আত্মসমর্পণ করছেন আরও ৩ শতাধিক ‘চরমপন্থি’

র‌্যাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মগোপনে থাকা বেশ কয়েকটি সক্রিয় দলের তিন শতাধিক সদস্য ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের সম্মত হন।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2023, 03:02 PM
Updated : 20 May 2023, 03:02 PM

সিরাজগঞ্জে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন নিষিদ্ধঘোষিত সশস্ত্র রাজনৈতিক দলের তিন শতাধিক সদস্য।

রোববার সাত জেলার ৩২৩ জন ‘চরমপন্থির’ আত্মসমপর্ণ উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় র‌্যাব-১২ এর সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

সেখানেই তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করবেন বলে র‌্যাব-১২ এর অধিনায়ক ও পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মারুফ হোসেন জানান।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও এ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, র‌্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক এম খুরশীদ হোসেন উপস্থিত থাকবেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বেশ কিছু জেলা এক সময় চরমপন্থিদের দাপট ছিল।

ষাট-সত্তরের দশকে বামপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে এদের অনেকের আবির্ভাব হলেও পরে একসময় অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এর মধ্যে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-লাল পতাকা), পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি (এমবিআরএম) ও পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি (জনযুদ্ধ) অন্যতম।

একসময় নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হতে থাকে তারা। চলতে থাকে একে অপরকে হত্যা। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়ায়।

এ অবস্থায় ১৯৯৮ সালে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন চরমপন্থি দলের শীর্ষ নেতাসহ শতাধিক সদস্য। এরপর ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল পাবনায় পুলিশের কাছে ৫৯৬ চরমপন্থি আত্মসমর্পণ করেন।

র‌্যাব জানায়, প্রায় দুই দশক ধরে চরমপন্থিদের দমনে র‌্যাব কাজ করছে। `বন্দুকযুদ্ধে’ শীর্ষ কয়েক নেতা নিহত হলেও থেমে থাকেনি তাদের কর্মকাণ্ড।

২০২০ সালে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদকে চরমপন্থিদের আগ্রাসন থেকে রক্ষায় তাদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

র‌্যাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মগোপনে থাকা বেশ কয়েকটি সক্রিয় দলের তিন শতাধিক সদস্য ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের সম্মত হন।

এরই ধারাবাহিকতায় রোববার দুই শতাধিক অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করবেন চরমপন্থি দলের ৩২৩ সদস্য। এর মধ্যে পাবনার ১৮০, সিরাজগঞ্জের ১১, টাঙ্গাইলের ৭৪, রাজবাড়ীর ৫৪, মেহেরপুরের দুই, কুষ্টিয়া ও বগুড়ার একজন করে সদস্য আছেন।

তাদের মধ্যে রাজবাড়ির মনির ও পাবনার দুলাল জানান, লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে দুর্বিসহ ফেরারি জীবন আর তাদের ভালো লাগে না। তাই তারা দলবল নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সিরাজগঞ্জের দায়িত্বে থাকা চরমপন্থি দলের নেতা মোহাম্মদ সাধু বলেন, “র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্র জমাদানের উদ্যোগে আমরা রাজি হয়েছি। এখন আমরা সামাজিক স্বীকৃতি চাই। আমাদের পুনর্বাসিত করতে আশ্বস্ত করা হয়েছে। শ্রমিকের কাজ করে হলেও ডাল-ভাত খেয়ে সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।”

র‌্যাব ১২-এর অধিনায়ক মারুফ হোসেন বলেন, “চরমপন্থি দলের সদস্যরা বিভিন্ন সোর্সে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা এখন ভুল পথ থেকে মূলধারায় ফিরে আসতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় র‌্যাবের উদ্যোগে রোববার তিন শতাধিক চরমপন্থি সদস্য আত্মসমর্পণ করবেন। পাশাপাশি তারা ২ শতাধিক অস্ত্র জমা দেবে।

“এসব চরমপন্থি দলের সদস্যরা আত্মসর্মপণ করার পর খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ ছাড়া ছোটখাট অপরাধগুলো সাধারণ ক্ষমার আওতায় আসবে। আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো নিষ্পত্তি হবে।”

এ র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, আত্মসর্মপণ করা চরমপন্থি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ‘উদয়ের পথে’ নামে একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেওয়া হবে। এরই মধ্যে এসব পরিবারের ৩০ জন নারী সদস্যকে স্বাবলম্বী করতে হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হবে।

পাশাপাশি মাছ চাষ, গরু বা মুরগির খামার, রিকশা ও সেলাই মেশিন প্রদানের মাধ্যমে চরমপন্থি নেতা ও সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলে এ র‌্যাব কর্মকর্তা জানান।