সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, ঈদের আগে চাল আনতে গেলে তাদের নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়; পরে জানাজানি হলে তাদের ডেকে নিয়ে বিতরণ করা হয়।
Published : 25 Apr 2023, 07:41 PM
বাগেরহাটে ঈদের আগে বিতরণের জন্য বরাদ্দ ভিজিএফের চাল দেওয়া হয়েছে ঈদের দুইদিন পর।
সোমবার দুপুরে খানপুর ইউনিয়ন পরিষদে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) উপস্থিতিতে এই ৭২ পরিবারকে দশ কেজি করে চাল বিতরণ করেন চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিন।
তালিকায় থাকা দুঃস্থ কয়েকজনের অভিযোগ, ঈদের আগে চাল আনতে গেলে তাদের নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে জানাজানি হলে তাদের ডেকে নিয়ে চাল দেওয়া হয়েছে।
ট্যাগ অফিসারের ভাষ্য, নিয়ম অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান কোনো অবস্থাতেই চাল গুদামে মজুদ করে রাখতে পারেন না।
তবে বাগেরহাট সদরের খানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিনের ভাষ্য, প্রচণ্ড গরমের কারণে ৭২ জন সুবিধাভোগী সময়মতো বাসতে না পারায় চাল বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। পরে তাদের ডেকে এনে চাল দেওয়া হয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় বিষয়টি তদন্ত করার কথা জানিয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, গত রোববার (২৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম থেকে একটি নছিমনে বস্তাভর্তি চাল বের হয়ে যেতে দেখে স্থানীয় লোকজন। সন্দেহ হলে তারা বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করলে রাত ১১টার দিকে বাগেরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল্লাহর নেতৃত্বে একটি দল খানপুর ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শনে যান। তারা গুদামে বেশ কিছু বস্তা ভরতি চাল দেখতে পান। পরে তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে গুদাম তালাবদ্ধ করে চাবি নিয়ে ফিরে যান।
সোমবার দুপুরে প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা ভিজিএফ’র চালের জন্য অসহায়দের করা তালিকা যাচাই বাছাই করেন। পরে তিনি তালিকা ধরে চাল না পাওয়া ৭২ জনের মাঝে তা বিতরণ করেন।
দুস্থদের তালিকায় নাম থাকা রেহানা বেগম, গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েকজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২৬ রমজানে তারা বরাদ্দ দেওয়া ১০ কেজি করে চাল নিতে ইউনিয়ন পরিষদে গেলে চাল দেওয়া হয়ে গেছে বলে জানানো হয়। এই কথা শুনে তারা ফিরে যান। হঠাৎ সোমবার সকালে তালিকা ধরে সবাইকে ফোন করে চাল নিয়ে যেতে বললে তারা চাল নিয়ে যান।
তাদের অভিযোগ, এই ইউনিয়নে সরকারি সাহায্য পাওয়া গরীব মানুষের প্রকৃত তালিকা নেই। যারা সাহায্য পাওয়ার যোগ্য তাদের তালিকায় নাম নেই। ভিজিডি, ভিজিএফ’র কার্ড চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা তাদের পছন্দের লোকদের দেন। অসহায় পরিবারগুলো বারবার তাদের কার্ড দেওয়ার অনুরোধ করলেও তারা পান না। জন্ম নিববন্ধন, মৃত্যু সনদসহ নানা নাগরিক সেবা নিতে হয়রানির শিকার হতে হয়।
প্রশাসন তদন্ত করলে এই ইউনিয়নের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পাবে বলে তারা জানান।
খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তিনবারের সদস্য শেখ জিল্লুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই ইউনিয়ন অনিয়ম দুর্নীতিতে ভরা। প্রতিবাদ করলে মার খেতে হয়। মুখ খুললেই বিপদ। চাল বিতরণে সব সময় অনিয়ম হয়ে আসছে।
“বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ কার্ড আমরা মেম্বার চেয়ারম্যানরা সবাই বিক্রি করে থাকি। এসব কথা বললেই সমস্যা। এত অনিয়মের কোনো প্রতিকার নেই।”
এ ব্যাপারে খানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতি ঈদে অসহায় দুস্থদের জন্য ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেন। ঈদের আগ মুহূর্তে এই চাল বরাদ্দ হাতে পান। এই ইউনিয়নে ৯৪৮ জনের তালিকা তৈরি করে তা বিতরণ শুরু করেন। এ বছর প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে অনেকে আসতে পারেনি; আবার অনেকে চাল না নিয়ে ফিরে যাওয়ায় ৭২ জনকে চাল দেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই ৭২ জনকে চাল দিতে না পারার কথা সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসারকে জানানো হয় বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, “এই চাল না বিতরণ করে রেখে দেওয়ার একটা মিথ্যা অভিযোগ ওঠায় প্রশাসন তদন্তে এসেছে। যে ৭২ জনকে চাল দেওয়া হয়নি তাদের তালিকা ধরে চাল বিতরণ করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়, একটি বিরোধী শক্তি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
ট্যাগ অফিসার সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, অসহায় দুস্থদের জন্য বরাদ্দ হওয়া চাল গত ১৭ এপ্রিল বিতরণ শুরু হয়। একদিনে বিতরণ করা সম্ভব না হওয়ায় চাল থেকে যায়। তবে কতজনের কী পরিমাণ চাল ছিল তা তাকে চেয়ারম্যান জানাননি।
“রোববার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাল থেকে যাওয়ার বিষয়টি আমাকে জানালে আমি আজ সোমবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদে যাই। আমি ও ইউএনও চাল বিতরণ না হওয়ার কোনো তথ্যই জানি না।”
নিয়ম অনুযায়ী চেয়ারম্যান উদ্বৃত্ত চাল কোনো অবস্থাতেই গুদামে মজুদ করে রাখতে পারেন না উল্লেখ করে জাহিদুল বলেন, “তিনি [চেয়ারম্যান] আইন অমান্য করে এই চাল মজুদ রেখেছেন। চেয়ারম্যান এই চালের বিষয়ে আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়েই গুদামে মজুদ রেখে দেন। আজ দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গুদামজাত চাল বিতরণ করা হয়েছে।”
প্রশাসনকে না জানিয়ে অসহায় দুস্থদের চাল ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে মজুদ রাখা যায় কিনা তা জানতে চাইলে বাগেরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল্লাহ বলেন, “এখনই কিছু বলতে পারছি না, বিষয়টি তদন্ত করছি।”
এই বিষয়ে জানতে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া তাছনিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।