ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনে এটা পারেন কি-না প্রশ্ন করা হলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “পারেন না।”
Published : 21 Mar 2023, 05:54 PM
করতোয়া নদী দখলের দায়ে উত্তরবঙ্গের অন্যতম বেসরকারি সংস্থা ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় ‘সংস্থাটির একজন কর্মকর্তাকে’ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তবে সোমবার ভ্রাম্যমাণ আদালত রায় ঘোষণার সময় সংস্থার যে কর্মকর্তার নামে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল, সেই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম পরিবর্তন করে মঙ্গলবার অন্য একজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
করতোয়া নদীর পাড়ে সংবাদকর্মীদের সামনে রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক নজিবুর রহমানের নামে কারাদণ্ডের আদেশ দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী হাকিম ফিরোজা পারভীন।
মঙ্গলবার সকালে কারাগারে গেছেন টিএমএসএসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বগুড়া শহরতলীর বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের পাশের মোমো ইন ইকো পার্কের ব্যবস্থাপক জাকিরুল ইসলাম। যদিও রায় প্রদানের সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টিএমএসএসের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক নজিবুর রহমান বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাস্থলে ভ্রাম্যমাণ আদালত আমাকে আসামি করে রায় দিয়েছিলেন। পরে আসামি পরিবর্তন করে জাকিরুল ইসলামকে আসামি করা হয়। তিনি আজ কারাগারে গেছেন।
মোমো ইন ইকো পার্ক টিএমএসএসের অন্য অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের একটি বলেও জানান নজিবুর।
রায়ে দেওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের আসামি পরিবর্তন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউএনও ফিরোজা পারভীন সাংবাদিকদের বলেন, “মাটি ভরাটের কাজে দায়িত্বে ছিলেন জাকিরুল ইসলাম; ওখানকার ম্যানেজার। যেহেতু কারাগারে পাঠাইতে হইছে তাকে আইডেন্টিফাই করা হইছে।
“নজিবুর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। টিএমএসএসের পক্ষে তার নাম বলা হয়েছে। পরবর্তীতে যখন কারাগারে পাঠানোর জন্য ইয়ে করা হইল… এই কাজের (নদী ভরাট) জন্য যাকে নির্দেশ দেওয়া ছিল, সে হচ্ছে জাকিরুল। সেজন্য তাকে কারাগারে পাঠানো হইছে। এতে আইনগত কোনো জটিলতা নেই।”
তবে এ ব্যাপারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাস্থলে একজনকে সাজা দিয়ে পরে আদেশ পরিবর্তন করে আরেকজনকে সাজা দেবেন কীভাবে?”
ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনে এটা পারেন কি-না প্রশ্ন করা হলে আমিন উদ্দিন বলেন, “পারেন না।”
সেক্ষেত্রে ভুক্তভোগী হিসেবে কেউ চাইলে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন বলেও পরামর্শ দেন তিনি।
প্রায় একই কথা বলেছেন বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য আব্দুল লতিফ ববি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেছেন, “ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তির বিধান রয়েছে। কোনো অপরাধ সংগঠিত হওয়ার সময় যে ব্যক্তিকে স্পটে পাওয়া যাবে তাকেই শাস্তি প্রদান করতে হবে।”
করতোয়া ভরাট করে সড়ক: ঠেঙ্গামারা মহিলা সংঘকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা
“রায় পরিবর্তন করে অন্য ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ এ ধরনের কাজ করেন তা সম্পূর্ণ বেআইনি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের আইনের সঙ্গে এটা সামঞ্জস্য নয়।“
শনিবার বগুড়ার সদরে করতোয়া নদী ভরাট করে সড়ক নির্মাণের দায়ে বেসরকারি সংস্থা ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘকে (টিএমএসএস) ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে টিএমএসএসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নজিবর রহমানকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ সালের ১৫ ধারায় এ জরিমানা করা হয়।
রায় দেওয়ার পরপরই সেখানে থাকা টিএমএসএসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাতে আপত্তি তুলেন। তখন উপজেলা প্রশাসন ও টিএমএসএসের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিতণ্ডার ফলে কিছুটা হট্টগোল হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায় পরিবর্তনের কথা বলতে থাকেন টিএমএসএসের কর্মকর্তারা। এ সময় সেখানে টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগমও উপস্থিত ছিলেন।
রায় হওয়ার পর টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক ভ্রাম্যমাণ আদালতকে বলেন, “এখানে একটি রাস্তা করা হয়েছে, এটি সাময়িক। এ রাস্তায় স্থানীয় লোকজন চলাচল করে। এখানে পরিবেশের কোনো আইন লঙ্ঘন হয়নি। কারা অভিযোগ করেছে, কারা বলেছে- এটা আপনার অফিসে বসে দেখা উচিত। আজকে আপনি নদী পরিমাপ করতে আসছেন। যথাযথভাবে পরিমাপ করে দেখেন কোথায় টিএমএসএস নদীর মধ্যে আসছে।”
এ সময় তিনি আরও দাবি করেন, জমিটি তার। বালু ব্যবসায়ীরা বালু তোলায় জমিটি নীচু হয়ে গেছে।
তিনি তার দাবির সপক্ষে কিছু কাগজ-পত্রও দাখিল করেন।
তারপর ভ্রাম্যমাণ আদালত টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালকের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে সোমবার নদীর সীমানা যৌথভাবে পরিমাপের জন্য সময় নির্ধারণ করে এবং জরিমানা ও দণ্ডের আদেশ স্থগিত রাখেন।
সোমবার পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে নদীর সীমানা পরিমাপ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখানে নদী দখলের প্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় টিএমএসএসের বিরুদ্ধে দেওয়া আদেশ পুনর্বহাল করা হয়।