সড়কে পানি থাকায় লংগদু সারাদেশ থেকেই এক প্রকার বিচ্ছিন্ন।
Published : 09 Aug 2023, 05:32 PM
খাগড়াছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও প্লাবিত নিচু এলাকা। দীঘিনালা উপজেলায় তিন ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে আছে অন্তত ৯০০ পরিবার।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে ভাটিতে থাকা মেরুং ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের সাত আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ।
এদিকে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের সহজ রাস্তা রয়েছে খাগড়াছড়ি হয়ে। কিন্তু এখন সড়কে পানি থাকায় লংগদুর সঙ্গে খাগড়াছড়ির যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বলতে গেলে, লংগদু সারাদেশ থেকেই বিচ্ছিন্ন।
মঙ্গলবার রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় মাইনী নদীর পানি উজানে কমলেও মেরুংয়ে এসে স্থির রয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে আছে আমনের মাঠ, শতাধিক পুকুর।
দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, “তিন হাজার ৭০০ হেক্টর আমনের মধ্যে ৪৫৩ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। আর ৪৫০ হেক্টর আউশের মধ্যে ২৮ হেক্টর জমি ক্ষতি হয়েছে। ৩৭ হেক্টর বীজতলার মধ্যে ১৮ হেক্টরই পানিতে তলিয়ে গেছে। মোট ৫২৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। উপজেলায় দেড় হাজার কৃষক এতে ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, “১০ শতাংশের বেশি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হলে কৃষকদের আর্থিকভাবে প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেরুং, তারাবুনিয়া এলাকার কৃষক।”
মেরুং ইউনিয়নের চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, “এক মাস আগে তিন কানি জমিতে আমনের চারা রোপণ করেছি। এখন তা পানির নীচে। চারদিন ধরে এ অবস্থা। পানি কমার কোনো লক্ষণ নেই।
“প্রতি কানিতে চার হাজার টাকা করে তিন কানিতে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হবে। সময়ও কম। কৃষিবিভাগ যদি সহায়তা করে ভালো হয়।”
মেরুং ইউনিয়নে আর্মি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকার চাষি খোরশেদ আলম মাত্র ১৫ দিন আগে দুই একর জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, “সবগুলো ধানের চারা পানির নিচে। এসব চারার আর আশা-ভরসা নেই। সব নষ্ট হয়ে গেছে।”
এদিকে বন্যার পানিতে এখনও ডুবে আছে মেরুং বাজার। এখনও পানির নিচে আছে দেড় শতাধিক দোকান।
মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ বেগম লাকি বলেন, “নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে এক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়। এর মধ্যে সাতটি আশ্রয়কেন্দ্রে আড়াইশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণসমাগ্রী পেয়েছি এবং তা মানুষের কাছে পৌঁছানো হয়েছে।
“ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গতদের আমরা প্রতিবেলায় রান্না করে খাওয়াচ্ছি। এ ছাড়া কৃষক ও মৎসজীবীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে সেনাবাহিনীর দীঘিনালা জোন। দুপুরে কবাখালি ও মেরুংয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়।
এ সময় সেনাবাহিনীর দীঘিনালা জোনের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর নাফিজ বলেন, “যতদিন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হয় ততদিন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।”
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, “বন্যা দুর্গত মানুষের সহায়তায় ১৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়েছে।”