মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম অংশে এমন চার শতাধিক মরা গাছ রয়েছে বলে ধারণা করেন ফালগুনকরা এলাকার বাসিন্দা জাহিদ হোসেন।
Published : 13 Nov 2023, 07:56 AM
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা অংশে উভয় পাশে রয়েছে বিশাল বিশাল মরা গাছের সারি। হঠাৎ গাছ উপড়ে, ডাল ভেঙে পড়ে অনেকে আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা বার বার তাগাদা দিলেও এসব গাছ অপসারণ করা হয়নি।
যে কারণে ব্যস্ততম এই মহাসড়ক ধরে চলাচলের সময় পরিবহন চালকদের পাশাপাশি যাত্রীরাও থাকেন আতঙ্কে। অনেক সময় যান চলাচল ব্যাহত হয়।
স্থানীয়রা জানান, মহাসড়কের ৪৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অংশ। সবশেষ অক্টোবরের শুরুতে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা পূর্বধনমুড়ি এলাকায় বিদ্যুতের তারের ওপর মরা গাছ ভেঙে পড়ে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পরে সেটি অপসারণ করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত মরা গাছ অপসারণ করে সেখানে বেশি করে নতুন গাছ রোপণ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার মিরশ্বান্নী, দত্তসার, জগন্নাথদিঘি, ফালগুনকরা, নবগ্রাম, আমানগণ্ডা, হাড়িসর্দার, নোয়াবাজার, ছুপুয়াসহ বেশ কিছু এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির শত শত মরা গাছের সারি রয়েছে।
শুধু মিরশ্বান্নী আর ছুপুয়া এলাকাতেই রয়েছে দুই শতাধিক মরা গাছ। এসব মরা গাছ তুলে সেখানে নতুন করে বৃক্ষরোপণ করা হলে মহাসড়কের সৌন্দয্য আরও বাড়বে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
তারা জানান, বিশাল আকৃতির গাছগুলো কয়েক বছর আগেই মরে গেছে। বর্তমানে এসব মরা গাছ একেবারে নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। সামান্য বাতাসেও গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ে। বড় ধরনের ঝড়বৃষ্টি হলে মরা গাছগুলো যেকোনো সময় মহাসড়কের মধ্যে উপড়েও পড়তে পারে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদরের বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, গত বছর ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে উপজেলার ফালগুনকরা, নবগ্রাম, চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের পাশে ও ছুপুয়া এলাকায় মরা গাছের ডাল-পালা হঠাৎ ভেঙে পড়ে মহাসড়কের ওপর। এসব ঘটনায় কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক ও পথচারীরা আহত হয়েছেন।
“তবে এখনও কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তাই দ্রুতই মরা গাছগুলো তুলে নতুন করে গাছ রোপণ করতে হবে।”
কুমিল্লা-ফেনী পথে চলাচলকারী যমুনা পরিবহনের বাস চালক কাশেম মিয়া বলেন, “মহাসড়কে রাতের বেলায় প্রায় সময় মরা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। এতে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। আমরা রাতে গাড়ি চালানোর সময় আতঙ্কে থাকি। কখন যে এই মরা গাছ ভেঙে গাড়ির ওপর পড়ে- এই ভয়ে থাকি।”
মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম অংশে এমন চার শতাধিক মরা গাছ রয়েছে বলে ধারণা করেন ফালগুনকরা এলাকার বাসিন্দা জাহিদ হোসেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় কিছু মরা গাছ ও ডালপালা কেটে নিয়ে গেছে মানুষ।
তিনি আরও বলেন, “চলাচলে সমস্যা হলেও সরকারি সম্পদ হওয়ায় আবার অনেকে এগুলোতে হাত দিতেও ভয় পান। কর্তৃপক্ষ নিজেরা অপসারণ করতে না পারলে এলাকার মানুষকে বললেও- তারা মরা গাছগুলো কেটে নিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। এতে মহাসড়ক নিরাপদ হবে।”
মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী জোনায়েদ হোসেন সোহাগ নামের এক প্রাইভেট কার চালক বলেন, “মহাসড়ক লাঘোয়া মরা গাছগুলো সরিয়ে নিতে সড়ক বিভাগের দ্রুত উদ্যোগ দেখতে চায় চালকরা। আমরা দিবারাত্রি এই সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় আতঙ্কে থাকি। মহাসড়কটি দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় কয়েকশ যানবাহন চলাচল করে। ঝড়ো বাতাস এলে গাছের মূলসহ উপড়ে পড়ে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।”
প্রায় চার বছর ধরে গাছগুলো মরে দাঁড়িয়ে আছে বলে জানান মহাসড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী হাড়িসদ্দার বাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিনু।
তিনি বলেন, “চলাচলের সময় দেখি প্রায়ই ডাল-পালা ভেঙে পড়ে। রাতে মহাসড়ক দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আতঙ্কে বারবারই মনে হয়- এই বুঝি মরা গাছ মাথার ওপর পড়ল!”
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মহাসড়ক ধরে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন জগন্নাথদিঘি এলাকার বাসিন্দা সামছুল আলম। সেসময় তার গায়ে হঠাৎ মরা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। এতে তিনি আহত হন। পরে তাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, মহাসড়কের পাশে সওজ, বনবিভাগসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বৃক্ষ রোপণ করে থাকে। চৌদ্দগ্রাম অংশে ওই গাছগুলো কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রোপণ করা হয়েছিলো- সেটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। আর মরা গাছের বিষয়টি আমার জানা ছিল না।
তিনি আরও বলেন, “যে প্রতিষ্ঠানই গাছ লাগিয়েছে, তাদের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মরা গাছগুলো অপসারণ করা হবে। একই সঙ্গে সেখানে ব্যাপকভাবে নতুন করে গাছ লাগানো হবে।”