র্যাব জানায়, তাদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, গুলি, র্যাব ও ডিজিএফআইয়ের নকল আইডি কার্ড, মোবাইল, মাইক্রোবাস, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং নগদ টাকা জব্দ করা হয়।
Published : 02 Nov 2023, 08:11 PM
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় ‘র্যাব-ডিবির পরিচয়ে’ চার ‘অপহরণকারীকে’ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় অপহৃত তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের এ তথ্য জানান ময়মনসিংহ র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার বাসিন্দা রাসেল মাহবুবুল (৪৩), একই উপজেলার বাসিন্দা মুছা শেখ (২৪), মুন্সীগঞ্জের মনির হোসেন (৪০) এবং ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বাসিন্দা সবুজ বিশ্বাস (২৪)।
উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বাসিন্দা দুলাল মিয়ার ছেলে আসাদুজ্জামান আসাদ (২৮), ত্রিশাল উপজেলার বাসিন্দা মৃত কোরবান আলীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম (৩৪) ও টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলার বাসিন্দা মৃত বানিছ তারুকদারের ছেলে রফিকুল তালুকদার (৩৬)।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তাররা র্যাব-ডিবিসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পরিচয় ব্যবহার করে বিয়ে, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ নানা অপরাধ করে আসছিলেন। বুধবার বিকালে ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচটি গুলি, দুইটি করে র্যাব ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) নকল আইডি কার্ড, পাঁচটি বাটন মোবাইল, একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং নগদ ৬৬ হাজার ৫৮৪ টাকা জব্দ করা হয়।
র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ভুঞাপুর উপজেলার রফিকুল ইসলাম পেশায় একজন মাংস ব্যবসায়ী। তিনি বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভুঞাপুর থানার গোবিন্দাস বাজারে নিজ দোকানে গরুর মাংস বিক্রি করছিলেন।
“হঠাৎ সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস তার দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে ৬-৭ জন লোক নেমে প্রথমে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে চোরাই মাংস বিক্রি করছে বলে রফিকুলকে গাড়িতে উঠতে বলেন।”
তাদের সঙ্গে যেতে না চাইলে দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে রফিকুলকে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তুলেন তারা। এ সময় গ্রেপ্তার রাসেল মাহবুবুল নিজেকে র্যাবের মেজর পরিচয় দেন এবং তাকে গাড়িতে তুলে বেধড়ক পিটুনি দিয়ে ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
তিনি আরও বলেন, সেখান থেকে ফেরার পথে সকাল ১১টার দিকে মুক্তাগাছা উপজেলার নিমুরিয়া হাইস্কুলের সামনের রাস্তায় এসে গাড়িটি দাঁড়ায়। এরপর সেখানে বাংলালিংক কোম্পানির সেলস ম্যান আসাদুজ্জামান আসাদকে মোটরসাইকেল থামানোর জন্য সিগন্যাল দেন আসামিরা। তখন আসাদ দাঁড়ান।
মোটরসাইকেল দাঁড় করাতেই গাড়িতে থাকা অন্য আসামিরা র্যাব এবং ডিজিএফআইয়ের আইডি কার্ড দেখিয়ে আসাদকে গাড়িতে তোলেন। আরেকজন মোটরসাইকেলটি চালিয়ে অন্যত্র নিয়ে যায়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আসাদকে গাড়ির সিটের নিচে মাথা রেখে গাছের মোটা ডাল দিয়ে সারা শরীর ও পায়ে পেটানো হয়। তার কাছে মুক্তিপণ হিসেবে চাওয়া হয় এক লাখ টাকা।
“ওই দিন দুপুর ২টার দিকে ত্রিশাল উপজেলার বাগান গ্রামের রাঙ্গামাটিয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মুদি দোকানের কর্মচারী হাফিজুল ইসলামকে ডাক দেন।
“তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে হাফিজুল কাছে আসলে রাসেল মাহবুবুল আবারও নিজেকে র্যাবের মেজর পরিচয় দিয়ে তাকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে হত্যার হুমকি দিয়ে ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা দেয়।”
অধিনায়ক মোহাম্মদ মহিবুল বলেন, “খবর পেয়ে ওইদিন এই চক্রের চার সদস্যকে ভালুকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে আরও ছয়জন সহযোগী রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে র্যাব কাজ করছে।
“রাসেল র্যাবের মেজর পরিচয় দিয়ে তিনটি বিয়ে এবং একাধিক অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তার নামে চারটি মামলা রয়েছে। মনিরের নামে একটি মামলা রয়েছে। বাকিদের বিষয়ে আরও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।”
মামলা দিয়ে তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয় বলে জানান তিনি।
উদ্ধার হওয়া আসাদুজ্জামান আসাদ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কেঁদে বলেন, “র্যাবের মেজর পরিচয় দিয়ে রাসেল আমার কাছে ছয় লাখ টাকা দাবি করে। তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গাড়িতে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী নির্যাতন করে। আমাদের উদ্ধার করায় প্রাণে বেঁচে গেছি।”
এ সময় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।