কবির শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী জন্মের শহরে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে তাকে সমাহিত করা হয়।
Published : 27 Sep 2022, 11:55 PM
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে তার সমাধিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কবির শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী জন্মের শহরে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে তাকে সমাহিত করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মিনহাজুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মির্জা নাসির উদ্দীন, অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান বাবু উপস্থিত ছিলেন।
সৈয়দ শামসুল হকের ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ বলেন, “আমার বাবা এখানে সাহিত হয়েছেন ৬ বছর ধরে। যেদিন থেকে তিনি এখানে সাহিত হন আমিও হয়ে গেছি বাবার মত কুড়িগ্রামের সন্তান। আমরা সকলের মুখে শুনছি এখানে তার নামে কমপ্লেক্স করা হবে। তবে কবে নাগাদ করা হবে আমারদের কারোরই জানা নেই। দ্রুত কমপ্লেক্সেটি হলে আমাদের সবার ভালো লাগত।”
বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী লেখক হিসেবে খ্যাত সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরের থানা পাড়ার পৈত্রিক নিবাসে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ হক আট ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও মা হালিমা খাতুন। বাবা ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার।
১৯৬৪ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন শামসুল হক। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৪ সালে একুশে পদক এবং ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়। এছাড়া সাহিত্যে তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল স্বর্ণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
১৯৫০-এর দশকে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস দেয়ালের দেশ। এছাড়াও তার লেখা অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে খেলারাম খেলে যা, নিষিদ্ধ লোবান, সীমানা ছাড়িয়ে, নীল দংশন, বারো দিনের জীবন, তুমি সেই তরবারী, কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন ও নির্বাসিতা।
তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে একদা এক রাজ্যে, বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা, পরানের গহীন ভিতর, অপর পুরুষ, অগ্নি ও জলের কবিতা।
পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় ও নুরুলদীনের সারা জীবন সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যনাট্য।
সৈয়দ শামসুল হক মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত তিনি বেশ কিছু সিনেমার চিত্রনাট্য লিখে সুনাম কুড়িয়েছেন। যেমন- মাটির পাহাড়, তোমার আমার, কাচ কাটা হীরে, বড় ভালো লোক ছিল ইত্যাদি। তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন।
১৯৭১ সালের নভেম্বরে তিনি লন্ডন চলে যান। সেখানে বিবিসির বাংলা খবর পাঠক হিসেবে চাকরি করেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসর্মপণের খবর পাঠ করেছিলেন তিনি।
সৈয়দ শামসুল হক লিখেছিলেন, "জন্মে জন্মে বার বার কবি হয়ে ফিরে আসব এই বাংলায়।"