বছরের তিন মাস শেষ হতে চললেও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী সরকারের বিনামূল্যের বই পায়নি।
ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে, পুরাতন বই সংগ্রহ করে, শিক্ষার্থীদের গ্রুপ করে দিয়ে কিংবা স্কুলের বোর্ডে লিখে দিয়ে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকরা।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সামসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জেলায় মোট চাহিদা ১১ লাখ বইয়ের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই দুই লাখ আশি হাজার।
সরবরাহকারী ঠিকাদারের ‘গাফিলতির’ কারণে সব বই এসে পৌঁছায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পাঠদান অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন জেলা ও অনান্য বিভাগ থেকে প্রায় অর্ধেক বই ইতোমধ্যে সমন্বয় করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক সহসাই এ সংকট সমাধান হবে বলে আশা করছি।”
তবে কত সংখ্যক বই এখনও আসেনি তার সঠিক পরিসংখ্যান জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
সরজমিনে বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নানা উদ্যোগ নিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে পাঠ অনুযায়ী বই তৈরি করে শিক্ষার্থীর মধ্যে বিতরণ করছেন। কেউ পুরাতন বই সংগ্রহ করে সমন্বয় করছেন। আবার কেউ পাঠ বোর্ডে লিখে দিচ্ছেন, আর শিক্ষার্থীরা খাতায় লিখে নিচ্ছে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার অল্প বই দিয়ে গ্রুপ করেও পড়ানো হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অয়ন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বই সংকট হলেও তারা বিকল্প ব্যবস্থায় পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। পাঠ অনুযায়ী অনলাইন থেকে নামিয়ে বই আকারে তৈরি করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করছেন।
শ্রীমঙ্গল মাহমুদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোমা রানী সরকার জানান, “প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে আমাদের বইয়ের সংকট। এ অবস্থায় আমরা প্রতিদিনের পাঠ ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে দেই; শিক্ষার্থীরা তা দেখে দেখে খাতায় লিখে নেয়। কোনো শিক্ষর্থী ভুল করলে আমরা খাতায় ঠিক করে দেই। শিক্ষার্থীরা বাসায় ওই খাতা দেখেই পড়ে।”
একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুজিবুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা মাত্র ১০ জোড়া বই পেয়েছেন। এগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। বিদ্যালয়ে গ্রুপ করে এক বই দিয়ে অনেকে পড়ে। তবে এরই মধ্যে পুরাতন বই সংগ্রহ করে ২য় শ্রেণির বাংলা বই এর ঘাটতি পূরণ করেছেন।
এদিকে অভিভাবকরা এ নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
শ্রীমঙ্গল চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, তিন মাস চলে গেছে। রমজানের পরেই পরীক্ষা হবে। বইয়ের জন্য তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও ৯ম শ্রেণি এবং মাদ্রাসার দাখিলের শিক্ষার্থীদের অনেকেই বই পায়নি।
মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মাধ্যমিক স্তরে বইয়ের মোট চাহিদা ২৬ লাখ ৭০ হাজার ১৩২টি; যার মধ্যে এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৮৯টি বই। অর্থাৎ প্রাপ্তির হার ৭২ দশমিক ২১ শতাংশ।
দাখিলে চাহিদা ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬০টি বই; যার মধ্যে পাওয়া গেছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭৯টি বই। সে হিসাবে প্রাপ্তির হার ৮৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
তিনি জানান, ঘাটতি পূরণে প্রতিদিনই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আশা রাখছেন কাছাকাছি সময়ে পেয়ে যাবেন।