ওবায়দুল কাদেরকে চ্যালেঞ্জ হিরো আলমের, ‘আসেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি’

রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ইভিএমে ভোট পুনঃগণনা হয় না। ফলাফলের রি-প্রিন্ট কপি দেওয়া হবে।

বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2023, 12:54 PM
Updated : 5 Feb 2023, 12:54 PM

বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। 

সড়ক পরিবেহন ও সেতুমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “হিরো আলমের সঙ্গে একটা নির্বাচনে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ও আপনি দলীয়ভাবে দাঁড়ান। এরপর আপনি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেখেন খেলা হয় কি-না। খেলার জন্য নাকি উনি মাঠে প্লেয়ার খুঁজে পান না!” 

রোববার দুপুরে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সোশাল মিডিয়ায় আলোচিত হিরো আলম এসব কথা বলেন। 

এদিন তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলামের কাছে ফলাফল প্রত্যাখান করে ভোট ‘পুনঃগণনার’ আবেদন করেন। 

সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগের ফলে শূন্য ছয়টি আসনে বুধবার উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়। এতে বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনে প্রার্থী হন সোশাল মিডিয়ায় আলোচিত মুখ হিরো আলম, যার আসল নাম আশরাফুল আলম। 

ভোটের ফল ঘোষণার পর দেখা যায়, বগুড়া-৪ আসনে ৮৩৪ ভোটে সরকার সমর্থক প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে হেরেছেন হিরো আলম।

তিনি এই ফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ভোটে তিনি জয়ী হলেও ফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে।

এই অবস্থার মধ্যেই শনিবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেন, সংসদের সব আসন ছাড়ার পর বিএনপি হিরো আলমকে বগুড়ায় উপ-নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছিল।

তিনি বলেন, “হিরো আলমের জন্য এত দরদ উঠলো ফখরুল সাহেবের, ফখরুল ভেবেছিলেন হিরো আলম  জিতে যাবে! হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে।”

রোববার সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, “সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্যার বলেছেন, হিরো আলম জিরো হয়ে গিয়েছে। তবে হিরো আলম কখনও জিরো হয় না। যারা হিরোকে জিরো বানাতে চায় তারাই জিরো হয়ে গিয়েছে।” 

“সেতুমন্ত্রী আমাকে তাচ্ছিল্য করে কথা বলেছেন। তবে একজন মন্ত্রী দেশের নাগরিককে তাচ্ছিল্য করে কথা বলতে পারেন না। তিনি কথায় কথায় বলেন, আসুন খেলা হবে। শক্তিশালী দলের সঙ্গে খেলতে চান। আমি ওবায়দুল স্যারকে জোর গলায় বলতে চাই, খেলা সবার সঙ্গে করতে হবে না৷ 

হিরো আলম বলেন, “আমার সঙ্গে একটু প্রতি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে ভোটারদের ভয় না দেখিয়ে সুষ্ঠু ভোট দিয়ে দেখেন। উনি কেন আমাকে ছোট করে কথা বলেন। উনাকে বলবো, বগুড়া-৪ থেকে ভোট করুন, আমাকে যেই আসন থেকে পরাজিত করে দেওয়া হয়েছে।”  

বিএনপি তার পক্ষে কাজ করছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সোশাল মিডিয়ায় আলোচিত এই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বলেন, “বিএনপি আমার পক্ষে কাজ করলে ভোটের দিন তারা মাঠেই থাকতো। বিএনপির কোনো লোক আমার সঙ্গে ছিলো না। এসব কিছু লোকের বানানো কথা। শুধু বিএনপির মির্জা ফখরুল স্যার নয়, সারা বিশ্ব ও বাংলাদেশ আমার পক্ষে কথা বলেছে।”  

হিরো আলম আরও বলেন, “আমি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আগামীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই, যেখানে সব দল অংশগ্রহণ করবে। সবাই নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে।” 

ফল প্রত্যাখান, ভোট ‘পুনঃগণনার’ আবেদন 

দুপুরে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেরিয়ে হিরো আলম জানান, তিনি ৪৫টি কেন্দ্রে ভোট ‘পুনঃগণনার’ আবেদন করেছেন। 

তিনি বলেন, “তবে কবে ফলাফল আবারও গণনা করবে সেই বিষয়ে কিছু জানায়নি। যদি তারা সাড়া না দেয় আমি হাই কোর্টে যাব।” 

আবেদন পাওয়ার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোট পুনঃগণনার কোনো সুযোগ নেই এখন। ইভিএমে ভোট হওয়ার পর ফলাফলের প্রিন্টেড কপি চেয়েছেন। কিন্তু ওটা ভোটের পরেই উনাকে দেওয়া হয়েছে। আবার চাইলে দেওয়া হবে।” 

“প্রিন্টেড কপিতে যোগ বিয়োগ যদি ভুল থাকে তবে তিনি তা বলতে পারেন। গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। আবেদন পাওয়ার পর আমি সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি এবং বিধি মোতাবেক ব্যাবস্থা নিতে বলেছি। 

“বিষয়টি আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমকেও জানানো হবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনকেও আবেদনের বিষয় জানিয়েছি।” 

ইভিএমে পুনঃগণনা যেভাবে 

ইভিএমে ভোট পুনগণনায় প্রতিটি ভোট আলাদা আলাদাভাবে গণনা সম্ভব না হলেও কেউ চ্যালেঞ্জ করলে দীর্ঘ সময় পরেও ‘অডিট কার্ডে’ সংরংক্ষিত কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের পুনঃপ্রিন্ট করা হয়। ইভিএমের ভোটের তথ্য সংরক্ষিত থাকে দুটি কার্ডে, একটি হল পোলিং কার্ড, আরেকটি অডিট কার্ড। পোলিং কার্ডে ভোটের ডেটা থাকে, অডিট কার্ডে ফলাফলের ডেটা থাকে। 

একযুগ ধরে ইভিএম চালু হলেও ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রথম পুনঃগণনার রেকর্ড রয়েছে ইসির। 

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট হয়। কিন্তু উত্তর সিটির ৬ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের এক প্রার্থী ভোট পুনঃগণনার জন্য নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল ওই ওয়ার্ডের ভোট পুনঃগণনার আদেশ দেন। 

এরপর গত বছর ৬ নভেম্বর ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়,পুনঃগণনার জন্য নির্বাচনী মালামালের সিলগালা বস্তা খোলা হয়। ইভিএম মেশিনে অডিটকার্ড প্রবেশ করিয়ে তা থেকে ফলাফল দেখা হয়। নির্বাচনের দিন ঘোষিত ফলাফলের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। অডিট কার্ডের ফলাফল এবং ঘোষিত ফলাফল একই পাওয়া যায়। 

“ইভিএম এ ভোট গ্রহণ করা হলেও তা পুনঃগণনা করা যায়। এবারই প্রথম আদালতের আদেশে ইভিএমের ভোটের ফলাফল পুনঃগণনা করা হল।” 

পুনঃগণনার পদ্ধতির বিষয়ে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান ইতোমধ্যে বলেন, “কার্ডের মধ্যে ডেটাগুলো সংরক্ষিত থাকে। পোলিং কার্ড ও অডিট কার্ড সংরক্ষণ করে রাখা হয়। সে কার্ডটা নিয়ে আবার যখন ইভিএম মেশিনে দেওয়া হয়, তখন তা প্রদর্শন করে। কেউ যখন চ্যালেঞ্জ করবেন, তখন এটা দেখানো যাবে। এটার প্রিন্টেড কপিটাই ভোটের পর সংশ্লিষ্ট সবাই সাইন করেছিল। এটা দুই বছর, পাঁচ বছর পরে দেখতে চাইলেও অডিট কার্ডে থাকবে।” 

আরও পড়ুন: