যশোরে সম্মোহন করে ‘অর্থ লুট’, তিন ইরানিসহ গ্রেপ্তার ৫

কথোপকথনের এক পর্যায়ে তারা শরিফুল ইসলামের সঙ্গে হাত মেলান এবং ব্যাগ থেকে টাকা বের করে তার সামনে ধরেন; এরপর থেকেই তিনি আগন্তুকদের কথা অনুযায়ী কাজ করতে থাকেন।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2023, 02:41 PM
Updated : 8 May 2023, 02:41 PM

বিশেষ পদ্ধতিতে সুগন্ধি ব্যবহারের মাধ্যমে সম্মোহন করে অর্থ লুটের অভিযোগে ইরানের তিন নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে যশোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

রোববার ঢাকার ভাটারা থেকে বাংলাদেশি দুজনকে এবং তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী যশোরের হোটেল সিটি প্লাজা থেকে ইরানি তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন।

গ্রেপ্তাররা হলেন, ইরানের খালেদ মাহবুবি (৫৪), তার ১৬ বছর বয়সি ছেলে ও ফারিববোরয্ মাসুফি (৫৪) এবং বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের ঘ্যানাসুর গ্রামের খোরশেদ আলম (৫৩) ও বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম ডুমুরিয়ার সাইদুল ইসলাম বাবু (৩৫)।

সোমবার বিকালে যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘ডেভিলস ব্রেথ’ নামের বিশেষ রাসায়নিক ব্যবহার করে প্রতারণার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বিমান তরফদার জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। শুনানি শেষে যশোরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মঞ্জুরুল ইসলাম গ্রেপ্তার চার প্রাপ্তবয়স্ককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি কিশোরটিকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পুলিশের ওসি রূপন কুমার সরকার জানান, গত ৮ এপ্রিল যশোরের অভয়নগর উপজেলার বর্ণী হরিশপুর বাজারে জালাল মোল্লার মার্কেটের মরিয়ম স্টোরের সামনে একটি প্রাইভেটকার থামে। সেটি থেকে তিন-চারজন ব্যক্তি নামেন। তাদের মধ্যে দুইজন ওই দোকানে প্রবেশ করেন। তারা আরবি ভাষায় কথা বলে নারকেল তেল কিনতে চান।

“কথোপকোথনের এক পর্যায়ে তারা দোকানি শরিফুল ইসলামের সঙ্গে হাত মেলান এবং ব্যাগ থেকে টাকা বের করে তার সামনে ধরেন। এতে তিনি সম্মোহিত হয়ে পড়েন এবং আগন্তুকদের কথা অনুযায়ী কাজ করতে থাকেন। এ সময় আগন্তুকরা দোকান থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়ে যায়।”

এ ঘটনায় শরিফুল ইসলাম গত ৫ মে অভয়নগর থানায় মামলা করেন।

ওসি বলেন, ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর হিসেবে নিয়ে অভিযানে নামে ডিবি পুলিশ। তদন্তে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ভিডিওচিত্র সংগ্রহ করা হয়। সেখান থেকে প্রাইভেটকারের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সূত্র ধরে প্রতারকদের নাম ও ঠিকানা শনাক্ত করা হয়। তারপর ঢাকার ভাটরা ও যশোরের আবাসিক হোটেল থেকে উল্লিখিত পাঁচজনকে আটক করা হয়। আটক পাঁচজনকে শরিফুলের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৩৫৯ মার্কিন ডলার, ৩২৫ ভারতীয় মুদ্রা, ১৮ লাখ ৮০ হাজার ইরানি মুদ্রা, ১ হাজার ইরাকি মুদ্রা, ১৮৫ নেপালি মুদ্রা, ১ হাজার ভিয়েতনামের মুদ্রা এবং ৫৪ হাজার ৭০০ টাকা উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এছাড়া ইরানি নাগরিকদের তিনটি পাসপোর্ট, ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, সাতটি মোবাইল ফোন, অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত দুইটি সুগন্ধিও জব্দ করা হয়েছে।