“রাতে কেনাকাটা শেষ করে মোবাইলে ফোন দিয়ে তারা বলে বাড়িতে আসতেছে; কিন্তু অনেকটা সময় গেলেও না আসায় আমি মোবাইলে কল দেয়। কিন্তু তারা আর ফোন রিসিভ করেনি।”
Published : 24 Apr 2024, 10:23 PM
ভাগনের বিয়ের কেনাকাটা করতে ভাতিজা বউকে নিয়ে ময়মনসিংহ শহরে রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন আবদুর রহমান। এ ঘটনার পর বিয়ে বাড়ির আনন্দ পরিণত হয় বিষাদে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর বিদ্যাময়ী স্কুলের পেছনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আবদুর রহমান (৬২) সদর উপজেলার উজান বাড়েরা গ্রামের বাসিন্দা। তার সঙ্গে প্রাণ গেছে শেফালি আক্তারের (৪৫)।
পরিবারের সদস্যরা জানান, আবদুর রহমান ও শেফালি শহরের গাঙ্গিনারপাড় গিয়েছিলেন ভাগনে মোহাম্মদ খোকন বিয়ের বাজার করতে। রাতে বিয়ের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার কথা ছিল ভাগনের। বুধবার ছিল স্বজনদের নিয়ে প্রীতিভোজের আয়োজন। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাদের।
বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুই বাড়িতে চলছে দাফন-কাফনের প্রস্তুতি। যাদের বিয়ের দাওয়াতে আসার কথা ছিল তারাই আসছেন শোকের বার্তা শুনে। এমন ঘটনায় হতবাক স্বজন ও এলাকাবাসী।
ফরিদা আক্তার তার স্বামী আবদুর রহমানের ছবি হাতে নিয়ে বাকরুদ্ধ। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
যে বাড়িতে আজকে বিয়ের আনন্দ উল্লাস হওয়ার কথা ছিল; সেই বাড়িতেই চলছে নিহতের স্বজনদের আহাজারি। ভাগনের বিয়ের কেনাকাটা করতে গিয়ে এমন পরিণতি হবে তা কখনও ভাবেননি স্বজনরা।
ফরিদা আক্তার বলছিলেন, “রাতে কেনাকাটা শেষ করে মোবাইলে ফোন দিয়ে তারা বলে বাড়িতে আসতেছে; কিন্তু অনেকটা সময় গেলেও না আসায় আমি মোবাইলে কল দেই। কিন্তু তারা আর ফোন রিসিভ করেনি। কিছুক্ষণ পর শেফালির ছেলে এসে বলে- তার মা ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। এই খবর শোনার পর এলাকার মানুষ গিয়ে দুইজনকে শনাক্ত করে। আমার সব শেষ হয়ে গেল।”
নিহতদের স্বজন মোতালেব হোসেন বলেন, “আমাদের পাশের এলাকা কালিকাপুরে পাত্রী দেখতে গিয়ে পছন্দ হয়। পরে রাতেই বিয়ের বাজার করতে আবদুর রহমান ও শেফালি আক্তার গাঙ্গিনারপাড় যান। সেখান থেকে বাজার করে ইজিবাইকে বিদ্যাময়ীর পাশ দিয়ে আসার সময় জামালপুরগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে দুইজন নিহত হন।
“অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে ১০০ গজ দূরে গিয়ে পড়ে। দুইজনের মরদেহ বেশ কয়েক টুকরো হয়। এমন মৃত্যু আমরা চাইনি।”
কিছুতেই নিজেকে সামাল দিতে পারছেন আবদুর রহমানের ভাগনে মো. খোকন। তার কান্নায় স্তব্ধ এলাকাবাসী।
খোকন বলছিলেন, “বিয়ের সব আয়োজন মামা করেছেন; বাজার করার দায়িত্বও তার ছিল। বাজার করতে গিয়ে মামা আর ভাবি আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে যাবে এমন জানলে, বিয়ের নাম মুখেও নিতাম না।”
প্রতিবেশী তাহমিনা আক্তার বলেন, “আজকে এখানে বিয়ের দাওয়াতে আসার কথা ছিল; কিন্তু আসলাম ঠিকই শোকের বার্তা শুনে। সবই আল্লাহর ইচ্ছা; কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি।”
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাতে জামালপুরগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ইজিবাইকের যাত্রী আবদুর রহমান ও শেফাশি আক্তারের মৃত্যু হয়। বুধবার দুপুরে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
“কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে ঘটনার পর থেকে ইজিবাইক চালককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না; তাকে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হয়তো কারণ জানা যাবে।”