করতোয়া ভরাটের অভিযোগে টিএমএসএসের বিরুদ্ধে মামলা

৩০ এপ্রিল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ওই এলাকায় ভরাটের বিষয়টি জানান দেয় টিএমএসএস।

বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2023, 02:15 PM
Updated : 6 May 2023, 02:15 PM

বগুড়ায় করতোয়া নদীর মূল প্রবাহে মাটি ফেলে ভরাটের অভিযোগে বেসরকারি সংস্থা ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

বৃহস্পতিবার রাতে পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন বগুড়া সদর থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দীকী।

এর আগে ১ মে রাতের আঁধারে মাটি ফেলে নদী প্রবাহ ভরাটের সময় পাঁচটি ট্রাক জব্দ করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বগুড়ার মম-ইন ইকোপার্কের বালা কৈগাড়ী কাঁঠালতলা ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন এলাকা থেকে এসব ট্রাক জব্দ করা হয়। মোমো ইন ইকো পার্ক ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) অন্য অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের একটি।

ওই সময় টিএমএসএসের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার নির্দেশ দেন নির্বাহী হাকিম ও জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. নুরুল ইসলাম। নির্দেশের দুই দিন বাদে এই মামলা করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, পাউবো, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, বগুড়া পৌরসভা, টিএমএসএস ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বেলা) সার্ভেয়ারদের নিয়ে যৌথভাবে করতোয়া নদী জরিপের কাজ চলছে। এই জরিপ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় নদী ভরাট, খনন বা স্থাপনা নির্মাণ স্থগিত রাখার বিষয়ে গত ২০ এপ্রিল একটি নোটিশ জারি করে পাউবো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু টিএমএসএস কর্তৃপক্ষ সেই নোটিশ অমান্য করে নদী ভরাট করছিল।

“এটি বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ছাড়া হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নদী জরিপ চলমান থাকা অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে করতোয়া নদী ভরাটকরণে মামলা রুজু করা হলো।” 

মম ইন ইকোপার্কের বালা কৈগাড়ী কাঁঠালতলা ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন এলাকায় মাটি ও বর্জ্য ফেলে নদীর মূল প্রবাহ বন্ধ ও ভরাটের দায়ে গত ১৮ মার্চ টিএমএসএসকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর জেলা প্রশাসক, পাউবোর খসড়া এক জরিপে শুধুমাত্র ওই এলাকায় নদীর সীমানা জরিপ চালানো হয়। জরিপে নদীর সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়।

এরপর বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং এ ব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসককে একটি স্মারকলিপি দেন। এ সময় আদালতের আদেশ অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে বেলার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়।

তখন জেলা প্রশাসক বলেন, নদীর সীমানা পুনঃরায় নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকায় টিএমএসএসের ভরাট কাজ বন্ধ রাখার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়েছে।

তবে জেলা প্রশাসনের এই মৌখিক নির্দেশনা মানেনি টিএমএসএস। গত ৩০ এপ্রিল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ওই এলাকায় ভরাটের বিষয়টি জানান দেয় টিএমএসএস।

বগুড়ার পরিবেশবাদীরা বলছেন, প্রকাশ্যে পত্রিকায় সংবাদ আকারে বিজ্ঞাপন পাঠিয়ে টিএমএসএস প্রশাসনের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে।

মম ইন ইকোপার্ক এলাকায় টিএমএসএসের বিরুদ্ধে করতোয়া নদীর ৪ দশমিক ৯ একর জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে টিএমএমএসের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক নজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন,  “জনকল্যাণমুখী এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নতুন নয়। বার বার হচ্ছে, আমরা আইনগতভাবে মোকাবিলা করছি।”

তিনি দাবি করেন, “জেলা প্রশাসনের জরিপে উঠে আসা ৪ দশমিক ৯০ একর জমি সরকারের কাছ থেকে ১৯৯৫ সালে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নেওয়া হয়েছে।”

Also Read: নদী দখলের দায়ে ঠেঙ্গামারা মহিলা সংঘের কর্মকর্তার কারাদণ্ড, আসামি পরিবর্তন

Also Read: করতোয়া ভরাট করে সড়ক: ঠেঙ্গামারা মহিলা সংঘকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা