“যেসব পেশাজীবীরা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের যেন কোনো অনৈতিক কাজে বাধ্য করা না হয়।”
Published : 03 May 2023, 08:09 PM
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সব মেয়র প্রার্থীকে এক মঞ্চে আনতে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক–সুজনের চেষ্টা সফল হলো না।
২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা পেয়ে বিজয়ী হলেও এবার মনোনয়ন না পাওয়া জাহাঙ্গীর আলম এবং তার মা জায়েদা খাতুন এতে যোগ দেননি। অংশ নেননি জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিনও।
বুধবার দুপুরে গাজীপুর প্রেস ক্লাবে ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রত্যাশা ও করণীয়’ বিষয়ে এই সংলাপে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান, ‘বিএনপি পরিবারের’ স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহানুর ইসলাম, আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আব্দুল্লাহ্ আল মামুন মণ্ডল, ইসলামী আন্দোলনের আতাউর রহমান, জাকের পার্টির প্রার্থী রাজু আহমেদ, গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশিদও অংশ নেন।
এতে পেশাজীবী ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও অংশ নেন।
সংলাপে উপস্থিত নাগরিকরা বলেন, গত ১০ বছরেও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে পারেনি।
যা বললেন প্রার্থীরা
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেন, তিনি জনগণকে সম্পৃক্ত করে সিটি করপোরেশনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে চান।
“একটি জনবল কাঠামো ছাড়া সিটি করপোরেশন চলছে। এটা কোনো অবস্থাতেই হতে পারে না। সার্ভিস রুল ছাড়া ১০ বছর ধরে সিটি করপোরেশন চলছে। আমি নির্বাচিত হতে পারলে প্রথমেই ৬ মাসের মধ্যে একটি অর্গানোগ্রাম এবং একটি সার্ভিস রুল তৈরি করা হবে।”
স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহানুর ইসলাম রনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের কিছু প্রত্যাশা রয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে কতটা অনিয়ম হয়েছে আপনারা জানেন। বেলা ১১টার পর থেকে আমাদের এজেন্ট পর্যন্ত উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব না।
“নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে যেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমি কথা দিচ্ছি সবার সহযোগিতায় নগরকে যেভাবে ঢেলে সাজাতে হয় সেভাবেই সাজাব।”
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আগে সুষ্ঠু নির্বাচন, পরে উন্নয়ন।”
গাজীপুরে এখানও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ হয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, “মন্ত্রী-এমপিরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। শুরু থেকে আমরা আলামত ভালো দেখছি না। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আমরা নির্বাচনে এসেছি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।”
সিটি করপোরেশন গঠনের পর থেকে সরকার ‘বৈষম্য’ করেছে বলেও অভিযোগ তার। বলেন, “এ সিটির প্রথম নির্বাচিত মেয়রকে (এম এ মান্নান) তার দায়িত্ব পালন করতে দেয়নি। তাকে নির্যাতন করে জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।
“দ্বিতীয় মেয়রকেও (জাহাঙ্গীর আলম) তার দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি। অতএব আমি মনে করি গাজীপুর একটি সুন্দর, সঠিক এবং পরিবেশবান্ধব সিটি হোক, এটা সরকার চায় না। কেন চায় না সেটা আমি জানি না।”
স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল বলেন, “শ্রমিক অধ্যুষিত এই এলাকা থেকে রাষ্ট্রের যে আয় হয়, তার একটা অংশ যেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়।
“প্রাইভেট হাসপাতালের বর্জ্য বিশেষভাবে অপসারণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, পানি দূষণ, নদী দূষণ মুক্ত করে এবং দূষণমুক্ত নগরী গড়ে তুলতে হলে এই নগরীকে আগে বুকে ধারণ এবং মনে লালন করতে হবে। সিটি করপোরেশনে একটি তথ্য সেন্টার থাকতে হবে যেন প্রতিদিন কী কাজ হচ্ছে সেটা মানুষ জানতে পারে এবং সেখানে থেকে গণমাধ্যমকর্মীরা তথ্য নিয়ে তা প্রকাশ করে নগরবাসীকে জানাতে পারবে।”
গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম বলেন, “আমি পাঁচ বছর আগেই প্রার্থিতা ঘোষণা করেছি। তারপর থেকে নগরের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭ হাজারের বেশি সমস্যা খুঁজে পেয়েছি।”
অন্যরা যা বললেন
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জিয়াউল কবির পোশাক শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাস্তবমুখী উদ্যোগ ও প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানান। তিনি বলেন, “শ্রমিকরাই এই সিটির বৃহৎ অংশ। তাদের দিকে নজর দিতে হবে।”
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের টঙ্গী শাখার সভাপতি আনোয়ারা বেগম নারী অধিকার নিশ্চিত করা এবং হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা দেখতে চাওয়ার কথা বলেন।
গাজীপুর বিএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান আকাশ বলেন, “যেসব পেশাজীবীরা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের যেন কোনো অনৈতিক কাজে বাধ্য করা না হয়। আইশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক অথবা কোনো অদৃশ্য চাপ যেন না থাকে।”
গাজীপুর বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সমিতির আব্দুস সালাম বলেন, “নগরীর হাসপাতালের বর্জ্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ফেলা হয়। বর্জ্য আমাদের গাজীপুরেই যেন অপসারণ করতে পারি, সে ব্যবস্থা করতে হবে।”
সুজনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “ভোট চুরি করে নির্বাচিত হওয়া যায়, তবে মানসিক তৃপ্তি আসে না। জনগণকে দেখলে মুখ লুকায় ওসব প্রার্থীরা।”
ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম হলে সেই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা ও প্রয়োজনে ফলাফল বাতিল করার পরামর্শও দেন তিনি।
সুজনের প্রধান সমন্বয়ক দীলিপ সরকার, গাজীপুর কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশিরও সংলাপে অংশ নেন।