনিকটির স্থাপনা নিলামে তোলা হয়েছিল। সরকারি শিডিউল অনুযায়ী মূল্য না ওঠায় বিক্রি করা হয় নাই। এখন যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে, যেকোনো মুহূর্তে ক্লিনিকটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।”

তিনি আরও বলেন, ক্লিনিকের ভিতরের সব আসবাবপত্র ও ওষুধ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে অস্থায়ীভাবে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, “অনেক চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করা যাচ্ছে না। আবার কবে ক্লিনিক স্থাপন করা হবে জানি না। তবে অস্থায়ীভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু থাকবে।”

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, নদী ভাঙনে চরভগবতীপুরে প্রায় ৩৬টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বসতভিটা হারানো পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা প্রশাসনে জমা দেওয়া হবে।

ভাঙনে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মাণ করা একটি মাধ্যমিক স্কুল বিলীন হয়েছে; একটি কমিউনিটি ক্লিনিক সেটাও যেকোনো সময় বিলীন হবে বলে ইউপি চেয়ারম্যান জানান।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে মাত্রা কম। চরাঞ্চলের কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

ভগবতীপুরে চরের ভাঙন রোধে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে; বরাদ্দ আসলেই কাজ শুরু হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা জানান।