ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের বক্ষে থাকা প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে দুপুর থেকে প্রচণ্ড বেগে বাতাস বইছে, কোথাও কোথাও গাছপালা ও কাঁচা বাড়িঘর ভেঙে পড়ছে; তবে জলোচ্ছ্বাস বা পানির তীব্রতা তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (সার্বিক) ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান বিভীষণ কান্তি দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেখানে প্রচণ্ড বাতাস বইছিল। বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে পারে। সেখানকার আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজন নিরাপদে আছেন। আমাদের কাছে এখনও কোনো খারাপ তথ্য আসেনি।”
আবহাওয়া কার্যালয়ের বরাত দিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা আরও বলেন, “এখন ভাটার সময় চলছে। সেন্ট মার্টিনে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা নেই।”
আবহাওয়া কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঝড়টি সেন্ট মার্টিন ও টেকনাফের শেষাংশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। সেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার।
ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে শনিবার দুপুরে পরিবারের ১০ সদস্যকে নিয়ে সেন্ট মার্টিন সৈকত সংলগ্ন হোটেল ব্লু মেরিনে উঠেন সেন্ট মার্টিন স্পিডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
রোববার দুপুর দেড়টার দিকে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন প্রচণ্ড বাতাস বইছে। আশপাশ থেকে গাছপালা ভেঙে পড়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আকাশ অন্ধকার, সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে।”
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আকতার কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন মনে হয়, ঝড় শুরু হয়ে গেছে। প্রচণ্ড রকমভাবে আশপাশে তছনছ করছে। ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে বলে মনে হয়। তবে, জলোচ্ছ্বাস নেই।”
সেন্ট মার্টিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন নূর মোহাম্মদ ও তার পরিবার। এই কেন্দ্রে প্রায় ৬০০ মত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
নূর মোহাম্মদ দুপুরে বলেন, “রাতে তো এখানেই থাকছি। সকাল থেকে খাবারের সমস্যা হচ্ছে। দুপুরে প্রচণ্ড বেগে বাতাস বইছে। আমরা ঘরের ভেতর আছি। বৃষ্টিও হচ্ছে।”
সবশেষ অবস্থা জানতে সেন্ট মার্টিন কোস্ট গার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট আব্দুল মালেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ঝড় এখন অনেক হচ্ছে, অনেক জোরে বাতাস বইছে। ঝড় পুরোদমে ক্রস করছে। পানি নেই। তবে বৃষ্টি হচ্ছে।"
সেন্ট মার্টিন ২০ শয্যার হাসপাতালের সেল্টার সেন্টারে এসে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক মানুষ। দুপুর দেড়টার দিকেও সেখানে মানুষকে আসতে দেখা গেছে। বৃষ্টি মাথায় করে তারা সেখানে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন, সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের সাহায্য করছিলেন।
আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজন বলছিলেন, তারা প্রচণ্ড বাতাস মোকাবেলা করে এসেছেন। বাতাসের বেগ এত বেশি যে, রাস্তায় হাঁটাই যাচ্ছিল না। কখনও কখনও তাদের বসতে হয়েছে।
আসার পথে বাড়ির কাঁচা দেয়াল ভেঙে রাস্তায় পড়তে দেখেছেন। কোথাও কোথাও ঘরের টিনের চালও উড়ে গেছে। এলাকাগুলো প্রায় জনশূন্য।
এদিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের হোয়াইকং ইউনিয়নে বাতাসের তোড়ে একটি অটোরিকশা উল্টে সড়কের পাশে পড়ে যায়।
এ সময় হারুন সিকদার নামে এক যাত্রী আহত হয়েছেন বলে সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা জানিয়েছেন।