শহীদ মোক্তার হোসেন দাড়িয়ার স্মৃতি ধরে রাখতে জাদুঘর

জাদুঘরে যাতায়াতের সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী জানিয়ে সেটি দ্রুত ঠিক করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

মনোজ সাহা, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2023, 08:26 AM
Updated : 22 Feb 2023, 08:26 AM

মোক্তার হোসেন দাড়িয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজ উপজেলা কোটালীপাড়াকে শত্রুমুক্ত করে ফিরেছিলেন কর্মস্থল খুলনায়। সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদাররা। কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি। এমনকি তার মরদেহটিও পায়নি পরিবার।

কোটালীপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়া মোক্তার হোসেন ছিলেন হেমায়েত বাহিনীর সদস্য।

‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার অবদানকে নতুন প্রজম্মের কাছে তুলে ধরতে কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামে তৈরি করা হয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়া স্মৃতি জাদুঘর।

সম্প্রতি নির্মাণকাজ শেষ হওয়া এই জাদুঘরটি আগামী শনিবার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ। সেদিন ভাঙ্গারহাট তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জনসভাস্থল থেকে স্থাপনাটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর প্রকল্পের আওতায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়া স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করেছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গোপালগঞ্জ অফিস ৮০ লক্ষ ২০ হাজার ৩০৫ টাকা ব্যয়ে এই জাদুঘরটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে ।

মোক্তার হোসেন দাড়িয়ার ছেলে মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, “১৯৭১ সালের নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়। এর আগেই ৩ ডিসেম্বর আমার বাবা ও মুক্তিযোদ্ধারা কোটালীপাড়া উপজেলাকে পাকিস্তান হানাদার মুক্ত করেন।

“এরপর ৭ ডিসেম্বর বাবা তার কর্মস্থল খুলনায় চলে যান। ১৩ ডিসেম্বর খুলনার রূপসা নদীর পাড় থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আমি আমার বাবাকে খুঁজে পাইনি।”

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক টুটুল বলেন, “আমার ধারণা, হানাদার বাহিনী আমার পিতাকে ধরে নিয়ে খুলনার গল্লামারি বধ্যভূমিতে হত্যা করে। বাবার লাশ পর্যন্ত পাইনি। সেই কষ্ট বুকে নিয়েই বড় হয়েছি।”

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাদুঘর করে দিয়েছেন। এটি আমার পিতার স্মৃতিকে অমর করে রাখবে। নতুন প্রজন্ম এর মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানবে।”

জাদুঘর নির্মাণ করায় আনন্দের কথা জানিয়ে আশুতিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আকবর আলী বলেন, “এই জাদুঘর আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানান দেবে। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়ার অম্লান স্মৃতি ধরে রাখা সম্ভব হবে।”

তবে জাদুঘরে যাতায়াতের সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি গ্রামবাসীর পক্ষে থেকে এই সড়কটি দ্রুত চলাচলের উপযোগী করে দেওয়ার জন্য এলজিইডির কাছে দাবি জানাচ্ছি। ”

হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না বলেন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়া আশুতিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে আমাদের গর্বিত করেছেন। জাদুঘর নির্মাণের মধ্যে দিয়ে সরকার এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মানিত করেছেন। এতে আমাদের এলাকার সম্মান অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে।

এজন্য এলজিইডি ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এই জনপ্রতিনিধি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এহসানুল হক বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সূর্যসন্তান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তাদের ত্যাগ ও বীরত্বে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি।

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য এই প্রকল্পের কাজ করতে পেরে আমরা গর্বিত। এটি নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস জানান দেবে। এই কাজগুলো এলজিইডিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়া স্মৃতি জাদুঘরে যাতায়াতের সড়কটি চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন।