করতোয়া ভরাট করে সড়ক: ঠেঙ্গামারা মহিলা সংঘকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা

টিএমএসএস বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলার কথা বলছে।

বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2023, 01:21 PM
Updated : 20 March 2023, 01:21 PM

বগুড়া সদরে করতোয়া নদী ভরাট করে সড়ক নির্মাণের দায়ে বেসরকারি সংস্থা ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সোমবার দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী হাকিম ফিরোজা পারভীন এ রায় দেন।

যদিও ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) বিষয়টিকে আইনিভাবে মোকাবিলার করার কথা জানিয়েছে।

এর আগে শনিবার নদী ভরাটের অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। সেদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেছিল।

তবে নদীর সীমানা পরিমাপের জন্য টিএমএসএস সময় চেয়েছিল। সোমবার নদীর সীমানা পরিমাপ শেষে সেই জরিমানা বহাল রাখা হয়েছে।

ইউএনও ফিরোজা পারভীন সাংবাদিকদের বলেন, “শনিবার করতোয়া নদী ভরাটের অভিযোগে ঘটনাস্থলে এসেছিলাম। তখন আমি নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তারা টিএমএসএসের জন্য কাজ করছেন। আমার কাছে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা আছে।”

“আজকে করতোয়া নদী পরিমাপের সীমানা নির্ধারণের দিন ছিল। পরিমাপে দেখা যায়, করতোয়ার মাঝ দিয়ে বালু দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “এ ছাড়া টিএমএসএসের অংশে ময়লা ও বালু ফেলা হচ্ছিল; আমি সেই কাজ বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। কিন্তু আজ এসে দেখি সেই কাজ চলমান।”

“এজন্য পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ সালের ১৫ ধারায় টিএমএসএসকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। অনাদায়ে একজনকে তিন মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।”

নির্বাহী হাকিম ফিরোজা আরও বলেন, “টিএমএসএস জরিমানার টাকা পরিশোধ করবে না। তাই কারাদাণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।”

উপজেলা প্রশাসন জানায়, করতোয়া নদীর নওদাপাড়া এলাকায় নদী ভরাটের খবর পেয়ে শনিবার উপজেলা প্রশাসন সেখানে গিয়ে সত্যতা পায়। সেদিন নদী পরিমাপও করা হয়।

পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী হাকিম। অনাদায়ে টিএমএসএসের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক নজিবর রহমানকে তিন মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত রায় দেওয়ার পরপরই সেখানে থাকা টিএমএসএসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাতে আপত্তি তুলেন। তখন উপজেলা প্রশাসন ও টিএমএসএসের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিতণ্ডার ফলে কিছুটা হট্টগোল হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায় পরিবর্তনের কথা বলতে থাকেন টিএমএসএসের কর্মকর্তারা। এ সময় সেখানে টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগমও উপস্থিত ছিলেন।    

রায় হওয়ার পর টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক ভ্রাম্যমাণ আদালতকে বলেন, “এখানে একটি রাস্তা করা হয়েছে, এটি সাময়িক। এ রাস্তায় স্থানীয় লোকজন চলাচল করে। এখানে পরিবেশের কোনো আইন লঙ্ঘন হয়নি। কারা অভিযোগ করেছে, কারা বলেছে- এটা আপনার অফিসে বসে দেখা উচিত। আজকে আপনি নদী পরিমাপ করতে আসছেন। যথাযথভাবে পরিমাপ করে দেখেন কোথায় টিএমএসএস নদীর মধ্যে আসছে।”

এ সময় তিনি আরও দাবি করেন, জমিটি তার। বালু ব্যবসায়ীরা বালু তোলায় জমিটি নীচু হয়ে গেছে।

এ সময় তিনি তার দাবির সপক্ষে কিছু কাগজ-পত্রও দাখিল করেন।

তারপর ভ্রাম্যমাণ আদালত টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালকের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে সোমবার নদীর সীমানা যৌথভাবে পরিমাপের জন্য সময় নির্ধারণ করে এবং জরিমানা ও দণ্ডের আদেশ স্থগিত রাখেন।

সোমবার পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে নদীর সীমানা পরিমাপ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখানে নদী দখলের প্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় টিএমএসএসের বিরুদ্ধে দেওয়া আদেশ পুনর্বহাল করা হয়।

তবে টিএমএসএসের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক নজিবুর রহমান বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ রায়ের বিরোধিতা করেছি। তারা বলেছেন, নিয়মিত মামলা করবেন। আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় সেটি মোকাবিলা করব। আমরা আমাদের আবস্থানে সঠিক আছি।“

স্থানীয় লোকজন জানান, করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে নওদাপাড়া এলাকায় টিএমএসএসের জায়গা-জমি ও কার্যালয় রয়েছে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য সেখানে বালু ফেলে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছিল।