সড়কে দুর্ঘটনায় বছরে ক্ষতি ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি: বিআরটিএ চেয়ারম্যান।
Published : 20 Apr 2024, 11:34 PM
গাড়ির চালকদের মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স হবে ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স। ছাপানো লাইসেন্স না থাকলেও সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তা বিবেচনায় নিয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিতে বলেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।
শনিবার দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনালে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তুলে ধরে তিনি দুর্ঘটনা রোধে বিআরটিএর নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ, গাড়ি চালকদের লাইসেন্স দিতে ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া সহজ করা, টার্মিনালভিত্তিক ট্রেনিং ব্যবস্থা চালু, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কথা বলেন।
বিআরটিএ আয়োজিত ‘সড়ক নিরাপত্তামূলক আলোচনা সভায়’ সংস্থার চেয়ারম্যান বলেন, “বাংলাদেশ বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আমাদের জিডিপি লস হয়, এটাকে যদি পার্সেন্টে হিসাব করি মোট জিডিপির মোর দ্যান ১ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি লস হয় শুধু সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। এটা তো শুধু আর্থিক হিসাবের কথা বললাম।
”একটা কর্মক্ষম ব্যক্তি যদি কোনো পরিবারের মারা যায়, তাহলে তো পুরো পরিবার ধ্বংস।”
‘ই-ড্রাইভিং লাইসেন্সই মূল লাইসেন্স’
নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার কারণে ড্রাইভিং লাইসেন্সের হার্ডকপি বা স্মার্ট কার্ড দিতে সমস্যার হওয়ার কথা সভায় তুলে ধরেন নূর মোহাম্মদ। এজন্য চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি থেকে চালু করা ই-পেপার ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে সেটেই মূল লাইসেন্স বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে হার্ড কপির জন্য কেউ মরিয়া যেন না হয়। এটা ওয়েল সার্কুলেটেড। ই-ড্রাইভিং লাইসেন্সই মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স। এটা মোবাইলে প্রদর্শন করে গাড়ি চালনা করা যাবে।
”কেউ যদি মনে করেন পুলিশ এটা মানছে না, ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখানোর পরও পুলিশ মামলা করেছে তাহলে নির্দিষ্ট করে সেই পুলিশের নাম ফোন নম্বর লিখে আমাদেরকে জানালে আমরা কিন্তু পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেটা নিয়ে লিখব।”
ই-ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়টি কোনো পুলিশ সদস্যের না জানার বিষয়টি আইনের লোক হিসেবে ‘তার ব্যর্থতা’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সেটার জন্য ওই পুলিশ সদস্য দায়ী থাকবে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
লাইসেন্স নিয়ে যাদের সমস্যা আছে তাদের ‘তারিখ দেওয়া বন্ধ করে’ ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মতো সেবা দেওয়ার জন্য বিআরটিএ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান।
ডোপ টেস্ট সহজ করা হচ্ছে
গাড়িচালকদের লাইসেন্স পেতে ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হচ্ছে জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, “আপনাদের প্রস্তাবে ডোপ টেস্ট ডিজিটাল করার প্রস্তাব এসেছে। ডোপ টেস্ট নিয়ে প্রথমে আমরা কিছু সমস্যা ফেইস করেছিলাম। এখন এটা নাই বললেই চলে। আমরা কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে একাধিক মিটিং করে একটা অ্যাপ প্রস্তুত করেছি। এটা এখনও চালু হয়নি। চালু হলে বারবার অফিসে যেতে হবে না।”
অভিযান অব্যাহত থাকবে
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, “চালকরা স্বেচ্ছায় একটা পিঁপড়েও মারতে চায় না। কিন্তু নানা পারিপার্শ্বিক কারণে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। সড়কে যান চলাচল ব্যতীত পাটকাঠি শুকানো বা অন্য যে কোন কাজে ব্যবহার করা বেআইনি। এজন্য সবাইকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। জেলা উপজেলায় সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোকে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।”
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রমকে আরও প্রচার করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এছাড়া নানা ধরনের ট্রেনিং চালু আছে, সেটা আমরা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। গতকাল শুক্রবারও সারা দেশের ৬৪টি জেলায় আমরা ওভারস্পিড নিয়ন্ত্রণে ৪০৫টি মামলায় ১০ লাখের বেশি টাকা জরিমানা করেছি৷ এই অভিযান প্রতিদিনই চলমান থাকবে।”
ফিটনেসবিহীন গাড়ি পেলেই ডাম্পিং
ফিটনেসবিহীন গাড়ি পেলেই ডাম্পিং করার হুঁশিয়ারি দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, “এখানে কিন্তু জরিমানা করা হবে না, জরিমানা করে খুব একটা লাভ হয় না। প্রয়োজনে আমরা সময় দেব। ওই সময়ের মধ্যে যদি কাগজপত্র আপ টু ডেট করে না নেয়, ওই গাড়ি আমরা সিস্টেম থেকে ডিলিট করে দেব।”
গাড়ির রোড পারমিট অবশ্যেই হালনাগাদ থাকতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেটার জন্য আমাদের যা যা করা দরকার আমরা বসে করব। কোনভাবেই সড়কে রুট পারমিটবিহীন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে নামা যাবে না। এক্ষেত্রে চালকদের যত ধরনের সহযোগিতা দরকার আপনারা আপনাদের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে আমাদের কাছে পেশ করবেন, আমরা সংবেদনশীলভাবে সর্বোচ্চ সহযোগিতা আপনাদেরকে করব।”
টার্মিনালভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে
চালকদের টার্মিনালভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, “আপনারা ট্রেনিং এর কথা বলেছেন, পেশাদারদের ট্রেনিং ব্যবস্থা চালু আছে। আর ব্যাপক ট্রেনিং এর জন্য আমরা চিন্তা করেছি টার্মিনালভিত্তিক ট্রেনিং আমরা দেব৷ আর এ ধরনের অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামও আমরা ঘনঘন করব। যাতে চালক, যাত্রী থেকে শুরু করে সকল স্টেকহোল্ডাররা আরও বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল হয়।”
এর আগে চালক ও মালিকপক্ষের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি ওসমান আলী, মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম।
ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ছাদিকুর রহমান হিরুর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন মহাখালী বাস টার্মিনালের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক, ট্রাফিক গুলশান বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার আবুল মোমেন, বিআরটিএর রোড সেইফটি বিভাগের পরিচালক শেখ মো. মাহবুব-ই-রব্বানী বক্তব্য রাখেন।