উপাচার্য বলেন, “লেকের সামনে দর্শনার্থীদের ভিড় না করা, পাখির দিকে ঢিল না ছোঁড়া এসব নিয়ন্ত্রণে থাকলে পাখি থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।"
Published : 19 Jan 2024, 09:10 PM
পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে পাখি মেলা।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তননে বেলুন উড়িয়ে ২৩তম মেলার উদ্বোধন করেন উপাচার্য মো. নূরুল আলম।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে পাখি মেলা চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। মেলা ঘিরে পাখি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের পাখির ছবি আঁকা ও পাখি চেনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করা হয়।
মেলা উদ্বোধন শেষে উপাচার্য বলেন, “পাখি মেলার অর্থ এই নয় যে পাখি থাকতেই হবে। ছোট শিশুরা ছবি দেখে যেন বুঝতে পারে কোনটা কোন পাখি এবং তারা যেন সচেতন হতে পারে। এতে তারা আনন্দও পাবে। মূলত সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই মেলা।”
ক্যাম্পাসে পাখি কম আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অন্যতম কারণ আমরা সচেতন না। লেকের সামনে দর্শনার্থীদের ভিড় না করা, পাখির দিকে ঢিল না ছোঁড়া এসব নিয়ন্ত্রণে থাকলে পাখি থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
“আগে প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান হত। সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে সেসব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। আমরা শব্দদূষণ বন্ধ করতে পেরেছি। কিন্তু জনসমাগম আমরা কমাতে পারছি না বরং আরও বাড়ছে। পাখি কম আসার পেছনের কারণ দর্শনার্থী।”
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ ঘুরতে আসে। প্রত্যেকে গিয়ে লেকের পাড়ে ছবি তোলে আর পাখিদের উৎপাত করে। আমরা কোনোভাবেই এটা বন্ধ করতে পারছি না।
“প্রশাসনের সবার সঙ্গে কথা বলে ক্যাম্পাসের ভেতরের সব রিইউনিয়ন অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি। এরপরও এত পরিমাণ মানুষ হলে আর উৎপাত করলে অতিথি পাখি থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। মূলত পাখির সংখ্যা কমার প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি।”
যদিও কর্তৃপক্ষ থেকে ঢালাওভাবে দর্শনার্থীদের উপর দোষ চাপানোকে ঠিক মনে করছেন না অনেকে।
দর্শনার্থীদের উৎপাত একটি কারণ হতে পারে তবে সেটা প্রধান কিংবা অন্যতম বলে মনে করেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন।
এই পরিবেশবিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দর্শনার্থীদের অতিরিক্তি মাত্রায় আসা কিংবা লেকগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অনিয়ন্ত্রিত বিচরণ করা একমাত্র বা প্রধান কারণ হতে পারে না। এখানে অনেকগুলো কারণে পাখি নেই বলে আমাদের মনে হয়।
“তার মধ্যে লেকগুলো অতিথি পাখির উপযুক্ত করে তৈরি করতে না পারা, লেকের চারপাশে যে ভবন হচ্ছে সেখানে ক্রমাগত শব্দ দূষণ, একই সঙ্গে দশতলা ভবন করে পাখিদের ফ্লাইং জোন নষ্ট করে ফেলা অতিথি পাখি না থাকার অন্যতম কয়েকটি কারণ।”
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই যে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে সেগুলোর জন্য অতিথি পাখি নেই বলে মনে করেন তিনি।
ক্যাম্পাসের পরিবেশ অনুকূলে না থাকা অতিথি পাখির না আসার জন্য দায়ি বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, “আজ থেকে দুই তিন বছর আগেও জাহাঙ্গীরনগরের লেকগুলোতে শীতের অতিথি পাখি গমগম করতো। কিন্তু এখন আর সেটি দেখা যায় না। প্রশাসন যেমন ঢালাওভাবে এর দায় অতিরিক্ত লোক সমাগমকে দিচ্ছে, সেটি আসলে পুরোপুরি সত্য না।
“অতিরিক্ত লোক সমাগম একটি কারণ কিন্তু তারচেয়েও বড় কারণ হল অপরিকল্পিত উন্নয়ন। উন্নয়নের নামে যত্রতত্র গাছ কেটে প্রশাসন ইকোসিস্টেমকে ধ্বংস করে ফেলেছে। পাখি আসার যে পরিবেশ সেটি এখন আর এই ক্যাম্পাসে নেই।”
পাখি মেলার আয়োজন সম্পর্কে মেলার আহ্বায়ক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, “মানুষকে পাখি সম্পর্কে সচেতন এবং সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করার জন্যই এই মেলা। সচেতনতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে শিক্ষার্থীরা। তাই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়েই আমাদের এই আয়োজন।
“বরাবরের মতো এবারও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখি চেনা প্রতিযোগিতা, স্টল সাজানো প্রতিযোগিতাসহ বহুবিধ আয়োজন ছিল এবারের মেলায়।”
এদিকে ২৩তম পাখি মেলা দেখতে এসে দর্শনার্থীরা হতাশা প্রকাশ করেছে।
মিরপুর থেকে নিজের দুই মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন শফিউল আলম। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগেও পাখি মেলায় ঘুরতে আসতাম। গত বছর থেকে অতিথি পাখির দেখা একেবারেই মিলছে না। কৃত্রিম পাখি দেখে তো আর অতিথি পাখি দেখার অনুভুতি পাওয়া যায় না।
“এটা আমাদের জন্য হতাশাজনক। কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিলে হয়তো অতিথি পাখি নিয়মিত আসবে।”