গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে শরীরে দেওয়া হলো আগুন

জমি নিয়ে দেবরের সঙ্গে বিরোধ চলছিল গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওই নারীর।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2023, 11:11 AM
Updated : 10 Jan 2023, 11:11 AM

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গৃহবধূকে ঘর থেকে টেনে গাছের সঙ্গে বেঁধে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।  

মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের বাঘঝাপা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে কাশিয়ানী থানার ওসি ফিরোজ আলম জানান।

অগ্নিদগ্ধ সুফি বেগম গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য ইউসুফ আলী মোল্লার স্ত্রী। তাকে প্রথমে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে।

কাশিয়ানী ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আমিনুল ইসলাম বলেন, “রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার পুরো শরীরই পুড়ে গেছে। তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।”

অগ্নিদগ্ধ সুফি বেগম হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, স্বামীর পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দেবর লিয়াকত মোল্লার সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল। লিয়াকতও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য। তিনি তার সম্পত্তির অংশ বিক্রি করে গ্রাম থেকে চলে গেছেন। কিন্তু এখনও সম্পত্তি দাবি করছেন। মূলত সম্পত্তি নিয়ে দুই ভাইয়ের বিরোধ।

এই বিরোধের জেরে এই আগেও লিয়াকত মোল্লা একদিন সুফি বেগমের মাথার চুল কেটে দেন। পরে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সেটি মীমাংসা করেন।

সুফি বেগম আরও বলেন, “সকালে লিয়াকত মোল্লা ও আমার আরেক দেবর আব্দুর রহমানের ছেলে সোহেল বাড়িতে আসে। এ সময় আমি বাড়িতে একা ছিলাম। তারা আমাকে বসতঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে বের করে এবং উঠানের পেয়ারা গাছের সঙ্গে আমার হাত-পা বেঁধে ফেলে।”

“পরে আমার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। আমি চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে। তারা আমাকে কাশিয়ানী হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমার সারা শরীর পুড়ে গেছে।”

সুফি বেগমের স্বামী ইউসুফ আলী মোল্লা বলেন, “ঘটনার সময় আমি বাড়ি ছিলাম না। এর আগেও লিয়াকত মোল্লা আমার স্ত্রীর চুল কেটে দিয়েছিল। এটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়। এখন সে নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি এ ব্যাপারে মামলা করব।”

“তার পৈত্রিক জমি সে বিক্রি করে ফেলেছে। তারপরও সে আমার অংশের জমির ভাগ চায়। এ নিয়েই সে বিরোধ করে আসছিল।”

কাশিয়ানী থানার ওসি ফিরোজ আলম বলেন, “ঘটনার পর পরই লিয়াকত মোল্লা পালিয়ে গেছেন। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে।”

ইউসুফ আলী মোল্লাদের প্রতিবেশী বাঘঝাপা গ্রামের প্রিন্স মোল্লা বলেন, “ইউসুফ মোল্লার বাড়িটি অনেকটা ঝোপ- জঙ্গলে ঘেরা। বাড়িতে মানুষ ঢুকলে টের পাওয়া যায় না। আগুনের শিখা দেখে আমরা ওই নারীকে উদ্ধার করি।”

“জমিজমা নিয়ে তাদের দুই ভাইয়ের বিরোধ আছে বলে আমরা জানি। এক বছর আগে লিয়াকত তার ভাবীর চুল কেটে দেয়। তখন আমরা সেটি বিশ্বাস করিনি। পরে সেটি গ্রাম্য সালিসে মীমাংসা হয়। এখন যে ঘটনা ঘটেছে তা জঘন্য। এ ঘটনার ন্যয়বিচার হওয়া উচিত।”